১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫৫:৫৩ পূর্বাহ্ন


জ্বালানি সংস্কারে কচ্ছপ গতি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১০-২০২৪
জ্বালানি সংস্কারে কচ্ছপ গতি বিদ্যুৎকেন্দ্র


একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে এটি পর্যালোচনামূলক সমীক্ষার ওপর অংশীজনদের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত ওয়ার্কশপ করার জন্য দেশে এসেছিলাম। একটি সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু জ্বালানি-বিদ্যুৎ নিরাপত্তা বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপকদের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করার ইচ্ছা ছিল। গত দেড় দশক ধরেই নিয়মিত নানা মাধ্যমে পরামর্শ এবং সুপারিশ করেছি। অদূরদর্শী জ্বালানি-বিদ্যুৎ সেক্টরের কর্তাব্যক্তিরা দেশের জ্বালানিসম্পদ উন্নয়ন উপেক্ষা করে কিছু ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় জ্বালানি আমদানির পথে হেঁটে দেশকে জ্বালানি সংকটে ফেলেছে। নিবিড়ভাবে মাঠ পর্যায়ে সম্পৃক্ত হয়ে দেখলাম জ্বালানি সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় এখনো পূর্ববর্তী সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকায় গত দুই মাস সময়ে সংস্কার গতি পায়নি।

তীব্র জ্বালানি ও গ্যাস সংকট বজায় আছে উপরন্তু ঘনীভূত হচ্ছে। ২০০০-২১০০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি আসছে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। এক বছরের মধ্যে বিবিয়ানায় গ্যাস উৎপাদন দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এলএনজি আমদানি ১ হাজার ১০০ ঘনফুট থেকে বাড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না. পেট্রোবাংলা-বাপেক্স ৪৮ গ্যাসকূপ বা ১০০ গ্যাসকূপ খননের অতিবিলাসী যে পরিকল্পনা নিয়েছে সেখান থেকে ৫০ শতাংশ সফলতা এলেও আসতে পারে। ইতিহাস কিন্তু সফলতার অনুকূলে কথা বলছে না। গ্যাস সরবরাহ সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিতাস বিতরণ এলাকায় সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে গ্যাস সরবরাহ সংকট দেখেছি।

এহেন অবস্থায় পেট্রোবাংলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ববাদী ভূমিকার কারণে তিতাস গ্যাস, জিটিসিএলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। দুঃখের বিষয় গ্যাস সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় আধুনিক মিটারিং, রেগুলেশন বিষয়ে পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর মতের অমিল সংকটের সৃষ্টি করেছে। আমার দেশের গ্যাস সরবরাহ অবকাঠামো এবং পরিচালনা বিষয়ে ধারণা আছে. দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এরূপে এবং উত্তর আমেরিকার জ্বালানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সম্মক ধারণা থাকায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ করেছি। সিদ্ধান্ত ছিল সকল গ্যাসকোম্পানি এবং পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার। কেন হলো না জানি না। আমি জ্বালানি উপদেষ্টা এবং সম্ভব হলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংক্ষিপ্ত সুপারিশ জমা দেবো।

বিদ্যমান অবস্থায় পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করা না হলে সংকট ঘনীভূত হতেই থাকবে। ২০২৫-২০২৬ শুষ্ক এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

ফিরে যাবো প্রবাসে। সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ গ্রহণে অনীহা দেখলাম। সরকার অবিলম্বে পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিপদে পড়বে। জ্বালানি সংকট বজায় থাকলে শিল্পখাতে ধস নামবে।

শেয়ার করুন