অনেক বিচ্যুতি এবং বিতর্ক সাথী করে টি২০ টুর্নামেন্টের ১১ম আসর সফল ভাবে সমাপ্ত করার জন্য সাধুবাদ পেতে পারে বিসিবি। এখন পর্যাপ্ত সময় আছে বিচার বিবেচনা করার, কেননা কৌশলগত ভুলের কারণে বিতর্ক হলো? বিতর্ক কেলেঙ্কারির জন্য কার দায় কতটুকু? এখন কিন্তু সময় বাংলাদেশের আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি মিশনের। মূল্যায়ন করার সময় এখন বিপিএল ২০২৫ থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রপির জন্য কতটুকু অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের? বাংলাদেশ যদি গ্রুপ পর্যায় পেরিয়ে নক আউট রাউন্ডে যেতে পাওে, সেটি হবে সাফল্য। বলা বাহুল্য হবে অনেক চ্যালেঞ্জিং।
স্বীকার করতেই হবে এবারের বিপিএল ২০২৫ বিশ্বমানের বিদেশি খেলোয়াড় খুব একটা আসেনি। সাধারণ মানের বিদেশি খেলোয়াড়দের ভিড়ে বাংলাদেশের স্থানীয় খেলোয়াড়রা ব্যাটিং-বোলিং ডমিনেট করেছে। টি২০ এবং ওডিআই দুটি সাদা বলের ক্রিকেট হলেও খেলার ধরন, মেজাজ কিন্তু ভিন্ন প্রকৃতির। মাত্র ৮টি দল কিন্তু দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলবে। বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচে টুর্নামেন্ট ফেভারিট ভারতের সঙ্গে দুবাইয়ে খেলতে হবে। আর দুটি দল হলো স্বাগতিক পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড। ভারত এখন দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ খেলছে। পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় ওডিআই সিরিজ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ মূলত প্রস্তুতি ছাড়াই খেলতে যাবে বলা যায়। আশা করি টুর্নামেন্ট শেষে এটি অজুহাত হিসেবে দেখানো হবে না।
একটা কথা বলতে হয়। বিসিবি কিন্তু তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহকে সম্পৃক্ত করে একটি শক্তিশালী স্কোয়াড গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্রিকেটকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা সঠিক হয় নি। যাদের নেওয়া হয়েছে স্কোয়াডে তাদের নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
বিপিএলে ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রামে উইকেটগুলো ছিল অনেক উন্নত মানের। ব্যাটসম্যান বলার সবার জন্যই কিছু ছিল। সেই কারণে বিসিবি গ্রাউন্ডস কমিটিকে প্রশংসা করবো। বাংলাদেশের মূল দুর্বলতা ব্যাটিং এবং আরো সক্ষিপ্ত করে বললে টপ অর্ডার ব্যাটিং। দারুন ফর্মে থাকা সৌম্য সরকার হাতের আঘাত থেকে সুস্থ হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলে আবার আঘাত পেয়েছে। জানিনা সৌম্য কতটা ম্যাচ ফিট এখন। বাংলাদেশের ভালো ব্যাটিং অনেকটাই নির্ভর করবে সৌম্যর সক্রিয় থাকার ওপর। তানজিদ তামিম এবং পারভেজ ইমন তুখোড় ফর্মে আছে। তবে দুজনের দুর্বলতা হলো ক্রমাগত আক্রমণাত্মক স্ট্রাইক খেলার পাশাপাশি স্ট্রাইক রোটেট করে ইনিংস গড়ে তোলার সীমাবদ্ধতা। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল শান্ত দলের কোবিনেশনের কারণে ফরচুন বরিশাল দলে খেলার খুব একটা সুযোগ পায়নি। আমি সুযোগ থাকলে তুখোড় ফর্মে থাকা শেখ নাঈমকে দলে স্থান দেওয়ার সুপারিশ করতাম। লিটন কিন্তু দুই একটি ইনিংসে জলে উঠলেও ধারাবাহিক ছিল না। টপ অর্ডারে বরং মেহেদী মিরাজ এবং তৌহিদ হৃদয় ভালো খেলেছে। মাহমুদুল্লাহ মাঝেমধ্যে লেট মিডল অর্ডারে ভালো খেললেও মুশফিকের খেলায় ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। লেট মিডল অর্ডারে জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন ভালো খেলেছে। বাংলাদেশকে কিন্তু ভারত, পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ২৮০-৩০০ রান করতে হবে। সেই বিচারে টপ অর্ডার এবং মিডল অর্ডারকে সফল হতে হবে। বিশেষ করে প্রথম খেলায় বুমরা, সামিকে ভালোমতো খেলতে হবে। পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমি লড়াই আশা করবো। সেখানেও ব্যাটিং ভালো করতে হবে।
বোলারদের মধ্যে তাসকিন তুখোড় ফর্মে আছে। ভালো বোলিং করেছে মুস্তাফিজ। তানজিদ তামীম, নাহিদ রানা এখনো শিখছে। স্পিন আক্রমণে মেহেদী মিরাজ এবং রিশাদ হোসেনের ওপর ভরসা করা যেতেই পারে। তবে বাংলাদেশের সাফল্য নির্ভর করবে ব্যাটিং দৃঢ়তার ওপর। দলটি ভালো ফিল্ডিং করছে। নিয়মিত ২৮০-৩০০ রান করে প্রকল্পিত বোলিং ফিল্ডিং করতে পারলে বাংলাদেশ কিছু অর্জন করবে। ভারতের সঙ্গে জয়ের সম্ভাবনা সীমিত হলেও পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জয়ী হয়ে সেমিফাইনাল খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে যদি বাংলাদেশ ভড়কে না যায়।
বিসিবি তৎপর হলেই কিন্তু একটি দুটি প্রস্তুতি মূলক খেলা খেলতে পারতো বিপিএল খেলতে আগত বিদেশিদের একটি দল গঠন করে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে খেলার ব্যবস্থা করে। সেই দূরদর্শিতা বা বিচক্ষণতা কেন নেই বাংলাদেশের?
বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচে ভারতকে মোকাবিলা করতে হবে। বহুল আলোচিত বর্ডার গাভাস্কার সিরিজে ১-৩ হেরে আসা ভারত ক্রিকেট দল কিন্তু মরিয়া হয়ে থাকবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ঘুরে দাঁড়াতে। টুর্নামেন্টের আগে ভারত দেশে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলবে। বাংলাদেশ কিন্তু আগেও বিশ্ব পর্যায়ে ভারতকে হারিয়ে ওদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।
সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা সাজিয়ে খেললে গ্রুপ পর্যায়ে বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডস অন্তত দুটি দলকে হারানোর যোগ্যতা রাখে। কিন্তু বাংলাদেশকে অবশ্যই সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহকে একসঙ্গে শেষবারের মতো দেশের হয়ে গর্জে ওঠার সুযোগ দিতে হবে।