এফবিআই কর্তৃক সেকশন ৭০২-এর অধীনে ওয়ারেন্ট ছাড়া পরিচালিত অনুসন্ধান বা সার্চকে চতুর্থ সংশোধনী লঙ্ঘন হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব নিউইয়র্ক। সম্প্রতি এ ঐতিহাসিক রায় দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন সরকারের নজরদারি ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়। সেকশন ৭০২, যা মূলত বিদেশি গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হলেও যুক্তরাষ্ট্র গভর্নমেন্ট মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর অবৈধভাবে নজরদারি চালানোর সুযোগ তৈরি করেছে। মুসলিম রাজনৈতিক কর্মী, ধর্মীয় নেতা এবং সমাজকর্মীরা অনেক সময় এ ধরনের নজরদারির শিকার হয়ে তাদের মৌলিক অধিকার হারিয়েছেন, যা তাদের স্বাধীনতার ওপর বড় ধরনের আঘাত।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট গত ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র বনাম হাসবাজরামি মামলায় রায় প্রদান করে জানিয়েছে যে, ফোরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভেইলেন্স অ্যাক্ট (এফআইএসএ)-এর সেকশন ৭০২-এর অধীনে ওয়ারেন্ট ছাড়া পরিচালিত অনুসন্ধান বা সার্চ চতুর্থ সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে। এ ধরনের রায় এই প্রথম এবং এটি সরকার কীভাবে সেকশন ৭০২ ব্যবহার করে ওয়ারেন্ট ছাড়া আমেরিকানদের, বিশেষ করে প্রতিবাদকারী, কংগ্রেসের সদস্য এবং সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি চালিয়েছে তা নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রকাশিত তথ্য অনুসরণে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের সাম্প্রতিক রায়, যা সেকশন ৭০২-এর অধীনে ওয়ারেন্ট ছাড়া অনুসন্ধান বা সার্চকে চতুর্থ সংশোধনী লঙ্ঘন হিসেবে ঘোষণা করেছে, এটি নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের মতো প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর জন্য, যারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ নজরদারি ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে, এই রায় তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষার দিকে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এ রায়টি নজরদারি আইনসমূহের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে, যা মানুষের গোপনীয়তা এবং সাংবিধানিক অধিকারকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
কোর্টের মতামতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এফবিআই আগ্রন হাসবাজরামি নামে একজন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালে অসংখ্য সার্চ পরিচালনা করেছে। সরকার শুরুতে হাসবাজরামির মামলায় সেকশন ৭০২ ব্যবহারের বিষয়টি গোপন রেখেছিল। পরে বিচার বিভাগের অপরাধ মামলায় সেকশন ৭০২ নজরদারি ভুলভাবে গোপন করার নীতি প্রকাশিত হলে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে। এ রায়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি প্রথমবারের মতো সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, সেকশন ৭০২ অনুসন্ধানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে ‘অনুসন্ধান’ হিসেবে গণ্য হয় এবং এতে চতুর্থ সংশোধনীর সুরক্ষা প্রযোজ্য।
সেকশন ৭০২ মূলত বিদেশি গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হলেও এর মাধ্যমে আমেরিকানদের তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হয়। এটি একটি বিতর্কিত ধারা, যা আইনগতভাবে ওয়ারেন্ট ছাড়া গোপন নজরদারি চালানোর ক্ষমতা প্রদান করে। এই সেকশনটি এমনকি আমেরিকান নাগরিকদের ওপরও নজরদারি চালানোর সুযোগ প্রদান করে যদি তারা কোনো বিদেশি ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন বা কোনো বিদেশি সত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত থাকেন। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসএলইউ) ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রকল্পের উপপরিচালক প্যাট্রিক টুমি বলেন, এটি এফআইএসএর সবচেয়ে বেশি অপব্যবহৃত ধারা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক রায়। আদালত স্বীকার করেছে যে, এফবিআইয়ের আমেরিকানদের ওপর ডিজিটাল সার্চ পরিচালনা তাদের গোপনীয়তায় গুরুতর আঘাত করে এবং এটি চতুর্থ সংশোধনীর মূল সুরক্ষা কার্যকর করে। কংগ্রেসের এখন সেকশন ৭০২ সংস্কারের সময় এসেছে, এবং এই মতামত এর কারণটি স্পষ্টভাবে দেখায়। এসএলইউ এবং ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন (ইএফএফ) সেকেন্ড সার্কিট কোর্টে হাসবাজরামির পক্ষে একটি আমিকাস ব্রিফ জমা দিয়েছিল, যার মধ্যে তারা সেকশন ৭০২-এর অপব্যবহার এবং তার পরিণতি সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এ রায়টি ২০১৯ সালে সেকেন্ড সার্কিট কোর্ট অব আপিলসের এক রায়ের পরিপূরক হিসেবে এসেছে, যেখানে কোর্ট উল্লেখ করেছিল যে, সেকশন ৭০২ অনুসন্ধানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য চতুর্থ সংশোধনী পরীক্ষার অধিকারী। কোর্টের মতে, সেকশন ৭০২-এর অধীনে তথ্য সংগ্রহের ফলে আমেরিকানদের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয় এবং এটি সংশোধনী লঙ্ঘনকারী।
এখন এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সেকশন ৭০২-এর বাস্তবায়নে একটি শক্তিশালী সংস্কারের প্রয়োজন এবং কংগ্রেসকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও আদালত হাসবাজরামির পক্ষ থেকে জব্দকৃত প্রমাণ বাতিল করার আবেদন নাকচ করেছে, তবে এটি ভবিষ্যতে সেকশন ৭০২ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছে।
এ রায়টি মার্কিন সরকারের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেকশন ৭০২-এর ব্যবহারের পরিমাণ আরো কমাতে এবং তা আরো সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ফেডারেল আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। বর্তমানে সারা দেশে সরকারের পক্ষ থেকে সেকশন ৭০২ ব্যবহারের মাধ্যমে আরো অনেক আমেরিকান নাগরিকের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। এ রায় ভবিষ্যতে এমন নজরদারি প্রক্রিয়া আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য, যেখানে আদালত সেকশন ৭০২-এর অপব্যবহার এবং সরকারের নজরদারি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। এ রায়টি শুধু আইন এবং গোপনীয়তার অধিকার রক্ষায় একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি পুরো বিশ্বে মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে একটি বড় জয়। সেকশন ৭০২-এর বিরুদ্ধে এই রায় একটি আশাপ্রদ সূচনা, যা মার্কিন সরকারের নজরদারি নীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে এবং আইনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে। এটি একদিকে যেমন সাধারণ নাগরিকদের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখবে, তেমনি মুসলিমসহ সব সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে।