১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৫:৫২:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


বিএনপি-ছাত্র সমন্বয়ক বাহাস : নতুন শঙ্কা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৫
বিএনপি-ছাত্র সমন্বয়ক বাহাস : নতুন শঙ্কা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নাহিদ ইসলাম


আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল এবং সরকারে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের বাহাস জনমনে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে ছাত্র-জনতার নিরীহ গোছের আন্দোলন হঠাৎ করে বিস্ফোরণে রূপ নেয়। নেপথ্যে কি কারণ ছিল সেটি সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত বা প্রকাশিত হতে সময় লাগবে। কিন্তু আন্দোলন উত্তর গঠিত সরকার বিপ্লবী সরকার না হয়ে সংবিধানের আলোকে গঠিত সীমিত সময়ের অন্তর্বর্তী সরকার হওয়ায় এর কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। বিএনপি চাইছে নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম অপরিহার্য সংস্কার করে যথাশিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠান। ওদের ধারণা নির্বাচন হলেই নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে। 

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিষদ এবং নাগরিক ঐক্যের নেতারা চায় রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর অপরিহার্য সংস্কার করে নির্বাচন অনুষ্ঠান। কারণ ছাত্র-জনতা মনে করছে সংস্কার পুরাদমে না হয়ে নির্বাচন হলে সেই রাজনৈতিক দল এসে পুরোনো স্টাইলেই চালাবে ক্ষমতা, যা আগের রাষ্ট্রপরিচালনাকারীদের নীতির সঙ্গে খুব পার্থক্য হবে না। তাহলে এতো আন্দোলন, রক্তদানের কী অর্থ হতে পারে? এমন নানা সমীকরণের প্রেক্ষাপট সামনে রেখে ইতিমধ্যে নাগরিক ঐক্য নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মতে, এ দলটি কিংস পার্টি হতে পারে। সেখানেই আপত্তি বিএনপির। ওদের দাবি সেক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক জাতীয় সরকার গঠন করে নির্বাচনের। নির্বাচন শুধু সরকার করে না। নির্বাচনের সময় সরকারের সিভিল প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগ সম্পৃক্ত থাকে। বিএনপির দাবির বিপরীতে ছাত্র উপদেষ্টারা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। উপদেষ্টারা আরো সন্দেহ করছে বিএনপির দাবি ১/১১-এর মতো আরো একটি সরকার গঠন করে একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় আনার পাঁয়তারা।

উভয় পক্ষের মন্তব্য বা অবস্থানের যৌক্তিকতা আছে। বাহাসগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এগুলো বিতর্ক থেকে দ্বন্দ্বে পরিণত হবার আগে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নিরসন হয় জরুরি। নির্বাচিত সরকার অঙ্গীকারের ভিত্তিতে সবক্ষেত্রে সংস্কার নিশ্চিত করবে। বর্তমান অবস্থা থেকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকারি ব্যবস্থা নিশ্চিত হতে অন্তত দুই-তিন টার্ম সময় লাগবে। তরুণ সমাজ এখানে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে পারে।

দেশের মানুষ চায় ভোটের অধিকার। সেটি নিশ্চিত করা প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া সবার কাম্য। আমজনতা সুযোগ পেলে সৎ যোগ্যপ্রার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করবে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে। বন্ধু রাষ্ট্রসহ বিশ্ব সংস্থাগুলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরামর্শ দিচ্ছে। আর তাই সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থার সর্বসম্মত সংস্কার-সংশোধন করে ন্যূনতম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই হবে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।

ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকার ঘনিষ্ঠ কোনো কোনো মহলের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। নাগরিক কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজকে নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে এলে উচিত হবে ছাত্রপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন চিহ্নিত উপদেষ্টা পদত্যাগ করে সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা থেকে তথাকথিত বিএনপি বা জামাত সমর্থক কর্মকর্তাদের অপসারণ।

উপরোক্ত বিষয়সমূহ নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশে কখনো নিরপেক্ষ পরিবেশে অবাধ নির্বাচন হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে। জনতার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।

শেয়ার করুন