২৬ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ০৯:১১:৫৯ পূর্বাহ্ন


গুয়ানতানামো বেতে অভিবাসী স্থানান্তরের আদেশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৫
গুয়ানতানামো বেতে অভিবাসী স্থানান্তরের আদেশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা গুয়ানতানামো বে কারাগার


ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের গুয়ানতানামো বেতে স্থানান্তরের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিসি ফেডারেল কোর্টে মামলা করেছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ), সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ডিসি এই মামলাটি দায়ের করেছে। গুয়ানতানামো বে দীর্ঘদিন ধরে গোপন বন্দিত্ব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দিত। আইনজীবীরা বলছেন, এই আদেশের মাধ্যমে মার্কিন সরকার আইনের ঊর্ধ্বে থেকে নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা নিতে চায়।

এই মামলায় ১০ জন অভিবাসীকে গুয়ানতানামোতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। এসিএলইউর ইমিগ্র্যান্টস রাইটস প্রজেক্টের উপপরিচালক লি গেলার্ন্ট বলেন, অভিবাসীদের নির্যাতনমূলক বন্দিশিবিরে পাঠানো অবৈধ, নজিরবিহীন এবং অযৌক্তিক। এটি মূলত রাজনৈতিক নাটক ছাড়া আর কিছু নয়। সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের আইনি পরিচালক বাহের আজমি বলেন, গুয়ানতানামো কেবলমাত্র আইনের শাসনকে উপেক্ষা করার একটি প্রতীক। এটি আরেকটি অবৈধ ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আদালতকে অবশ্যই এটি প্রতিহত করতে হবে।

এস্পিনোজা এসকালোনা বনাম নোম মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে, যেখানে ১০ জন অনাগরিক পুরুষকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আটক কেন্দ্র থেকে গুয়ানতানামো বে নৌঘাঁটিতে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়। এই ব্যক্তিরা ভেনেজুয়েলা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের নাগরিক, যারা এই স্থানান্তরের কারণে চরম নির্যাতনের আশঙ্কা করছেন। আইনজীবীরা দাবি করছেন যে, এই স্থানান্তর অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের লঙ্ঘন, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যদি স্থানান্তরের দেশ বন্দির নিজ দেশের বাইরে হয়, তবে সেই দেশকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে হবে- যা কিউবা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই গুয়ানতানামো বেতে স্থানান্তর আইনত অবৈধ এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আদালতে জরুরি স্থগিতাদেশের আবেদন জানানো হয়েছে।

মামলার আইনজীবীরা, যাদের মধ্যে আছেন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস এবং ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্টের সদস্যরা দাবি করছেন যে, এই স্থানান্তরগুলো স্বেচ্ছাচারী, প্রতিহিংসামূলক এবং আইনত ভিত্তিহীন। তারা বলছেন, গুয়ানতানামোর ইতিহাস নৃশংস নির্যাতনের সাক্ষ্য বহন করে: আগের বন্দিরা বছরের পর বছর জানালাবিহীন কক্ষে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন, অনবরত শৃঙ্খলিত রাখা হতো এবং কখনোই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না। নিরাপত্তারক্ষীরা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন, কখনো খাবার পানীয় আটকে রাখা হতো, কখনো বন্দিদের ‘শাস্তির চেয়ার’-এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেঁধে রাখা হতো। এই অমানবিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তির কোনো আশার আলো ছিল না, যার ফলে অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।

প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, এই নীতি শুধু আইনবহির্ভূতই নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে ভীতি ছড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম বন্দিদের সবচেয়ে খারাপ অপরাধী বলে অভিহিত করেছেন, যদিও অনেকের কোনো ফৌজদারি রেকর্ড নেই এবং তাঁরা সীমান্তে প্রবেশের সময়ই আটক হয়েছিলেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমরা চাই না তারা ফিরে আসুক, তাই গুয়ানতানামো পাঠাচ্ছি... ওখান থেকে বের হওয়া কঠিন। এই নীতি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, প্রশাসন অভিবাসীদের প্রতি মানবিক আচরণের বদলে তাদের নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

মামলাটি শুধু এই নির্দিষ্ট স্থানান্তর রোধের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতে কোনো প্রশাসন যেন সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে মানুষকে বিদেশি বন্দিশিবিরে পাঠাতে না পারে, সেটিও নিশ্চিত করতে চায়। এসিএলইউর সিনিয়র অ্যাটর্নি ইউনিস চো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথমবার অভিবাসনসংক্রান্ত বেসামরিক আটক ব্যক্তিদের গুয়ানতানামোতে পাঠানো হচ্ছে। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।

ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্টের স্টাফ অ্যাটর্নি কিম্বারলি গ্রানো জানান, গুয়ানতানামো বহু বছর ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেন্দ্রস্থল। ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের প্রতি নিষ্ঠুরতার নতুন রূপ দেখাচ্ছে, যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ডিসির সিনিয়র আইনজীবী আর্থার স্পিটজার বলেন, আইন অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বিদেশে কাউকে আটকের কোনো অধিকার নেই। অথচ ট্রাম্প প্রশাসন এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে, যা একেবারেই অবৈধ। এই মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে এবং মানবাধিকার কর্মীরা আশা করছেন, আদালত এই আদেশকে বাতিল ঘোষণা করবে।

শেয়ার করুন