১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন


খাই খাই স্বভাব বিপর্যয়ে ঠেলে দিচ্ছে বিএনপি’কে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৫
খাই খাই স্বভাব বিপর্যয়ে ঠেলে দিচ্ছে বিএনপি’কে


নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের সাগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ি। আর এই ফাঁড়িও ভেতরেই ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কৃষককে পিটিয়েছেন স্থানীয় ২ যুবদল নেতা। হামলার শিকাররা হলেন কৃষক জসীম উদ্দিন ও তার ছেলে রোকাম হোসেন। আর এমন কর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বুড়ির ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি রুবেল উদ্দিন রনি ও একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ কামারের বিরুদ্ধে।

ঘটনা দুই

‘চাঁদা না পেয়ে সাবেক বিএনপি নেতার মামলার ফাঁদ’ শীর্ষক একটি রির্পোট গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিস্তারিত পাঠ করে করে জানা গেলো, এমন কাজেও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি হলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক। কিন্তু খবরটি পড়ে জানা গেলো বর্তমানে তাঁর দলীয় পদ নেই। কিন্ত তাতে কি বিএনপি’তো অল্প কয়েকদিন পরেই ক্ষমতায় এসে যাচ্ছে । আর এমন আশায় তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মেতে উঠেছেন। পরিচয় দিচ্ছে বিএনপির নেতা হিসাবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় যে, টঙ্গীর দত্তপাড়া হাসান লেনের বাসিন্দা কবির হোসেন পেশায় ঠিকাদার। তিনি অভিযোগ করেন, ৫ জুলাই স্থানীয় একটি মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কৌশলে তাঁর আইফোন ও নগদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন সে-ই জিয়াউল হক। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ করেন কবির। থানা অবশ্য ভালো ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য ভাগ্যক্রমে পরে বাধ্য হয়ে কবিরকে শুধু মুঠোফোন ফেরত দেন জিয়াউল। ঘটনা এখানেই শেষ না। ‘চাঁদা না দেওয়ায়’ আসামি করা হয়েছে ৮ স্কুলশিক্ষককে। মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাশেম, ক্রীড়াশিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল, গাছা বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনির হোসেন, টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. হানিফ উদ্দিন, প্রদর্শক মো. আবু জাফর আহমেদ এবং সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান। এসব শিক্ষকের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর তাঁদের ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করেন জিয়াউল। না দেওয়ায় তাঁদের আসামি করা হয়।

ঘটনা তিন

‘বিএনপি পরিচয়ে ডিশ ব্যবসা দখলের চেষ্টা’ শিরোনামে আরেকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। খবরে দেখা যায় গাজীপুরের পূবাইলে ২২ বছরের ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা বিএনপি নেতা পরিচয়ে দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গত বলা হয় যে, গত শনিবার গাজীপুর মহানগরের পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার ৪১নং ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নাসির, আমজাদ ও তমিজউদদীন, জাহাঙ্গীর, শুক্কুর গংরা জড়িত। অথচ তারা ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে পুরাতন ডিশ ব্যবসায়ীদের পক্ষে সোহেল মোল্লা বাদী হয়ে পূবাইল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, শনিবার সকাল থেকে সংযুক্ত ডিশ ও ইন্টারনেট লাইনের পাশাপাশি জোরপূর্বক নতুন করে তার সংযোগের কাজ চলমান রেখেছেন দখলবাজরা। 

এভাবেই এধরনের বহু অভিযোগ গণমাধ্যমে দিনের পর পর দিন আসছে। আর এধরণের খাই খাই ভাব ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বিএনপি’কে। খোজ নিয়ে দেখা গেছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপির একশ্রেণীর সাদা মাটা কর্মী বিভিন্ন এলাকায় শীর্ষ নেতা বনে গেছেন। আর এরা এমন বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে যে কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। অভিযোগ উঠেছে সাংগঠনিক কাজ বাদ দিয়ে অনেক নেতাকর্মী বলা যায় দখল, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে, যেনো বিএনপি এখনই ক্ষমতায় বসে গেছে। 

