২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১০:৪০:১২ পূর্বাহ্ন


জাকারিয়া মহিউদ্দিনের অকাল প্রয়াণ
আকবর হায়দার কিরন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
জাকারিয়া মহিউদ্দিনের অকাল প্রয়াণ জাকারিয়া মহিউদ্দিন


তিনযুগের প্রবাস জীবনের খুব কাছের, চেনা এক অন্য রকম মানুষ-জাকারিয়া মহিউদ্দিন আজ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন পরলোকে। তাকে নিয়ে আমার স্মৃতির পাতায় পাতায় কত গল্প, কত গান, কত হাসি-মেশানো দিন জমে আছে।

আমার মোহন দাদা (বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হায়দার মোহন) যখন নিউইয়র্কে বেড়াতে আসতেন, প্রায়ই আমাকে নিয়ে যেতেন জাকারিয়ার বাসায়। দুজনের মিলন মানেই সংগীতের উৎসব, কতদিন যে তারা একসঙ্গে গানে গানে ভরিয়ে তুলেছেন সন্ধ্যাগুলো!

আমি আজও মনে করি, বিখ্যাত আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে তার ম্যারাথন আড্ডার দৃশ্য। দুজনের চেহারা, ভঙ্গি, আর প্রাণচাঞ্চল্য যেন একে অপরের প্রতিফলন। জাকারিয়া ছিলেন পপগুরু আজম খানের একনিষ্ঠ অনুরাগী। তার কণ্ঠে আজম খানের গান শুনে অনেক প্রবাসী শ্রোতা আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। প্রবাসে তিনি আজম খানের গানের এক অগ্রণী কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন।

২০১০ সালে পপগুরুর আরেক অনুরাগী মাহবুবে খোদা রুমি ভাই, জাকারিয়া এবং আরো কয়েকজন মিলে আমরা প্রতিষ্ঠা করি South Asian Music Society (SAMS)। উদ্দেশ্য ছিল এই ব্যানারে পপগুরু আজম খানকে নিউইয়র্কে এনে একটি বড় কনসার্ট আয়োজন করা। রুমি ভাইয়ের বাড়ির সেমি-বেসমেন্টে আমরা তৈরি করি ছোট্ট এক মিউজিক স্টুডিও, যেখানে দিনরাত চলতো সংগীতচর্চা, পরিকল্পনা, আর পোস্টার ডিজাইন।

অবশেষে এক মহাসমারোহে গুলশান টেরাসে উদ্বোধন হলো South Asian Music Society-এর। যোগ দিলেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও শিল্পীরা। সেদিন জাকারিয়ার লাইভ কনসার্ট আজও আমার চোখে ভাসে- তার কণ্ঠে মিশে ছিল ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আর সংগীতের প্রতি এক গভীর মমতা।

১৬ অক্টোবর সকালেই ফেসবুকের মাধ্যমে ও বিভিন্ন পত্রিকায় তার মৃত্যুর খবরটি পাঠিয়েছি। খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য কল আসছে, সবাই শোকাহত, বিমূঢ়।

জাকারিয়া মহিউদ্দিন তিন মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে ছিলেন। শেষের দিকে তার কিডনিগুলো একেবারেই অকেজো হয়ে পড়েছিল। সেই কঠিন সময়ে তার স্ত্রী বীনা বর্মন মন খারাপ নিয়ে আমাকে বারবার ফোন করেছেন, খবর জানিয়েছেন। আজ তিনিই কান্নাজড়িত কণ্ঠে আমাকে ফোন করে জানালেন এই দুঃসংবাদ-জাকারিয়া আর নেই।

তার কণ্ঠের উচ্ছ্বাস, গানের মায়া আর বন্ধুত্বের হাসি-সবই আজ স্মৃতির জগতে রয়ে গেল।

প্রবাসের আকাশে যেন তার গাওয়া গান ভেসে বেড়ায় চিরকাল-

একটি স্মৃতির গান

আজ জাকারিয়ার গান বাতাসে মিশে যায়,

প্রবাসের নীরব রাত জেগে থাকে তার সুরে।

বন্ধুরা ডাকে, সে আর সাড়া দেয় না-

তবু সুর বেঁচে থাকে, হৃদয়ের অসন্তরালে।

এদিকে জাকারিয়া মহি উদ্দীনের নামাজে জানাজা গত ১৭ অক্টোবর বাদ জুমা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। তার নামাজে জানাজায় কমিউনিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।

শেয়ার করুন