৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩৮:১০ অপরাহ্ন


অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৫
অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ


বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ লাউঞ্জ চালু করা অভিবাসীদের সম্মান জানানোর সুন্দর দৃষ্টান্ত। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করা গেলে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কেনো ভালো ফল দেবে না। কেননা বিগত সরকারের আমলেই মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে এক যৌথ সিন্ডিকেট ২৪ হাজার কোটি চাকা আত্মসাৎ করে ফেলেছে। 

গত ২৯ ডিসেম্বর রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাব এ রামরু আয়োজিত প্রেস কনফারেন্স এ এতথ্য ও আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়। ওইদিন ’বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৪’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ডঃ তাসনিম সিদ্দিকী উপস্থিত সংবাদ কর্মিদের সামনে উপস্থাপন করেন। প্রেস কন্ফারেন্স এ আরোও উপস্থিত ছিলেন মেরিনা সুলতানা, ডিরেক্টর প্রোগ্রাম, মোঃ পারভেজ আলম, সিনিয়র অফিসার আইটি ও কমিউনিকেশনসহ রামরুর সহকর্মীবৃন্দ। 

প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে শ্রম অভিবাসনের প্রবণতা, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনাগুলো বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয় যে, মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের সফটওয়্যারের মালিক দাতো আমিন ও তাঁর বাংলাদেশি সহযোগী রুহুল আমিন যৌথভাবে সিন্ডিকেট (চক্র) তৈরি করেছিলেন। তারা সাড়ে পাঁচ লাখ কর্মী পাঠিয়ে ওই চক্র অভিবাসীদের কাছ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ফেলে। এটি এখনো মারাত্মক সিন্ডিকেট চক্র উল্লেখ করে ডঃ তাসনিম সিদ্দিকী জানান এর বিরুদ্ধে লড়াই করাও কঠিন কাজ। তবে রামরুর প্রতিবেদনের রয়েছে যে, অভিবাসী কর্মীদের অনেকেই মালয়েশিয়া গিয়ে কাজ না পেয়ে অসহায় জীবন যাপন করেন অথবা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ সরকার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে চারজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে চক্রের দুই হোতাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে।

এদিকে লিখিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, নীতিনির্ধারক, উচ্চপর্যায়ের আমলা এবং ব্যক্তি খাতের ভেতরে আঁতাত গড়ে ওঠার কারণে বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। তবে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এর পাশাপাশি তিনি অভিবাসন খাতে নীতি সংস্কার এবং দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দেন। বিশেষ করে, নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, ট্রেনিং সেন্টারগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি, এবং রিক্রুটিং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

লিখিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯,০৬,৩৫৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০.৮০% কম। গণঅভ্যুত্থান এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে অভিবাসনের গতি সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়, তবে শেষ কয়েক মাসে তা পুনরায় গতি লাভ করেছে। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, এবং কাতার প্রধান গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে নারী শ্রমকদের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালে নারী অভিবাসী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৪ সালে রেমিট্যান্সের মোট পরিমাণ ২৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩২.৫৪% বৃদ্ধি।

শেয়ার করুন