১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৭:২৫:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


এ বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচন
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৫
এ বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচন ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (ফাইল ছবি)


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের ভেতরে বিএনপি’র মতো প্রধান রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক চাপে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দিকেই যাচ্ছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে সরকারের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে। এছাড়াও রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতারা সাথে একান্তে কথা বলেও এধরনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

দেশের ভেতরে চাপ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজনের সাথে কখা বলে জানা গেছে, তারা এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। প্রথমে সংস্কারের জন্য দীর্ঘ সময় নিতে চাইলেও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক বিএনপি এর তুমুল বিরোধী করে। এবং দলটির বিরোধীতা করতে করতে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মাঠে কর্মসূচি দেয়ার ডাক দেয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কারের পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে মত দেয়। বলা চলে মাঠ গরম করতে থাকে। তারা দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দাবি এমনভাবে তুলে ধরতে থাকে যেনো বিএনপি লুটপাট, দখল, চাদাবাজির জন্যই দ্রুত নির্বাচন চায়। জামায়াত রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌশলেই বলাবলি করতে থাকে বিএনপির দ্রুত নির্বাচন করে দুর্নীতিকে প্রশয় দেয়ার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি তার সাথে দীর্ঘ আন্দোলনে পথচলা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার গণতান্ত্রমনা রাজনৈতিক দল। পেশাজীবীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবেই দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে এগুতে থাকে। এক-কন্ঠেই আওয়াজ তোলে যে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার না দ্রুত কিছু সংস্কার এনেই নির্বাচনের আয়োজন করে ফেলা। বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতকে বারবার দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে এককন্ঠে আওয়াজ তোলার জন্য দলের হাইকমান্ড বিভিন্নভাবে আহবান জানায়।

কিন্তু জামায়াত ঘুরিয়ে পেচিয়ে সংস্কারের পক্ষেই কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে বিএনপি ও সমমনাদের নিয়ে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকে এমনভাবে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে যার কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। আরেকটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীতাকারী জামায়াতের এমন কৌশলী নেতিবাচক প্রচারণার বিপরীতে দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে বেগ পেলেও বর্তমানে বিএনপি তা ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সম্পৃক্তদের কেউ কেউ মুখে যতোই বলুক না কেনো আসলে ভেতরে ভেতরে দেশে দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বাইরের তারা যেতে পারছে না বা পারবে না-এটা নিশ্চিত। 

এদিকে ১৩ জানুয়ারি সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যে আলোচনা হচ্ছে, সেটার উদ্দেশ্য জাতীয় নির্বাচনের সময়ক্ষেপণ করা। অন্তর্বতী সরকারের উচিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়ে জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। ফলে বোঝাই যাচ্ছেই বিএনপি বছরের মাঝামাঝিতে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চাই থাকবে। তবে একটি সূত্র জানায় বিএনপি’র হাইকমান্ডও ইতোমধ্যে জেনেছে যে, সরকার এবছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে তৎপরই আছে। তাই মাঠে বিএনপি সরকারের উদ্যোগেকেই কৌশলে সমর্থন জানিয়ে চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আওয়াজ তুলছে। 

আন্তর্জাতিক চাপ তীব্র হচ্ছে

এদিকে দেশের ভেতরে বাইরে বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক চ্যালেনের খবর নিয়ে জানা গেছে যে, আন্তর্জাতিকমহল বাংলাদেশে দ্রুত একটি স্থিতিশীল জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজে বলা যায় টিম লিডার হিসাবে অগ্রনী ভূমিকার পালন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বয়ং। আর তার সাথে কাজ করে যাচ্ছে দেশটির কৌশলগত সামরিক মিত্র ভারত। 

এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, সব অতীত ভুলে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশে সে-ই রাজনৈতিক সরকারের সাথে কাজ করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সরকারের আগ্রহ বেশি। কারণ বাংলাদেশে মোদী’র রাজনৈতিক সামরিক কৌশল মার খেয়ে গেছে অথচ এখনো কিছুই করতে পারেছে না-এমন নেতিবাচক প্রচারণা এখন তার-ই ঘাড়ে পড়েছে। এজন্য দেশটি আমেরিকার পাশাপাশি ইইউ’কে-ও দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দিচ্ছে বলে। 

সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি’র একটি বক্তব্যে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনের ব্যাপারে তাগাদার বিষয়টির ফুটে উঠেছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সেই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। এরিক গারসেটি মতবিনিময় সভায় জানান, ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অজিত দোভালের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে এবং সে বৈঠকের বড় অংশ জুড়ে ছিল বাংলাদেশ এবং এর সম্ভাব্য নির্বাচন। 

অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে বিএনপি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নেতারা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে বৈঠকে এমন কথা জানিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। দলটি’র নেতারা ইইউ প্রতিনিধি দলকে বলেছেন, অন্য কোনো ভাবনা না ভেবে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। 

আগামী দিনে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হন্তান্তর করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। একটি সূত্র জানায় ইইই’র পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে তারা একটি নির্বাচিত সরকারের সাথেই কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, এজন্য বাংলাদেশে যেনো একটি দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা যায় সেব্যপারে তারা ভূমিকা রাখবে বলে বিএনপি’কে আশ্বস্তও করেছে। 

ভারতের সেনাপ্রধানের কণ্ঠেও দ্রুত নির্বাচনের দাবি

এদিকে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী’র একটি বক্তব্যে বোঝা গেছে তারা একটি নির্বাচিত সরকারের সাথেই কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে। সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আগের মতোই আছে উল্লেখ করে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী তার বক্তব্যে বলেছেন, দুই দেশের পারস্পরিক সার্বিক সম্পর্ক তখনই স্বাভাবিক হবে, যখন সে দেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে। 

সেনা দিবস পালনের আগে গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও সামরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতের সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। তিনি বাংলাদেশে যে একটি নির্বাচিত সরকার না এলে কি কি সমস্যা হয় তার একটা ইঙ্গিতও দেন। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী’র বলেন, বাংলাদেশ ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত অংশীদার)। কোনো ধরনের শত্রুতা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর। তাতে কারও স্বার্থ চরিতার্থ হবে না। এসব কথার পাশাপাশি ভারতের সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের দুই দেশকেই একসঙ্গে বাস করতে হবে। পরস্পরকে জানতে ও বুঝতে হবে। কোনো ধরনের শত্রুতা কারও পক্ষে ভালো নয়।’ তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক একেবারে ঠিক রয়েছে। কিন্তু দুই দেশের সার্বিক সম্পর্কের কথা যদি বলেন, তাহলে বলব, নির্বাচিত সরকার এলেই তা স্বাভাবিক হবে।’

অবশেষে প্রধান উপদেষ্টা’র আভাস

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সরকার এযাবৎকালের সেরা করার পরিকল্পনা করছে, যাতে এটি গণতন্ত্রের একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। ঢাকায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসন ১২ জানুয়ারি রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে যে আলোচনা চলছে তাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন মন্তব্য খুবই ইতিবাচক। কেননা ইতোপূর্বে কথায় কথায় তিনি বিদেশীদের বাংলাদেশে নির্বাচনের ব্যাপারে সংস্কারের কথা টেনে আনতেন। তবে এবার কিন্তু তিনি আগামী নির্বাচনকে সরকার এযাবৎকালের সেরা করার পরিকল্পনার কথাকেই গুরুত্ব দিলেন।

 রাজনৈতিক পর্যবক্ষেক মহল মনে করে দেশের এবং দেশের বাইরেরর সার্বিক পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশের জন্য একটি দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন। দেশের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক আর্থিক সঙ্কটের বিষয়গুলো একটি রাজনৈতিক সরকারই ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর সেজন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার এখন দেশে দ্রুত নির্নাচন দেয়ার বিষয়ে বিএনপিসহ সমমনাদের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সেকারণেই বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সব ঠিক থাকলে যে বিশেষ করে চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে।

শেয়ার করুন