১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৪:২০:২৫ পূর্বাহ্ন


দেশকে আজমেরী হক বাঁধন
এমন কাউকে আমি চাই, যিনি সত্যিই জীবনসঙ্গী হতে পারেন
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
এমন কাউকে আমি চাই, যিনি সত্যিই জীবনসঙ্গী হতে পারেন আজমেরী হক বাঁধন


জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। যিনি রেহানা থেকে খুফিয়া পর্যন্ত নানা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন। বরাবরই নিজেকে নতুন রূপে উপস্থাপন করেছেন। বয়সের হিসেবে একচল্লিশে পা রাখা এই অভিনেত্রী শুধু তার অভিনয় দিয়ে নয়, জীবনের সংগ্রাম ও হতাশার গল্পের মধ্য দিয়েও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন। বাঁধনের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন নতুন এক চ্যালেঞ্জ, যেখানে সাফল্য ও আত্মবিশ্বাসের সংগ্রাম একে অপরকে পরিপূরক। এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: বর্তমান সময়ের সফর একজন অভিনেত্রী আপনি। এই পর্যায়ে এসে জীবন সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি কি?

আজমেরী হক বাঁধন: আশা, আনন্দ এবং শান্তি নিয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর চার দশক পার করতে পেরেছি, তাতে অনেক খুশি। তবে গত দশকগুলো এত বিভ্রান্তিকর ছিল এবং অন্যদের খুশি করার চেষ্টা করেই বেশির ভাগ সময় নষ্ট করেছি। অতীত জীবনের পরতে পরতে আসা আঘাত, অন্যায় ও যন্ত্রণা আমাকে আজকের বাঁধন করেছে। সেই সঙ্গে করেছে সাহসী, দিয়েছে চলার অফুরন্ত প্রাণশক্তি। তাই জীবনের এ পর্যায়ে এসে কোনো আফসোস নেই আমার, আর রাখতে চাই না।

প্রশ্ন: সম্প্রতি আপনি বলেছেন, আপনার মেয়ে মনে করে, মায়ের একজন সঙ্গী দরকার। এটা কি আপনার কাছে নতুন কোনো উপলব্ধি?

আজমেরী হক বাঁধন: আসলে, মেয়ে তো এখন একটু বড় হয়ে গেছে। এখন সে আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে, মা একা একা সবকিছু সামলাচ্ছে, একা একা কষ্ট করছে, যুদ্ধ করছে। তাকে দেখে মেয়ের মনে হয়েছে, মায়ের একজন সঙ্গী দরকার। এই অনুভূতি তার গত এক-দেড় বছরে হয়েছে, যখন সে একটু বড় হয়েছে এবং নিজে আরো বেশি কিছু বুঝতে শিখেছে।

প্রশ্ন: এর আগে আপনি কি কখনো এই বিষয়ে ভেবেছেন?

আজমেরী হক বাঁধন: না, এত বছর আমি আসলে ভাবিনি। তবে এখন, আমি মনে করছি যে, একজন জীবনসঙ্গী থাকলে হয়তো ভালো হতো। সেটা শুধু আমার জন্য নয়, মেয়ে এবং আমাদের পরিবারে আরও সাপোর্ট হতে পারে। আসলে, একজন জীবনসঙ্গী যদি থাকে, তা হলে কোনো সমস্যা তো নেই।

প্রশ্ন: আপনার কেমন জীবনসঙ্গী প্রয়োজন?

আজমেরী হক বাঁধন: এমন একজন সঙ্গী চাই, যিনি আমাকে যেমন আছি, ঠিক তেমনভাবেই গ্রহণ করবেন। আমাদের সমাজে এমন মানুষ খুবই দুর্লভ। কিন্তু, এমন কাউকে যদি পাই, যিনি এই বিষয়টা বুঝবেন, তো সেই মানুষটির সঙ্গে পথচলা হবে।

প্রশ্ন: তাহলে, আপনি কি বলতে চাইছেন যে, আপনি এমন কাউকে খুঁজে পেয়েছেন?

