চট্টগ্রামে আগুন
আইসিটির (আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল) প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সম্প্রতি ঘোষণা দিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। এর পরপর আইসিটি থেকে গুম-খুনের অভিযোগে চাকরিরত এবং অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেনানিবাস উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। পরপর মিরপুর শিয়ালবাড়ী, চট্টগ্রাম ইপিজেড। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো সুরক্ষিত এলাকায় ধ্বংসাত্মক অগ্নিকাণ্ডে বিলিয়ন ডলার মূল্যের অপূরণীয় ক্ষয় ক্ষতি হলো। দেশ যখন নির্বাচন নিয়ে নানা টানাপড়েনে, তখন এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা কি না সন্দেহের যৌক্তিক কারণ আছে। প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কথার সঙ্গে এসব কোনো মিল না কাকতালীয় এটা অনেকেই বলাবলি করছেন।
ইতিমধ্যে অনেক নাটকীয়তার পর কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার প্রণীত বিতর্কিত জুলাই সনদ কারো করো মতে আইনগত ভিত্তি ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয়েছে। সম্মত এবং অসম্মত বিষয়গুলো নির্বাচিত সরকার কীভাবে কখন বাস্তবায়ন করবে অথবা আদৌ করবে কি না, সে বিষয়গুলো নিষ্পন্ন হয়নি। জুলাই-আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের অন্যতম ফসল এনসিপি জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেনি। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার একটি গোষ্ঠী সনদ স্বাক্ষরের দিন অকুস্থলে আন্দোলন করেছে।
সনদে ১৯৭২-এর সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ বিধায় সিপিবি এবং বাম দলগুলো জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেনি। জামাত এবং সমমনা দলগুলো সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি, জাতীয় নির্বাচনের আগে সনদ বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠানের দাবিতে সড়কে আন্দোলন করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ন্যায্য বেতন ভাতার যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছে প্রাথমিক শিক্ষকরা। এমনি উত্তপ্ত অবস্থায় জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টলেশনসমূহে অগ্নিকান্ড যৌক্তিক সন্দেহের উদ্রেক করছে। দেশ পরিচালনায় বর্তমান সরকারের অনভিজ্ঞতা এবং ব্যর্থতা, দেশবিরোধী কিছু মহলের অপতৎপরতা নাজুক অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু মহল স্বচ্ছ অথবা অস্বচ্ছভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অপতৎপরতায় লিপ্ত। নাজুক অর্থনীতির কারণে দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সময়ে পুলিশ বাহিনী বিপর্যস্ত হয়েছে, এখনো সুসংগঠিত হয়নি, বর্তমানে সেনাবাহিনী নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যে মহান লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা রাজপথে জীবন বিসর্জন দিয়েছে তার কিছুই অর্জিত হয়নি।
একটি বিশেষ গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে আখের গুছিয়েছে। সীমান্ত অরক্ষিত, সমুদ্রবন্দরগুলোর পরিচালনা বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে, মায়ানমারে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর সহায়তার জন্য তথাকথিত বিতর্কিত করিডোর সৃষ্টির কথাও শুনা যাচ্ছে। অথচ এগুলো কোনোকিছু করার অধিকার নেই অনির্বাচিত সরকারের।
জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে ফিরে আসছে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট। একটির পর একটি দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান কঠিন হয়ে উঠছে। রফতানি সংকুচিত হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে দুর্ভিক্ষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
বলছি অগ্নিকাণ্ড নিয়ে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একটি শীর্ষ কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই)। সেখানে অগ্নিনিরাপত্তাসহ সকল ধরনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকার কথা। সেখানে অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা সন্দেহ নেই। মিডিয়ায় চোখ রেখে দেখা গেছে ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্পদের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত কিছু স্পর্শকাতর উপকরণ ছিল। পুড়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার রফতানি পণ্য। জাতির ক্রান্তিলগ্নে এ ঘটনাগুলো দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এবং দেশি-বিদেশি মাফিয়া গোষ্ঠীর কাজ সন্দেহ নেই। জানি না, কীভাবে এগুলো সামাল দেবে দুর্বল সরকার, পরিস্থিতি ভয়াবহ।
বাংলাদেশকে যারা ভালোবাসে তাদের সচেতন হয়ে দেশের স্বার্থে সরকারকে সহায়তা করে নির্বাচন নিশ্চিত করা উচিত। নগরে আগুন লাগলে দেবালয় রক্ষা পাবে না।