১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৫:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


চক্রান্ত ঠেকাতে সবাইকে এক মঞ্চে চায় বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৫
চক্রান্ত ঠেকাতে সবাইকে এক মঞ্চে চায় বিএনপি বিএনপির সমাবেশ (ফাইল ছবি)


যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেনো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। সে-ই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে পশ্চিমারা সমর্থন দেবে, গ্রহণ করবে, আস্থায় নেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমাদের এমন ইচ্ছা, আগ্রহ আঁচ করতে পেয়েছে বিএনপি। পশ্চিমাদের এ ধরনের আগ্রহের পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগকে ওই নির্বাচনে অংশ নেয়ার একটি সুবিধাজনক ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে বলে-ও আশঙ্কা বিএনপি’র। আর এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপি’র অবস্থান কি হবে? কিই-বা পরিণতি হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয়? 

এমনটা চিন্তা করে বিএনপি এখন মাঠের সক্রিয় রাজনৈতিক দল বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক সব প্রগতিশীল ও ইসলামী দলকে কাছাকাছি রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক-টা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের সময়ে থাকার মতো। বিএনপি’র আশঙ্কা আন্তর্জাতিক চাপ বা কূটকৈৗশলে আওয়ামী লীগকে মাঠে নিয়ে আসলে বিভাজিত রাজনৈতিক মাঠের পুরো সুযোগটি চক্রান্তকারীরা নিয়ে নিবে। আর এসব মাথায় রেখেই বলা চলে যড়যন্ত্র চক্রান্ত মোকাবেলায় বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের চেষ্টায় বিএনপি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

নতুন দল নিয়ে অন্য রকম চিন্তা বিএনপি’র

বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ দেখছে রাজনৈতিক মাঠে। চারিদিকে একের পর এক ঘটনায় বিচলিত বিচলিত বিএনপি’র হাই কমান্ড। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ইমেজকে পুজি করে ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে সন্দেহ অবিশ্বাস বিএনপি’র মধ্যে। আগামী মাসের মধ্য থেকে শেষ ভাগে ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে পারে শোনা যাচ্ছে। এমন প্রক্রিয়ায় সংসদীয় আসন, উপজেলা ও ইউনিয়নে বিএনপির দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দলে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিএনপি’র হাই কমান্ডের কাছে খবর রয়েছে। বলা হচ্ছে এমন প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ বাদে অন্যান্য দলের নেতাদের জন্যও দুয়ার উন্মুক্ত রাখবে। বিএনপি’র হাই কমান্ড আরো মনে করেন তাদের দলের একশ্রেণীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির অভিযোগ পুরো দেশে চাওড়। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েও কাজ হচ্ছে না। তবে বিএনপি’র হাইকমান্ড পুরোপুরি মনে করেন চাঁদাবাজি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিরক্ত। আর এমন হট ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নতুন দল গঠনকারীরা বাজিমাত করতে পারে। এছাড়া এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নতুনরা বিএনপি’র জন্য অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আর নতুন দল গঠনের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নিতে অনেকে এতে জোটবদ্ধ হতে আগ্রহী উঠে বিএনপি’র জন্য একটি বিষফোড়া হয়ে দেখা দিতে পারে। 

আছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ

এদিকে বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করে পশ্চিমারা এবার বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায় করেই ছাড়বে। সেক্ষেত্রে কোনো একটি উছিলায় বা অন্য কোনো ফরমেটে আওয়ামী লীগকে পশ্চিমাদের পাশাপাশি ভারতে কঠোর কূটকৌশলে বাংলাদেশে একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারে। অন্যদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, নোবেল শান্তিতে পুরস্কার বিজয়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তরে বড়ো ধরনের বির্তক এড়াতে কি ধরনের বিপাকে পড়েন বা পড়তে পারেন তা হয়তো-বা সময় বলে দিতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল এটা-ও মনে করেন পশ্চিমাদের চাপে শেষ মেষ হয়তোবা কোনো এক উসিলায় আওয়ামী লীগের খন্ডিত একটি অংশকে হলে-ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আন্তর্জাতিকভাবে বলা চলে পশ্চিমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা নিতে পারেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

আর এমন পরিস্থিতিতে পুরো রাজনৈতিক মাঠে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিভক্তি দলাদলি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুফলের কবর রচনা হতে পারে। এতে বিএনপি আগামী ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও চুরমার শুধু না শেষ হয়ে যেতে পারে। কেননা ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী দলটি আগে সংস্কার না নির্বাচন এমন ইস্যুতে বিএনপি’সহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সাথে বড়ো ধরনের ব্যবধান তৈরি করেছে। আর এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি’র ধারণা এটি কেবল তাদের জন্য-ই নয় অন্য দলগুলির জন্যও হবে অশনি সংকেত। আর একথা মাঠে রেখেই বিএনপি এখন ভোদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলামী দলগুলিকেও কাছে টানছে। তারই উদারহণ দেখা গেলো ২৭ জানুয়ারি সোমবার ইসলামী আন্দোলনের বৈঠকে আয়োজনের ঘটনাটির মধ্য দিয়ে। 

বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের বৈঠকে কি হলো?

গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে এই দুই দলের বৈঠকের খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে জানা গেলো ওইদিন বেলা সোয়া ১২টার দিকে কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমাদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন। খবরে জানা গেলো ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ ১০ দফায় একমত হয়েছে বিএনপি ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের বৈঠকে এ ঐক্যমত হয়। কিন্তু এব্যাপারে একটি সূত্র জানায়, বিএনপি আসলে এধরনের বৈঠকটির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের প্রেক্ষাপটকেই মাথায় রেখেই। কেননা মাঠের বিভেদ কোন্দলেল সুযোগে অন্য কেউ হয়তো সুযোগটি নিতে না পারে পারে সে চিন্তা মাথায় রেখেই তারা দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ইসলামী দলটির সাথে বৈঠকে বসেছে। 

কারো কারো মতে, জামায়াতে ইসলামী এবং চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনের দীর্ঘ আদর্শিক বিরোধ থাকলেও গত ২১ জানুয়ারি দু’দলের প্রধানের দেখা হয়। রেজাউল করীমের সঙ্গে বরিশালের চরমোনাই গিয়ে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎ নতুন আলোচনার জন্ম দেয়। আর এজন্য হয়তবা বিএনপি এবং ইসলামী আন্দোলন- এ দু’দলের সাথে বৈঠকটি হয়েছে। তবে বৈঠকে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন মধ্যে একমত হওয়া বিষয়গুলির দিকে খেয়াল করলেই আসল সূত্র প্রকাশ পাবে বলে অনেকের ধারণা। কেননা বৈঠকে দু’দলের মধ্যে ঐক্য নিয়ে যে দশটি বিষয় তুলে ধরা হয় তাতে দেখা যায় যে পুরো দফাতেই আওয়ামী লীগকে ঠেকানোই যেনো ঐক্যমত। 

কেননা ঐক্যমতে দেখা গেলো আগামীতে আওয়ামী লীগকে যে পশ্চিমারা নির্বাচনে দেখতে চায় বা চাচ্ছে তা-ই ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তির দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। আর যাতে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্য। ফলে সহজেই অনুমেয় যে, যড়যন্ত্র চক্রান্ত মোকাবেলায়ই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের চেষ্টায় বিএনপি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

শেয়ার করুন