৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৮:১৯:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


গ্রীষ্মের গ্যাস-বিদ্যুৎ চাহিদা কীভাবে মিটবে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৪
গ্রীষ্মের গ্যাস-বিদ্যুৎ চাহিদা কীভাবে মিটবে


সার, সিএনজি, শিল্পে গ্যাস রেশনিং করে কোনোভাবে রমজান মাস এবং সেচ চাহিদা মিটিয়েছে বিদ্যুৎ সেক্টর। ঢাকাকে আলোকোজ্জ্বল রাখতে ঢাকার বাইরের শহর এবং গ্রামাঞ্চলকে অনেকটাই আঁধারে রাখা হয়েছে। বিশেষত রমজানের শেষদিকে যখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলো, তখন কোথাও কোথাও ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। এখন ঈদের ছুটিতে চাহিদা অনেক কম থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু ১৫ এপ্রিলের পর থেকে ধীরে ধীরে সবকিছু চালু হলে একসময় দেশব্যাপী বিদ্যুৎ চাহিদা দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। তখন দুটি এফেসারু একসঙ্গে চালু রেখেও পেট্রোবাংলা বিদ্যুৎ, সার, শিল্পকারখানাগুলোকে চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে না। ডলার টাকার সংকটে কয়লা, এলএনজি, তরল জ্বালানি কিনতে পারবে না সংস্থাগুলো। তীব্র গরমের সময় ১৫০০-২০০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং অনিবার্য হয়ে পড়বে। সরকারের বহুমাত্রিক উন্নয়ন প্রশ্নের মুখে পড়বে। 

কী কারণে, কেন, কাদের ব্যর্থতায় বর্তমান সংকট নতুন করে বলার নেই। ভুল পরিকল্পনা, ভ্রান্ত জ্বালানি ব্যবস্থাপনা কৌশলের কারণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও আমলারা কারো কাছে কৈফিয়ত দেবে না দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ অ্যাক্ট নামের কালাকানুনের কল্যাণে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি এখন গ্রিড, নন-গ্রিড মাইল বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু জ্বালানি সংকট এবং সঞ্চালন সীমাবদ্ধতার জন্য ১২০০০-১৩০০০ মেগাওয়াট চাহিদা পেরিয়ে গেলেই সংকটে পড়ছে বিদ্যুৎ খাত। সব সার কারখানা বন্ধ রেখে, সিএনজি, শিল্পকারখানায় গ্যাস রেশনিং করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ এবং সার কারখানাগুলোর কাছে বিপুল বকেয়া আছে পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিগুলো দেউলিয়া হওয়ার মুখে। নিজেদের কয়লা, নিজেদের গ্যাসসম্পদ মাটির নিচে রেখে সরকার কিছু সুযোগসন্ধানী উপদেষ্টার পরামর্শে আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর হওয়ার কারণে বর্তমান সংকট। অথচ সঠিক সময়ে খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কয়লা এবং গ্যাস উত্তোলন করে কাজে লাগালে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। 

এখন বৈষয়িক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশকে অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের জ্বালানিসম্পদ উত্তোলন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বাড়াতে হবে। বর্তমান আমলানির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থাপনার পক্ষে জ্বালানি খাত উন্নয়ন কতটা সম্ভব সন্দেহ আছে। কারিগরিঘন জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে প্রয়োজন দক্ষ আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন কারিগরি জনবল, প্রয়োজন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন। 

সবচেয়ে বড় সংকট গ্যাস খাত নিয়ে। ২০০০-২০২৪ প্রকৃত পক্ষে ভুল কৌশলের কারণে জলে-স্থলে গ্যাস অনুসন্ধান হয়নি বললে চলে। চাহিদার দিকে দৃষ্টি রেখে উৎপাদন না বাড়ানোর ফলে প্রমাণিত গ্যাসসম্পদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসছে। মুখে অনেক কিছু বলা হলেও বাপেক্সকে সত্যিকারার্থে কারিগরি এবং আর্থিকভাবে সক্ষম করা হয়নি। দেশের প্রয়োজনে স্থলভাগ এবং সাগরে অনুসন্ধান হয়নি। অনেকের দাবি কিছু ব্যবসায়ী মহলকে অযাচিত সুবিধা দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে এলএনজি, কয়লা আমদানির ঝুঁকি নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজার থেকে উচ্চমূল্যে জ্বালানি ক্রয় বাংলাদেশের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকারের উপদেষ্টা মন্ত্রীদের কার্যক্রমে মনে হয় সরকার সংকট বজায় রেখে কিছু মহলকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ করে দিয়েছে। 

জ্বালানি আমদানির অবকাঠামো পর্যাপ্ত পরিমাণে গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে দুটি ভাসমান টার্মিনাল দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০০-১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির সুযোগ আছে। দুটি টার্মিনাল একসঙ্গে চালু থাকলে এবং এর সঙ্গে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সর্বোচ্চ ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট যোগ করে সর্বোচ্চ ৩০০০-৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। কিন্তু এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ চাহিদা ৪২০০-৪৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তাই অন্তত ২০২৬ পর্যন্ত দৈনিক ১২০০-১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি থাকবে। ফলশ্রুতিতে ঘন গ্রীষ্মে ২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাস-সংকট থাকবে। মে মাস থেকে সেচ চাহিদা থাকবে না। সরকারকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা অবলম্বন করতে হবে। চুরি, অপব্যবহার রোধ করতে হবে, লাইটিং, কুলিং লোড সীমিত করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটকে জাতীয় সংকট বিবেচনা করে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। 

শোনা যাচ্ছে, শিগ্গিরই সামিটের ভাসমান টার্মিনাল পুনরায় চালু হবে। সেক্ষেত্রে গ্যাস গ্রিডের চাহিদা সমন্বয় করে ১৫ এপ্রিল পরবর্তী গ্যাস চাহিদা সমন্বয় করার পরামর্শ দিচ্ছি। প্রয়োজনে দোকান মালিকদের সঙ্গে পরামর্শ কওে বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা শপিং ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। তাহলে দিনের পিক চাহিদার সময় বড় বিদ্যুৎ কারখানাগুলোর ক্ষমতা সংরক্ষিত রেখে সান্ধ্য পিক সামাল দেওয়া সহজ হবে। 

দেশবাসীকে বিদ্যুৎ গ্যাসের সঠিক ব্যবহার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে যথাযথ প্রণোদনা দিয়ে রুফ টপ সোলার অবদান দ্রুত বাড়ানোর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন