প্রবাসের অন্যতম আদর্শিক এবং মডেল সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সভা গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ব্রুকলিনের পিএস ১৭৯ স্কুলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন পর্বে বিভক্ত সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ জসীম এবং কার্যকরি সদস্য জাহিদ মিন্টু। সাধারণ সভায় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাজী মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটি ও বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মিয়া।
সাধারণ সভার শুরুতে কোষাধ্যক্ষ মহিউদ্দীনসহ প্রবাসী নোয়াখালীবাসীর মধ্যে যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা এবং দ্বীনে আলোচনা করেন ব্রুকলিনের বেলাল মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আনসারুল করিম এবং কোরআন তেলওয়াত করেন মাওলানা আহমেদ করিম।
সাধারণ সভায় কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট এবং সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খোকন মোশাররফ, রামেশ চন্দ্র নাথ, উপদেষ্টা হাজী মমিনুল হক, সহ-সভাপতি তাজু মিয়া, সাবেক সভাপতি নজির ভান্ডারি, আবু সুফিয়ান, মোহাম্মদ নজরুল, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নাসের স্বপন, অডিট কমিটির সদস্য ইউছুফ এমডি আলী, আহসান উল্যাহ বাচ্চু, এ এস এম মাঈন উদ্দীন পিন্টু, রুবেল আলী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিক মুন্না, সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আবু নাসের, দাগনভূইয়া সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহমুদ, আশরাফুল হাসান, রেজাউল করিম, নূর কে চৌধুরী, পুলিশ অফিসার পল, কামাল উদ্দিন, আলাউদ্দীন জাহাঙ্গীর, সংগঠনের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ইব্রাহিম, দফতর সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মিরন, সহ সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ চৌধুরী। সাধারণ সভায় জাহিদ মিন্টু বাংলাদেশ সেমিট্রির বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নোয়াখালীবাসীর সমানে উপস্থাপন করেন এবং কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট পেশ করে সহ-অর্থ সম্পাদক জামাল উদ্দীন।
বাংলাদেশ সেমিট্রি এবং কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিশেষ স্থান পায় বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির আগামীর নির্বাচন নিয়ে। সাধারণ সভার প্রতিটি বক্তারাই সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টুর প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। যারা বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে তার বিরোধীতা করেছিলেন তারাও জাহিদ মিন্টুর প্রশংসা করেছেন। শুধু কী তাই! যারাই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন তারা সকলেই জাহিদ মিন্টুর ভূমিকা এবং সমাজ সেবার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন জাহিদ মিন্টু শুধু নোয়াখালীর নয় পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটির গর্ব। যে কারণে তারা জাহিদ মিন্টুকে আগামীতে নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি পদে নির্বাচনের আহ্বান জানান এবং তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সাধারণ সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পাস করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে ১. সোসাইটির কোন সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করলে তহবিল থেকে লাশের সৎকার বাবদ ৫ হাজার ডলারের স্থলে ৬ হাজার ডলার প্রদান করা হবে এবং দেশে-আমেরিকায় বাইরে মৃত্যুবরণ করলে ৩ হাজার ডলারের স্থালে ৩ হাজার ৫০০ ডলার প্রদান করা হবে। এটি ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর করা হবে। ২. অপ্রাপ্ত বয়স্করা শুধু লাইফ ফি জমা দিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করবেন। ৩. কোনো ব্যক্তি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকলে তাকে সদস্য পদ দেওয়া হবে না। ৪. কার্যকরি কমিটির মেয়াদকাল ৩ বছরের স্থলে ৪ বছর উন্নীত হবে, যা আগামী কমিটির মেয়াদকাল থেকে কার্যকর হবে। ৫. উপদেষ্টা পরিষদ ১ এপ্রিল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মেয়াদকাল ৪ বছর। ৬. ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য সংখ্যা ৭ জন থেকে ৯ জনে উন্নতি করা হলো। ৭. ট্রাস্টি বোর্ড ১ জুলাই থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তাদের মেয়াদ কাল ৪ বছর।
৫ সদস্যের অডিট কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমিতির মোট আয় ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৫ দশমিক ৩২ ডলার এবং ব্যয় ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯৫ ডলার। মোট উবৃদ্ধ ৯১ হাজার ৪৯৮ দশমিক ৩৭ ডলার। যার মধ্যে ওয়েকস্টার ব্যাংকে রয়েছে ৬৮ হাজার ৩৩৩ দশমিক ০৮ ডলার এবং নগদে রয়েছে ২৩ হাজার ১৬৫ দশমিক ২৯ ডলার। এ ছাড়া যারা বাংলাদেশ সেমিট্রি প্রজেক্টে কর্জে হাসানা দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় এবং আগামী ৩ বছরের মধ্যে তাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও অনুষ্ঠান সফল করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি দুই টার্ম প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আগামীতে আর নির্বাচন করতে চাই না। আমি চাই আপনারা জাহিদ মিন্টুকে নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ জসীম বলেন, আমি সব সময় আপনাদের পাশে এবং সঙ্গে রয়েছি। তবে পরিবারিক কারণে বাফেলো চলে যাওয়াতে আমি কমিটিতে আর থাকতে চাই না। আপনার যোগ্য লোকদের নিয়ে নির্বাচন করুন।
হাজী মফিজুর রহমান বলেন, এ সংগঠনে জাহিদ মিন্টুর কোনো বিকল্প নেই। তার মতো লোকই আমাদের প্রয়োজন। চোর-বাটপারদের নোয়াখালী সোসাইটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আব্দুর রব মিয়াও জাহিদ মিন্টু প্রশংসা করে এই সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান।
শাহ নাসের স্বপন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আব্দুল গাফ্ফার, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত ক্যাপ্টেন ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে বাংলাদেশে) মোখলেসুর রহমান, প্রায়ত নূরন্নবী কমান্ডার এবং কোষাধ্যক্ষ প্রয়াত মহিউদ্দিনকে।
ফখরুল আলম বলেন, আমি নোয়াখালীবাসী হিসেবে এই প্রবাসে গর্বিত। কারণ নোয়াখালীবাসী গর্বিত হওয়ার মতো কাজ করেছে। যে কারণে অন্যান্য স্টেটেও এই সংগঠনের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য অবশ্যই জাহিদ মিন্টুকে ধন্যবাদ জানাতে হয়।
জাহিদ মিন্টু বলেন, আমি যখন এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর দেখলাম, ২০১১ সালে এই সংগঠনের ফান্ড ছিল জিরো। ২০১৪ সালে এ সংগঠনের ফান্ড হয় ৩৪ হাজার। আর এখন মিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে চাই না, তবে নোয়াখালীবাসী যদি আমাকে কোনো দায়িত্ব দেয় আমি সেই দায়িত্ব গ্রহণ করবো। এছাড়াও তিনি বর্তমান সময়ে ডিপোর্টেশন বা গ্রেফতার নিয়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা না চালানো আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাউন্সিল ওম্যান শাহানা হানিফ প্রতি সপ্তহে আইন সহায়তা দিয়ে থাকেন নোয়াখালী সোসাইটির ভবনে। আপনাদের যে কোন প্রয়োজনে আপনারা আসতে পারেন। আবার নোয়াখালী সোসাইটির পক্ষ থেকেও আইন সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। কারো কোনো অসুবিধা হলে তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানান।