১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:৩৭:০৯ পূর্বাহ্ন


২০২৪ সালে বিএসএফ’র গুলিতে ৩১ জন বাংলাদেশী নিহত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
২০২৪ সালে বিএসএফ’র গুলিতে ৩১ জন বাংলাদেশী নিহত সীমান্তে বাংলাদেশীদের লাশ


২০২৪ সালে বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক সরাসরি গুলি করায় ৩১ জন বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন। ২৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন, ৪ জন নির্যাতনের শিকার হন। অপরদিকে ৭ জন বাংলাদেশী নাগরিক ভারতীয়দের গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।

এসব তথ্য উঠে এসেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দেয়া গত বছরের রিপোর্টে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। 

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৪ ও এমএসএফ’র পর্যবেক্ষণে আরো দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় নাগরিক খাসিয়াদের গুলিতে ৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হন। বিএসএফ এর গুলিতে ভারতীয় নৌ-সেনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে ৭৮ বাংলাদেশী জেলেসহ অপর ১৩ বাংলাদেশী নাগরিককে বিএসএফ ধরে নিয়ে যায়। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে ৩টি অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

অপরদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ছোঁড়া গুলি, মটারশেল, গ্রেনেড হামলায় ৭ জন বাংলাদেশী নাগরিকসহ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ২ বাংলাদেশী জেলে। পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে ১১ বাংলাদেশী নাগরিক আহত হয়েছেন, যাদের প্রায় সবারই পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমার নৌবাহিনী ৬০ জন মাঝি-মাল্লাসহ ৪টি ট্রলার অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া মিয়ানমারের সশস্ত্র আরকান আর্মি নাফ নদী থেকে দু’দফায় মোট ২৬ জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। যদিও মধ্যস্থতার মাধ্যমে পরবর্তীতে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে আরকান আর্মি।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দেয়া গত বছরের রিপোর্টে আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে। এসব রির্পোটের পাশাপাশি এমএসএফ’র পক্ষ থেকে সুপারিশও করা হয়। দেশের মানুষ সমমর্যাদা, সাম্য ও ন্যায়বিচার লাভ করবে এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যাশায় এমএসএফ’র সুপারিশে বলা হয় যে বিক্ষোভকারীদের দমনে ও সহিংস কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে পূর্ব থেকেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিক্ষোভকারীদের দমনে ও সহিংস কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করে দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল ভূমিকা পালন করে হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সচেষ্ট থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার যথাযথভাবে চর্চার পরিবেশ তৈরি এবং জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশই বাদী, পুলিশই সাক্ষী, পুলিশই তদন্তকারী এ ধরনেরর মামলায় সাজা দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের যেকোনও নাগরিককে আটক বা গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলা। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে। মিথ্যা মামলা বা হয়রানিমূলক মামলা সংক্রান্ত যে অভিযোগুলো উঠেছে, সেগুলো আমলে নিয়ে অভিযোগের যথাযথ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ারও সুপারিশ করা হয় এমএসএফ’র পক্ষ থেকে। এছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করে এমএসএফ। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও তথ্য পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে নিরন্তর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী এবং অবিলম্বে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করা। গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা। নির্বাচনী সহিংসতা শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সকল প্রকার গুম, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগসমূহ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্পৃক্তদের বিচারের আওতায় আনা।

 শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনাগুলি যে হারে ঘটছে তাতে করে সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব বিশেষ করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা আরও জোরদার করা। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার চর্চায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার রোধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশপাশি জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারাগারসমূহের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাসমূহের যথাযথ তদন্ত করে তার পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত করারও সুপারিশ করা হয় এমএসএফ’র পক্ষ থেকে। এছাড়া গণপিটুনির মতো ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেশাদারিত্বের আওতায় রেখে তাদের কর্ম-পরিধি নিশ্চিত করারও সুপারিশ করা হয় এমএসএফ’র পক্ষ থেকে। দেশের নাগরিকদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা রক্ষায় ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সরকার উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। সে অনুযায়ী সরকারের উচিত মানবাধিকারের একটি সর্বজনগ্রাহ্য মান বজায় রাখা। সকলের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে মানবাধিকার সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য সরকার ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি বলে এমএসএফ মনে করে।

শেয়ার করুন