প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তার প্রথম দিন থেকেই ১০০টি নির্বাহী আদেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ আদেশগুলো মূলত সীমান্ত নিরাপত্তা, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন নীতি অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। প্রথম দিনেই সীমান্ত, বহিষ্কার এবং অন্যান্য অগ্রাধিকারে বাস্তবায়ন করা হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে তার পরিকল্পনার বিশদ বর্ণনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বেশির ভাগ নির্বাহী আদেশ ২০ জানুয়ারি অভিষেক ডে-তে কার্যকর হবে। তার শীর্ষ পরামর্শদাতা স্টিফেন মিলার রিপাবলিকান সিনেটরদের সামনে সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন আইনপ্রয়োগের জন্য দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। তবে সিনেটর জন হোভেন বলেছেন, এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আদেশ হতে পারে।
ট্রাম্পের দল এমন একটি বিস্তৃত নির্বাহী আদেশের তালিকা দ্রুত সই করার জন্য প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা, শক্তি উন্নয়ন, ফেডারেল কর্মী নিয়োগ নীতি, স্কুলে লিঙ্গ সম্পর্কিত নীতি, বাধ্যতামূলক টিকাদান এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময় করা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দিনেই ১০০টি নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, মানবাধিকার, অভিবাসন নীতি এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা সামাজিক অস্থিরতা, বৈষম্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। নতুন প্রশাসনের প্রথম দিনে নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করা সাধারণ ঘটনা। কিন্তু ট্রাম্প এবং তার দল যা পরিকল্পনা করছেন, তা আধুনিক যুগে নজিরবিহীন। তিনি কংগ্রেসের আইন প্রণয়নের ধাপ এড়িয়ে সরাসরি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন। কিছু আদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে, আবার কিছু হয়তো শুধু নতুন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝানোর জন্য প্রতীকী পদক্ষেপ হতে পারে। সিনেটরদের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের বেশকিছু নির্বাহী আদেশ বাতিল করে, ট্রাম্প প্রশাসন তার নিজের পরিকল্পনা কার্যকর করবে।
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় মজা করে বলেছিলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের দিন একটি ছোট ডেস্ক ব্যবহার করবেন, যেখানে বসে নির্বাহী আদেশগুলো দ্রুত সই করবেন। যদিও এরকম কোনো প্রস্তুতির ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। রিপাবলিকান সিনেটররা আশা করছেন যে ট্রাম্প তার শপথ গ্রহণের পর পরই সিনেটের ভেতরে প্রশাসনিক নিয়োগগুলো অনুমোদন করবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্তে মেক্সিকো প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন করতে, অভিবাসন আটককেন্দ্র স্থাপন করতে এবং প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করার পরিকল্পনা করেছে। সিনেটররা আশা করছেন যে, ট্রাম্প তার প্রথম শাসনামলের সময়ের মতোই সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করবেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো, মেক্সিকোতে অবস্থান করা বা অন্য দেশে আশ্রয় আবেদন করা অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ না করেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
সিনেটর জেমস ল্যাঙ্কফোর্ড, যিনি সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করেছেন। বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে প্রায় ১ মিলিয়ন অভিবাসীকে লক্ষ্যবস্তু করবে, যারা সম্প্রতি দেশে প্রবেশ করেছেন, অপরাধে লিপ্ত হয়েছেন বা আদালত কর্তৃক বহিষ্কারের নির্দেশ পেয়েছেন।
ল্যাঙ্কফোর্ড বলেন, এটি সহজ লক্ষ্য। যারা সম্প্রতি এসেছেন, অপরাধ করেছেন অথবা আদালতের নির্দেশে দেশ ছাড়তে হবে তাদের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশগুলো পাল্টে দিতে পারেন। ইউরোপীয় কমিশন এরই মধ্যে এই আদেশগুলো বিশ্লেষণ করতে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে বোঝা যায়, কোন পরিবর্তনগুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের পরিকল্পিত নির্বাহী আদেশগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিতে নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পিত ১০০টি নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সীমান্ত নিরাপত্তা, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার মাধ্যমে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন। কংগ্রেসের আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া এড়িয়ে সরাসরি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার এই উদ্যোগ প্রশাসনিক কাঠামো ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ফলে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক কূটনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনে, তা সময়ই বলে দেবে।