২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১০:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন


আইসের হাতে ১৭০ জন মার্কিন নাগরিক আটক
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
আইসের হাতে ১৭০ জন মার্কিন নাগরিক আটক ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট (আইস)


যুক্তরাষ্ট্রের অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম প্রোপাবলিকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কমপক্ষে ১৭০ জন মার্কিন নাগরিককে আটক করেছে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট (আইস)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসনবিরোধী অভিযানে ভুলবশত এসব নাগরিককে আটক করা হয়। এর মধ্যে ২০ জনেরও বেশি নাগরিককে একাধিক দিন আইনজীবী বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ না দিয়েই আটকে রাখা হয়েছিল। প্রোপাবলিকা জানিয়েছে, এ সংখ্যা শুধু নথিভুক্ত ঘটনা, প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক হওয়া ১৭০ জনের মধ্যে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও অসুস্থ নাগরিকও রয়েছেন। অনেককে ভুল পরিচয় বা নামের উচ্চারণকে ভিত্তি করে ‘বিদেশি’ হিসেবে সন্দেহ করে আটক করা হয়েছে। টেনেসির এক মার্কিন নাগরিক জানান, তিনি পাসপোর্ট ও জন্মসনদ দেখালেও আইসিই কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেননি যে, তিনি আমেরিকান। তদন্তে আরো জানা গেছে, অনেককে আটক করার সময় শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউকে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া, মাটিতে ফেলে দেওয়া, এমনকি হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। একাধিক ক্ষেত্রে এজেন্টরা নাগরিকদের গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরার মতো নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন।

প্রোপাবলিকার তথ্যমতে, এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১২টি অঙ্গরাজ্যে ঘটেছে। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ইলিনয় ও নিউইয়র্কে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ২০ জনেরও বেশি নাগরিকের ‘গোপন আটক’-এর ঘটনা। এসব ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিদের কয়েক ঘণ্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত পরিবারের সদস্য বা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

কিছু পরিবার প্রিয়জনকে খুঁজে পেতে হাসপাতাল, পুলিশ বিভাগ ও ডিটেনশন সেন্টারে ঘুরে বেড়িয়েছে। এক অভিভাবক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, সে অপহৃত হয়েছে। পরে জানতে পারি, সে আসলে নিজের দেশেই সরকারের হাতে বন্দি। এছাড়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আটক হওয়া অন্তত ২০ জন শিশু গুরুতর অসুস্থতার শিকার ছিল। তাদের মধ্যে দুজন ক্যানসার আক্রান্ত, যাদের টেক্সাসের একটি ডিটেনশন সেন্টারে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় চিকিৎসা ছাড়াই রাখা হয়েছিল। আবার ৭০ বছরের বেশি বয়সী অনেক নাগরিককে পাতলা পোশাকে প্রবল ঠান্ডায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়।

আইস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মার্কিন নাগরিককে আটক করে না এবং নাগরিকত্ব নিশ্চিত হলে দ্রুত মুক্তি দেয়। তবে প্রোপাবলিকার তদন্ত বলছে, মাঠপর্যায়ে এই নীতির বাস্তবায়ন প্রায়শই ব্যর্থ হয়। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ হওয়ায় অনেককে অকারণে দিনের পর দিন, কখনো সপ্তাহব্যাপী আটক রাখা হয়। বেআইনি আটক রাখা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর পরিপন্থী।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনসহ একাধিক ডেমোক্র‍্যাট আইনপ্রণেতা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস)-এর কাছে জানতে চেয়েছেন, কীভাবে নাগরিকদের ভুলভাবে আটক করা হচ্ছে এবং বর্তমানে কতজন মার্কিন নাগরিক আইসিই হেফাজতে রয়েছেন।

সিনেটর ওয়ারেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘একজন আমেরিকান নাগরিককে ভুলবশত আটক করা সরকারের সবচেয়ে গুরুতর ব্যর্থতা। এটি শুধু প্রশাসনিক ভুল নয়, এটি মৌলিক নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন।’

প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এবং ইমিগ্র‍্যান্ট জাস্টিস সেন্টারের মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো আইসের নীতিকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, এই ভুল আটক কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি গভীর হুমকি। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ভবিষ্যতে ভুল আটক এড়াতে উন্নত নাগরিকত্ব যাচাই ব্যবস্থার প্রবর্তন তার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ তদন্তও ক্ষতিপূরণ প্রদান দাবি জানিয়েছে। অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই অনুসন্ধান যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। যেখানে সংবিধানে নাগরিক স্বাধীনতা সুরক্ষিত, সেখানে রাষ্ট্রীয় সংস্থার হাতে নিজ দেশের নাগরিকদের আটকে রাখা গণতন্ত্রের ভিত্তি নাড়িয়ে দেয়। যতদিন না আইসিই এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সঠিক ও স্বচ্ছ নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারবে, ততদিন নিজেদের দেশেই অনেক আমেরিকান ‘অভিবাসন আইনের বন্দি’ হয়ে থাকবেন।

শেয়ার করুন