৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৭:৩২ অপরাহ্ন


সিনেটর চাক শুমার বললেন
বাংলাদেশে মার্কিন সাহায্য বন্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৫
বাংলাদেশে মার্কিন সাহায্য বন্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর সিনেট ডেমোক্র্যাটিক লিডার সিনেটর চার্লস শুমার


মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাটিক লিডার ও নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শুমার ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশে প্রায় সব মার্কিন বিদেশি সাহায্য বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে ’স্বল্পদৃষ্টির ভুল, দূরদৃষ্টির অভাব’ বলে মন্তব্য করেছেন। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মানুষ, আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। তিনি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা বন্ধ থাকলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং এতে চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সুযোগ গ্রহণ করবে। সিনেটর চাক শুমার গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে আমাদের সাহায্য বন্ধ থাকলে এর চরম মূল্য দিতে হবে, যা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-কৌশলগত স্বার্থের জন্যও ক্ষতিকর হবে। তিনি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই তহবিল স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সিনেটর শুমার বলেন, বাংলাদেশের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখতে হবে। এই সাহায্য অবিলম্বে মুক্ত করা উচিত।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএস এইড) বাংলাদেশে ৩৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য প্রদান করেছিল, যার মধ্যে মানবিক সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ প্রস্তুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন হঠাৎ করেই এই তহবিল স্থগিত করে দেয়, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষা খাতকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ইউএস এইড-এর স্থগিত অর্থায়নের মধ্যে রয়েছে: ১৬০.৫ মিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা, ৪৮.৬৯ মিলিয়ন ডলার স্বাস্থ্য খাত, ৬২.২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ২৭.৬ মিলিয়ন ডলার শিক্ষা ও সামাজিক সেবা, ৮৫.১১ হাজার ডলার পরিবেশ সুরক্ষা সহায়তা।

সিনেটর শুমার বলেন, বাংলাদেশে ইউ এস এইড-এর কর্মসূচি শুধু মানবিক সহায়তা নয়, বরং এটি আমাদের বৈদেশিক নীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের সাহায্য বন্ধ থাকলে, চীন ও রাশিয়া দ্রুত প্রভাব বিস্তার করবে, যা আমাদের আন্তর্জাতিক ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেবে। বাংলাদেশের বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইউএসএইড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা এখন হুমকির মুখে। ইউনিসেফের মাধ্যমে স্কুলগুলোর জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির প্রকল্পও এই অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। ইউএসএইড-এর তহবিলের মাধ্যমে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ৪৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছিল, যা বাংলাদেশে জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং স্কুলের শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহে ব্যবহৃত হত। এছাড়াও, ওয়ার্ল্ড ভিশন এবং ইউনিসেফ-এর মতো সংস্থাগুলো পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য, এবং জলবায়ু সহনশীল শিক্ষাকেন্দ্র তৈরিতে এই অর্থ ব্যবহার করত।

বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটির প্রতিবাদ

নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতারা ইউএসএইড তহবিল অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশের জন্য ইউএস এইড-এর এই সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বন্ধ করা উচিত নয়। আমরা সিনেটর শুমারের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ। জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলাইমান বলেন, এই সিদ্ধান্ত খাদ্য সংকট, চাকরির ক্ষতি এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর স্থবিরতার দিকে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আমিন মেহেদি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র অর্থায়ন নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষার অংশ।

বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের (বিএসিসি) সভাপতি মোহাম্মদ এন মুজুমদার বলেন, আমি আন্তরিকভাবে এই অর্থায়ন স্থগিতের নিন্দা জানাই এবং এর তীব্র বিরোধিতা করি, কারণ ইউএসএইড-এর তহবিল কাটছাঁট হলে বাংলাদেশে অসংখ্য শিশু ও বয়স্ক মানুষের জীবন বিপন্ন হবে, যারা খাদ্য ও পানির জন্য এই সহায়তার ওপর নির্ভর করে। বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা ঘাটতি এবং অবকাঠামোগত সংকট এমনিতেই দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই তহবিল বন্ধ হলে এসব সমস্যা আরও গভীর হবে, যা বাংলাদেশের জন্য এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।

বাংলাদেশে ইউএসএইড-এর অর্থায়ন বন্ধ হলে ৫০,০০০ এরও বেশি তরুণ দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও সম্ভাব্য চাকরির সুযোগ হারাবে। এই প্রশিক্ষিত কর্মীরা এমন সব পণ্য ও উপকরণ তৈরি করে, যেগুলোর ওপর আমেরিকান কোম্পানি ও ভোক্তারা নির্ভর করে। এই সহায়তা বন্ধ হলে কেবল বাংলাদেশের তরুণদের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সাথেও এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে। ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন সহায়তা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত শুধু মানবিক সংকটই নয়, বরং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করছে। সিনেটর শুমার ও বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করে যে, এই সহায়তা পুনরুদ্ধার করা কেবল বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব ও কৌশলগত স্বার্থের জন্যও জরুরি। মানবিক সহায়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে এই তহবিলের অবদান অস্বীকার করা অসম্ভব। তাই, অবিলম্বে ইউ এস এইড-এর অর্থায়ন পুনরায় চালু করা উভয় দেশের জন্যই একটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার মূল্যবোধ ও বৈশ্বিক দায়িত্বের প্রতি অটল থাকতে পারে।

শেয়ার করুন