আজমেরী হক বাঁধন: না, না, বিষয়টা এমন নয়। আমি এখনও কাউকে খুঁজে পাইনি। তবে, জীবনে একজন সঙ্গী দরকার, এটা এখন বেশ স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমন কাউকে আমি চাই, যিনি সত্যিই জীবনসঙ্গী হতে পারেন। এখনও খুঁজে পাইনি, কিন্তু ভবিষ্যতে যদি কেউ আসে, যিনি আমার সঙ্গে এই পথে চলতে পারবেন, তাহলে তা অবশ্যই স্বাগতম।

প্রশ্ন: আপনি তো একসময় বিয়ে এবং জীবনসঙ্গী নিয়ে খুব একটা কথা বলতেন না। এই পরিবর্তন কেন?

আজমেরী হক বাঁধন: সত্যি বলতে, কোনো বিশেষ কারণ নেই। কিন্তু এখন ৪০ পেরিয়ে গিয়েছি। ৪০ বছর বয়সে এসে জীবনটা একটু নতুনভাবে দেখছি। আগে হয়তো একা চলতে অভ্যস্ত ছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, একজন সঙ্গী থাকলে জীবনটা আরও সুন্দর হতে পারে। আগে কখনো এমন অনুভূতি হয়নি, কারণ আমি একা চলতে পারতাম, তবে এখন মনে হচ্ছে, একসঙ্গে চলার মতো একজন সঙ্গী থাকা ভালো।

প্রশ্ন: জীবনে সঙ্গী না পাওয়ার জন্য কোনো অভিজ্ঞতা আছে যা আপনাকে এভাবে ভাবতে শিখিয়েছে?

আজমেরী হক বাঁধন: হ্যাঁ, আসলে আমার জীবনে বেশ কয়েকজন এসেছে, কিন্তু কখনো সঙ্গী হয়ে ওঠেনি। বরং তারা আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো এমন কাউকে পাইনি, যিনি আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করেছেন বা আমার পথটা সহজ করেছেন। সব সময়ই কষ্ট আর সংগ্রাম ছিল। জীবনটা কেটেছে সঙ্গী ছাড়া, আর এখন বুঝতে পারছি, একজন সঙ্গী থাকলে সেটা কতটা জরুরি।

প্রশ্ন: তাহলে, যারা আপনার জীবনে এসেছে, আপনি কি মনে করেছিলেন তাদের নিয়ে?

আজমেরী হক বাঁধন: (হাসি) অবশ্যই, প্রথমে তো মানুষ কাউকে দূর থেকে দেখে কিছু ধারণা করতে পারে না। কিন্তু সময় গেলে সবাই নিজের আসল রূপটা দেখিয়ে দেয়। আমি কখনোই ভাবিনি যে, কেউ আমার জীবনে আসবে এবং আমাকে কষ্ট দেবে। তবে বাস্তবে, যাদের পেয়েছি তারা আমার জন্য কোনো ভালো কিছু নিয়ে আসেনি। বরং, তারা আমার পথচলা কঠিন করেছে।

প্রশ্ন: তাহলে, আপনি কি এখন আশাবাদী, যে ভবিষ্যতে হয়তো সঠিক সঙ্গী পাবেন?

আজমেরী হক বাঁধন: হ্যাঁ, আশা তো থাকেই। জীবনটা অনেক কিছু শিখিয়েছে, এবং এখন আমি জানি যে, যদি সত্যিকারের একজন সঙ্গী আসে, তবে তাকে গ্রহণ করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু এমন কেউ যদি আসেন, যিনি আমার পথচলা বুঝতে পারেন, আমার মতো থাকার জায়গা তৈরি করেন, তাহলে নিশ্চয়ই একসঙ্গে চলা যাবে।

শেয়ার করুন