আয়ের নতুন পথ মামলা বাণিজ্য

এদিকে বিএনপি’র এক শ্রেণীর নেতাকর্মীরা মামলার ভয় দেখিয়ে আয়ের নতুন পথ তৈরি করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর কিংবা জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের পক্ষে ছিল না এমন অভিযোগ দাঁড় করিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, এমন কি শুধুমাত্র সাধারণ সমর্থকদেরও মামলায় ফাসানো হচ্ছে বলে হাজার হাজার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে দিশেহারা হয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগের একেবারে সাধারণ নেতাকর্মীরা। এদিকে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, উচ্চ আদালতে মামলা বেড়েছে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের চেম্বারে। 

খবরে বলা হয় যে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর আদালতে বিচারাধীন থাকা অনেক মামলা আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী অনেকের কমেছে মামলা পরিচালনা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হওয়ায় এখন অনেকেই পলাতক। মক্কেলদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং ভুল বুঝিয়ে আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের মামলা হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে বিএনপিপন্থিদের চেম্বারে। 

ফলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ব্যবসা এখন রমরমা। উচ্চ আদালতে তারা জামিন, খালাস ও মামলা প্রত্যাহারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আরো বলা হচ্ছে যে, শুধু রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মামলা বাড়ছে। বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে-সে সম্ভাবনায় মক্কেলরা ছুটছেন তাদের কাছে।

কঠোরে লাভ হচ্ছে না..কারণ দলাদলি

তবে বিএনপি’র হাই কমান্ড একেবারের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্ব-উদ্যোগেই একাধিকবার হুঁশিয়ারিও দেয়ার পর কাজ হচ্ছে না। শোনা গেছে অনেক অভিযোগ তিনি ব্যক্তিগতভাবেও হস্তক্ষেপ করেও সুরাহা করতে পারছেন না। এর কারণ অনেকে মনে করেন দলের ভেতরে গোপন দলাদলি দিনের পর দিন প্রকাশ্যে চলে আসছে। বলা হচ্ছে, উপরের লেবেলে কেউ কেউ রং চটিয়ে অভিযোগ করে থাকে। বাস্তবে নেই। এমন বহু অভিযোগে হাইকমান্ডকে বারবার বিব্রত করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এতে একশ্রেণীর নেতাকর্মী আরো বেপারোয়া হয়ে উঠেছে। একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে তারা বিএনপির দপ্তর সূত্রে জেনেছে ৫ আগস্টের পর শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে ১ হাজার ৩১ নেতাকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ২০৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়েও অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনও শত শত নেতাকর্মীকে শাস্তি দিয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। 

বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বিএনপি’কে

এদিকে একটি সূত্র জানায় এভাবে দলের নেতাকর্মী মধ্যে খাই খাই ভাব আর পাল্লা দিয়ে দখলে খেলা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বিএনপি’কে। দলটির ব্যাপারে দেশে-বিদেশে মারাত্বক অভিযোগে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে ভাবর্মূতি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে মাঠে একমাত্র বড়ো সক্রিয় দল বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী জামায়াতে ইসলামী ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতারা কারো নাম না ধরে বললেও ইঙ্গিত করে যাচ্ছে যে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের চাদাবাজি, দখল আর হানাহানিতে ছাত্র-জনতার রক্তে পাওয়া বিজয় ধবংস হয়ে যাচ্ছে। এমন প্রচারনা চালানো হচ্ছে ওই দলটির মাঝে এই বলে যে, বিএনপি ক্ষমতা এলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না। 

আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও মেসেজ দেয়া হচ্ছে বিএনপি সুশাসন চায় না, লুটতরাজ টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতা চায়। এলাকায় এলাকায় বলা হচ্ছে সারা দেশে প্রচারণা তুঙ্গে উঠানো হয়েয়ে যে, বিএনপি’ই ক্ষমতায় আসছে। আর একারণে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন এসবের পেছনে কে আছে না তার বাছ বিচারের আগে নিজ দলকে যদি আরো শক্ত হাতে চাদাবাজ, দখলদারকে মোকাবেলা না করতে পারে, তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হবে বিএনপি’কে। যা-র থেকে উদ্ধার পাওয়া দলটির পক্ষে একেবারেই অসম্ভব হয়ে উঠবে। সুযোগটি লুবে নিভে মনেরই অজান্তে তৃতীয় কোনো পক্ষ।

শেয়ার করুন