৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩২:২৫ অপরাহ্ন


মুসলিম সংগঠনের বিরুদ্ধে জাতিগত হুমকিতে পল নায়মান গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০২-২০২৫
মুসলিম সংগঠনের বিরুদ্ধে জাতিগত হুমকিতে পল নায়মান গ্রেফতার পল নায়মান


মিশিগানের মুসলিম অধিকার সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)-এর নির্বাহী পরিচালক ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে জাতিগত হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক প্রবীণ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম পল নায়মান, বয়স ৭৮ বছর এবং তিনি মিশিগানের ক্যান্টন শহরের বাসিন্দা। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি কেয়ার মিশিগানের নির্বাহী পরিচালক দাউদ ওয়ালিদ এবং সংস্থার অন্য সদস্যদের উদ্দেশ্যে একাধিক ইমেইল পাঠিয়েছেন, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হুমকিমূলক ও ঘৃণাবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। তদন্তকারীদের মতে, নায়মান তার ইমেইল বার্তাগুলোতে মুসলমানদের বিধ্বংসী বলে অভিহিত করেছেন এবং অন্তত একটি ইমেইলে ওয়ালিদকে সরাসরি হিংসাত্মক ও ঘৃণাবাচক ভাষায় আক্রমণ করেছেন। ন্যায়মানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে মিশিগানের প্লিমথ কাউন্টি ৩৫তম জেলা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তার জামিন ৫০ হাজার ডলার নির্ধারণ করেন। তার বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক জাতিগত হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে, যার প্রতিটির জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর কেয়ার মিশিগানের নির্বাহী পরিচালক দাউদ ওয়ালিদ বলেন, জাতিগত হুমকি কেবল একজন ব্যক্তি বা একটি সংস্থার বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি আমাদের বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের বিরুদ্ধে আঘাত। আমাদের সমাজে বৈচিত্র‍্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা রক্ষার জন্য আমরা এসব ঘৃণামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে চাই। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞ, যারা ঘৃণা ও ভয় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। ওয়ালিদ আরো জানান, এটি প্রথমবার নয়, যখন তাদের সংস্থা বা কর্মীরা এ ধরনের হুমকির শিকার হয়েছেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, ফ্লোরিডার এক ব্যক্তি সংস্থাটির অফিসে ছয়বার ফোন করে এবং তিনটি ভয়েস মেইলে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হুমকি দেন। পরে তিনি ফেডারেল অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।

এ ঘটনা মেট্রো ডেট্রয়েট অঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি জাতিগত বিদ্বেষমূলক অপরাধের একটি উদাহরণ মাত্র। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, ওয়ারেন শহরের এক ব্যক্তি রোজভিলের একটি প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গ গির্জার দেওয়ালে বর্ণবাদী গ্রাফিটি স্প্রে করেন এবং পরবর্তী সময়ে দোষী সাব্যস্ত হন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, ওয়াটারফোর্ড শহরের এক ব্যক্তি পন্টিয়াকের একটি গ্যাস স্টেশনে সন্ত্রাসী হুমকি দেন, যার ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ ঘটনার পর মিশিগানের মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। কেয়ার মিশিগানের পাশাপাশি স্থানীয় অধিকারকর্মী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতারা জাতিগত হুমকি ও ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে আরো কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

পল নায়মান বিরুদ্ধে আনা তিনটি পৃথক জাতিগত হুমকির অভিযোগের প্রতিটির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। মিশিগানের আইন অনুযায়ী, জাতিগত হুমকি হলো এমন অপরাধ যেখানে কোনো ব্যক্তি, বর্ণ-ধর্ম-জাতি বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে হুমকি দেয় বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। গত কয়েক বছরে মিশিগানে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পল নায়মান বিরুদ্ধে ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং তাকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় আদালতে হাজির হতে হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলেছে, তারা ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ ধরনের ঘটনা রোধে আরো সচেতনতা ও কঠোরতা প্রয়োজন।

এ মামলাটি প্রমাণ করে যে, ঘৃণা এবং জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম সম্প্রদায় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেয়ার মিশিগান এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। মিশিগানে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আইনি প্রতিকার নিশ্চিত করা, সামাজিক সংহতি বজায় রাখা এবং শান্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়া আজকের সময়ে অত্যন্ত জরুরি।

শেয়ার করুন