৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন


কারা হেফাজতে ১৪ জনের মৃত্যু ফেব্রুয়ারিতে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৫
কারা হেফাজতে ১৪ জনের মৃত্যু ফেব্রুয়ারিতে


চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে কারা হেফাজতে একজন নারী বন্দিসহ মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জানুয়ারিতে এর সংখ্যা ছিল ৮ জন। আর চলতি মাসে ৬ জন কয়েদি ও একজন নারীসহ ৮ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি, ২০২৫’এ এসব জানা গেছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। 

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬ জন, কাসিমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, গাজীপুর জেলা কারাগারে ১ জন, নওগাঁ জেলা কারাগারে ১ জন, রাজবাড়ি জেলা কারাগারে ১ জন নারী, খুলনা জেলা কারাগারে ১ জন ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রান্না করার সময় গরম পানিতে পড়ে এক বন্দির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিনতলা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মেহেদী হাসান (১৭) নামে এক কিশোর গুরুতর আহত হন। যা উদ্বেগজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।

২৫ ফেব্রুয়ারি যশোর শহরতলীর পুলেরহাট এলাকায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে দুপুর আড়াইটার দিকে মেহেদী হাসান (১৭) নামে এক কিশোর যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিনতলা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার হাসিব মোহাম্মদ আল হাসান জানান, মেহেদীর পায়ের দুই জায়গায় ফ্রাকচার হয়েছে, মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত তার অবস্থা সম্পর্কে বলা যাবে না। যশোর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) আবুবক্কার সিদ্দিকী বলেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। বিকেলে পুরস্কার বিতরণ হয়েছে। প্রতিযোগিতা শেষে সুযোগ বুঝে মেহেদী পালানোর চেষ্টা করে। এমএসএফ মনে করে, কিশোর যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের মতো নিরাপত্তা বেষ্টনী একটি সংশোধনী কেন্দ্র থেকে কিভাবে একটি শিশু পালিয়ে যেতে চায় তার একটি নিবিড় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এমএসএফ আরো মনে করে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, বন্দিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।

এদিকে এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী বলা হয় যে, ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল দেশব্যাপি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধ যেভাবে সংঘটিত হচ্ছে তাতে নাগরিকে জীবনেকে উদ্বিগ্ন ও আতংকগ্রস্ত করে তুলছে। এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজি, মহাসড়কে প্রকাশ্যে দম্পতিকে কোপানো, নিজ বাসার সামনে ছিনতাইকারীদের গুলি খাওয়ার ঘটনা, চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল কর্তৃক যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাওয়া, বাসের মধ্যে নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামগ্রিক অবস্থার অবনতি বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। এতদসত্ত্বেও বাস্তবে চলতি মাসে উদ্ভুত পরিস্থিতির কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সময়ে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বন্ধ হয়নি। 

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড তেমন না থাকলেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে অন্তদ্বন্দ্ব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। সাবেক সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ যে কোনো ব্যক্তিকে আন্দোলন বিরোধী বলে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। 

অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে ঢালাও ভাবে নতুন বা পুরানো মামলার আসামী দেখিয়ে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা যেমন; আত্মহত্যা, হত্যার ধারাবাহিকতা রয়েই গেছে, শিশুদের প্রতি শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। 

কারা- হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা বন্ধ হয়নি, উপরন্ত তাদের জমিজমা দখলের চেষ্টা হচ্ছে। সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা ঘটছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে, গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনাও বন্ধ করা যায়নি। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সামগ্রিক বিবেচনায় এমএসএফ মনে করে, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনি পরিবেশ উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সব ধরনের সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

শেয়ার করুন