রাজপথ কাঁপানো বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডসহ পুরো নেতৃত্বে বিদেশী শক্তির নির্ভরতায় আছে। দলটি এখন বাংলাদেশের ভেতরে কোনো ধরনের সাদামাটা কর্মসূচি-ও না দিয়ে বিশ্বের শক্তিধর বিশেষ করে আমেরিকারই মন গলাতে নানান ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে। বাংলাদেশে ভেতরে দলটি সুষ্ঠু ও নিরাপদে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে। আর এমন কাজে আওয়ামী লীগ তাদের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনে সর্বাত্মক সমর্থনকারী দেশ ভারতকে কাজে লাগাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ’মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে গড়ে উঠা ’গণঅভ্যুত্থানে’ গত বছরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের টানা সতের বছরের শাসনের অবসান হয়। পতনের পরপর একদিকে জনগণ যখন গণভবন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সাধারণ মানুষের দখলে নিয়ে নেয়, ঠিক তখন তার এক ফাঁকে কোনো এক সময়ে ভারতের উদ্দেশে দেশ ছেড়ে চলে যান শেখ হাসিনা। আর এর পরপরই দলের শীর্ষ ও সক্রিয় নেতারা গা ঢাকা দিয়ে আস্তে আস্তে দেশ ছাড়তে থাকে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পাশাপাশি দলের প্রায় একলাখ খুবই সক্রিয় নেতা-কর্মী দেশ ত্যাগ করেছেন। এই বিশাল বহরে আছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে নিয়ে মাঝারি গোছের নেতাও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, এদের একটি বড়ো অংশই ভারতে চলে গেছে বিশাল অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে। যারা ভারতে গেছেন এবং আছে তারা এখন সেখানে চলাচলে অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন। সেখানে খুব একটা লোকচক্ষুর কাছে আসেন না তারা। এমনটি তারা ফোনে ফোনে খুব জরুরি না হলে কথা বলেন তা নিকটের কারো সাথেই, ফাকে বিপদে পড়তে হয় এই ভেবে।
দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হতাশ
এদিকে আওয়ামী লীগের বিশাল একটি নেতৃত্ব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াতে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা লাখ লাখ সক্রিয় তৃণমূল নেতাকর্মী। তারা একেবারে গোপনে চলাফেরা করছেন। সহজে কারো কাছে যান না। একসাথে জড়ো হচ্ছেন না। অন্যদিকে তাদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে উপরের কোনো সঠিক নির্দেশনাও দিচ্ছে না। ফলে আওয়ামী লীগের কর্মী বাহিনীর একটি বিশাল অংশ নিরব নিথর হয়ে আছে। তবে দলের একটি সূত্র জানায়, এসব কারণে আওয়ামী লীগের বিশাল একটি অংশ এখন হতাশাগ্রস্ত। তারা সহজে দলের কোনো ধরনের কমান্ডের ধারে কাছে নেই। কোনো কর্মসূচিতেই মাঠে নামতে নারাজ। কারো কারো মতে, আওয়ামী লীগের বিরাট একটি অংশই ভাবে তাদের দলের শীর্ষরা গোপনে বড়ো ধরনের একটি লেনদেনের মাধ্যমে নিরাপদে সরে পরেছেন। তাই এসব নেতাদের কথায় আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা দেশে মাঠ গরমে নিয়োজিত থাকতে চায় না। তারা মনে করে এখন এই সরকারের আমলে যেকোনো কর্মসূচি নিতে গেলেই জেলজুলুমের শিকার হতে হবে। শিকার হতে হবে মারাত্মক নির্যাতনের। আর এতে করে সব নিঃস্ব হতে হবে।
কূটনৈতিক তৎপরতাতে ভারতের সাহায্য
আর এমন পরিস্তিতিতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া একেবারে শীর্ষরা যার যার অবস্থান থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমাদের সাথে যেসব নেতাদের অতীতে যোগাযোগ ছিল বা আছে তারা কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। একটি সূত্র জানায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আওয়ামী লীগের নেতারা এখন তাদের কূটনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। তবে একটি সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আমলে ব্যাপক সুবিধাভোগী কূটনীতিকদের একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
দলটি যে আসলে এখন কূটনৈতিক তৎপরতাকেই কাজে লাগাচ্ছে তার একটি নমুনা মিলেছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একটি সাক্ষাৎকারে। ভারতের একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতার আভাস দিয়েছেন। এবং এমন কূটনৈতিক তৎপরতায় যে ভারত সাহায্য করছে তারও আভাস মিলেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলে আপনি ভারতের কাছ থেকে কী আশা করেন? ভারত কীভাবে সাহায্য করতে পারে? এতে আসাদুজ্জামান খান কামাল মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার বিষয়টি টেনে আনেন। তিনি যা বললেন তা হলো, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে ভারত কী করেছে। আমি স্বীকার করি, ভারত সবসময় বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে। এখন ভারত কূটনৈতিকভাবে সাহায্য করতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসাদুজ্জামান খান কামালের এমন বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তারা বাংলাদশে নির্বিগ্নে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করে আছে। ভারতের কূটনৈতিক ইমেজ ও শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় বা লাগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এজন্য আসাদুজ্জামান খান কামাল ওই সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, আমাদের আদালতগুলো পঙ্গু হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারছেন না। সব বিচারক নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই প্রথম কাজ হলো কূটনৈতিক চাপ দেওয়া এবং উচ্চস্বরে দাবি তোলা, যাতে আদালতগুলো আবার কার্যকর হয়। ভারত এতে সাহায্য করতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, সামনের দিনে এখন দেখা যাবে বাংলাদেশে একমাত্র মিত্র দল বলে পরিচিত আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ভারত কি কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। বাংলাদেশে পতিত আওয়ামী লগিকে প্রতিষ্ঠা করতে কি কি করে।