৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩১:০২ অপরাহ্ন


আবু ও তার স্ত্রী অপহরণকারীর হাতের তালু কেটে মরিচের গুড়া দেয়ার হুমকি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৫
আবু ও তার স্ত্রী অপহরণকারীর হাতের তালু কেটে মরিচের গুড়া দেয়ার হুমকি আবু চৌধুরী


জ্যামাইকায় একটি সুপারমার্কেটের মালিক আবু চৌধুরী (৩৫) এবং তার স্ত্রী ইফাত লুবনার (২৪) নামে নতুন করে বাংলাদেশীকে অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছে। এবং তাদের বিরুদ্ধে অপহরণকারীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণের চমকপ্রদ আদালতের নথিতে প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আবু চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ইফাত লুবনা ইতিমধ্যে একাধিক অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত। এবং তাদের গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। কোর্টের নথি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে তাদের বিরুদ্ধে তৃতীয় অপহরণের অভিযোগ করা হয় এবং তারা নতুন করে অভিযুক্ত হন বলে ফেডারেল প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন। সর্বশেষ তারা যাকে অপহরণ করেন তাকে চার দিন ধরে আটক রেখে নির্যাতন করেন। আবু চৌধুরী ও লুবনা তার হাতের তালু কেটে দেয় এবং ক্ষতস্থানে মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই ভয়াবহ ঘটনায় কুইন্সের বাঙালি কমিউনিটিতে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, এই দম্পত্তি অপরহৃত ব্যক্তিকে মুক্তি দিলেও তাকে বাধ্য করা হয় তাদের সাথে থাকতে। আটক করা হয় তার পাসপোর্ট। অপরহৃত ব্যক্তির পাসপোর্ট না দেয়ায় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র না দেয়ায় সে অন্য কোথাও যেতে পারেনি। আবু চৌধুরী ও লুবনা ছয়জনসহ ষড়যন্ত্রকারীকে ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে অভিযুক্ত করে।

আদালতের নথিতে ’জন ডো’ নামে পরিচিত ২৩ বছর বয়সী ভিকটিম ২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি কুইন্সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার কলেজের পরিচিত লুবনার উপর আস্থা রাখেন। জন ডো চৌধুরীর সাথে বন্ধুত্ব করেন, সেই সময় লুবনার বয়ফ্রেন্ড ছিলেন, এবং যখন তিনি রুমমেট ছাড়াই থাকেন, তখন তিনি লুবনার দিকে ফিরে যান। লুবনা তাকে তার অ্যাপার্টমেন্টে থাকার জায়গা দেন কিন্তু তার টাকা, পাসপোর্ট, ইমিগ্রেশনের কাগজপত্র এবং বাংলাদেশ থেকে তার ডিপ্লোমা চেয়ে নেন নিরাপত্তার জন্য বলে।

২০২৩ সালের ১০ মে আবু চৌধুরী ও লুবনা জন ডো এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে তিনি লুবনার কলেজে তার সম্পর্কে মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছেন। এর ফলে জন ডো রুমমেট থেকে অপহরণের শিকার হন। তাকে আবু চৌধুরীর এসইউভি গাড়িতে আটকে রাখে মারধর করা হয় এবং পালানোর চেষ্টা করলে তার কানে ও চোখে স্ক্রু ড্রাইভার ঢোকানোর হুমকি দেয়া হয়। তারা জন ডোকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দেয় এবং তার বাবাকে ফোন করে বিমান টিকিটের জন্য টাকা চাইতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে তারা তাকে লুবনার অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যায় এবং মারধর করে, তারপর এসইউভি গাড়ি করে হিলসাইড, কুইন্সে নিয়ে যায়। সেখানে চৌধুরী “শাহ” নামে এক ব্যক্তিকে ফোন করে লবণ, মরিচের গুঁড়ো, একটি রড এবং একটি ছুরি আনতে বলে। শাহ হলেন সাইদুল চৌধুরী, যাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই মাসের শুরুর দিকে গ্রেফতার করে।

হিলসাইডে দম্পতির সাথে মিলিত হয়ে তিনজন মিলে ’জন ডোকে’ বেঁধে ও মুখে কাপড় দিয়ে রাখেন এবং তাকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে। তাকে পঙ্গু করার এবং হত্যা করার হুমকি দেন। তারা তাকে একটি বেসবল ব্যাট ও রড দিয়ে মারধর করেন এবং এক পর্যায়ে তার হাতের তালু কেটে দেয় এবং সেখানে মরিচের গুঁড়ো ও লবণ ঢালার হুমকি দেয়। আবু চৌধুরী তার মোবাইলে নির্যাতনের ঘটনা প্রায় তিন ঘণ্টা ভিডিও রেকর্ড করেন।

এই নির্যাতনের সময়, ভিকটিমকে হুমকি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আবু চৌধুরী বলেছিলেন, চিৎকার করো না, চিৎকার করো না। যদি তুমি চিৎকার করো, তবে আমি তোমাকে এখানে কেটে দেব। আমি কি তোমাকে বলিনি? আমি তোমাকে যন্ত্রণা দেব, তারপর তোমাকে বাড়ি পাঠাব। আমি তোমাকে পঙ্গু করে দেবো। আমি তোমার পা ভেঙে দেব। আমি তোমার হাড় চূর্ণ করে দেবো। লুবনা ভিকটিমকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তিনি সত্যিই সিরিয়াস। আমি দেখবো তুমি আমার সামনে মারা যাবে, এবং তখনই আমি শান্তি পাব। তুমি মারা যাবে। তুমি আমার সামনে মারা যাবে। আমি তোমাকে মেরে ফেলব। তুমি কোনো শব্দ করতে পারবে না। আবু চৌধুরী তাকে হত্যা এবং দেহ পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। 

২০২৩ সালের জুলাই মাসে আবু চৌধুরী ও লুবনা অনুরূপ একটি অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং জানুয়ারিতে দ্বিতীয় অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এ ক্ষেত্রে আবু চৌধুরী একটি হোটেলে এক ভিকটিমকে অশ্লীলভাবে নির্যাতন করেন এবং তার বাবার কাছে ২০,০০০ ডলার দাবি করেন, তারপর ভিকটিমকে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে দেন, যেখানে ভিকটিম পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আরেকটি ঘটনার সময় আবু চৌধুরী একটি ভিকটিমকে জোর করে নগ্ন হতে বাধ্য করেন এবং রাস্তার মাঝে তার ভিডিও করেন।

আবু চৌধুরী এবং লুবনা বর্তমানে ২৫০,০০০ এবং ১০০,০০০ ডলার বন্ডে জামিনে মুক্ত আছেন। সাইদুল চৌধুরী ১৫০,০০০ বন্ডে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের আইনজীবীরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। কুইন্সের বাংলাদেশি কম্যুনিটিতে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এবং সবাই ছি ছি করছেন।

শেয়ার করুন