০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৬:৫৮ অপরাহ্ন


নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আদৌ হবে কি?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১০-২০২৫
নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আদৌ হবে কি? প্রতীকী ছবি


তেরো মাস পেরিয়ে ১৪ মাস ছুঁয়েছে অন্তর্র্র্বর্তী সরকারের কার্যকাল। সরকারপ্রধান ঘোষিত পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আছে আর চার মাস সময়। যে কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলে বলবে দেশে এখনো অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। খোদ রাজধানী ঢাকায় বিশেষত পূর্বাচল, দিয়াবাড়ী-এমনকি হাতিরঝিল এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছিনতাইকারী দুষ্কৃতকারী। দেশজুড়ে মব সন্ত্রাস চলছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। চাঁদাবাজির কারণে দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। শিক্ষাঙ্গন, শিল্পাঞ্চল অস্থির বিক্ষুব্ধ। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে একের পর এক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। বিচারের নাম চলছে প্রহসন। সরকারি অফিস-আদালতে দুর্নীতি বেড়েছে। সড়কে যানজট, জলজট, দেশজুড়ে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ বেড়েছে। যতই দিন যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। ঐকমত্য কমিশন কিছুতেই কিছু মৌলিক সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। দেশের অন্যমত প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর কার্যক্রম সরকার স্থগিত করলেও দেশ-বিদেশে তারা সক্রিয় আছে। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখলে নির্বাচন আদৌ অংশগ্রহণমূলক হবে কি না-প্রশ্নটি জটিল আকার ধারণ করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ দল এবং গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ উঠছে। সরকার ঘনিষ্ঠ দল এনসিপি সকল ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পেলেও জাতীয় পর্যায়ে হলে পানি পাচ্ছে না। বরং তাদের কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতি প্রকাশিত হচ্ছে। বিগত সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত কোন কথিত দুর্নীতি বা দুর্নীতিবাজদের বিচার হয় নি। জ্বালানি বিদ্যুৎ ক্রমাগত নাজুক হয়ে পড়ে দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে। দেশে দেশি অথবা বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের কোথায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য কোনো ক্ষেত্রেই কোনো সংস্কার হয়নি। যত দিন যাচ্ছে, সরকার পরিবর্তনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের প্রণোদনায় ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হচ্ছে। নেপথ্যে থাকা কুশীলবদের পরিচয় মিলছে। 

এমনি অবস্থায় বিপর্যস্ত পুলিশ প্রশাসন এখনো আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়নি। মাঠপর্যায় এবং কেন্দ্রে বেসামরিক প্রশাসন অগোছালো অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন। চেইন অব কমান্ড স্বাভাবিক সময়ের মতো নেই। মাঠপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সামরিক বাহিনী দীর্ঘসময় থেকেও তৃণমূলে সন্ত্রাস রোহিত করতে পারেনি। খোদ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সঙ্গীদের নিউইয়র্কে হেনস্তা করা হয়েছে। জনতা ধীরে ধীরে ধৈর্য হারাচ্ছে। দেশ বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের নিরঙ্কুশ প্রভাব মুক্তির কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রভাবের আওতায় চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় ভারত, চীন, রাশিয়াকে অবজ্ঞা করে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার প্রয়াসে সফল হবে বলে মনে হয় না। 

অনেকেই উচ্চ আদালতের তথাকথিত রেফারেন্স নিয়ে কনস্টিটিউশনের অধীনে সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। মূলত প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করে তথাকথিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপ্রিম সমন্বিত করে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি। তথাকথিত জুলাই ঘোষণা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। 

জাতীয় জীবনে অনেক সংকট তৈরি হয়েছে দুর্বল সরকারের অতিকথন এবং আনাড়িপনার জন্য। আঁধারের শক্তির চাপে দেশে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের সময় নীরব থেকেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা হয়েছে। বাংলাদেশে কখনো মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী শক্তি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না সেটি নিশ্চিত। দেশের এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে অবাধ-নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে সেটি দেখার বিষয়। অচিরে নির্বাচন না হলে দেশে গুরুতর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, এমনকি গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করছে অনেকে। এমনকি বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে পারবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। দেখতে হবে পক্ষপাতদুষ্ট কিছু উপদেষ্টাদের পরিবর্তন করে সরকার একটি আপাত নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারে কি না? অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকে ভবিষ্যৎ রাজনীতির কিছু ইঙ্গিত মিলেছে। দেখতে হবে নির্বাচন কমিশন পথনকশা ঘোষণা করে কত দ্রুত নির্বাচন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। স্মরণে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির প্রভাব এড়িয়ে বাংলাদেশে কখনো ভারতবিরোধী সরকার শান্তিতে দেশ শাসন করতে পারবে না। সব শক্তির সঙ্গে শান্তিপূর্ণসহ অবস্থানের জন্য দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন জরুরি। ন্যূনতম ইস্যুর ভিত্তিতে ঐক্য স্থাপন হবে সঠিক ভবিষ্যৎ রাজনীতি। 

শেয়ার করুন