আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অব ফ্লোরিডা, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ইমিগ্র্যান্টস রাইটস প্রজেক্ট এবং আমেরিকানস ফর ইমিগ্র্যান্ট জাস্টিস ফ্লোরিডার নতুন কঠোর অ্যান্টি-ইমিগ্র্যান্ট আইন, সিনেট বিল ৪সির বিরুদ্ধে গত ৪ এপ্রিল ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি ফ্লোরিডার সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা হয়েছে। বাদীপক্ষের মধ্যে রয়েছে ফার্মওয়ার্কার অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা, ফ্লোরিডা ইমিগ্র্যান্ট কোয়ালিশন এবং কয়েকজন ব্যক্তি, যারা দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোরিডায় বসবাস করছেন এবং যাদের ফেডারেল ইমিগ্রেশন আবেদন বিচারাধীন রয়েছে এবং অনেকেই মার্কিন নাগরিক পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল। সিনেট বিল ৪সি, যা সম্প্রতি ফ্লোরিডায় পাস হয়েছে, একটি বিতর্কিত এবং কঠোর অ্যান্টি-ইমিগ্র্যান্ট আইন। এ আইনের অধীনে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী অভিবাসীদের যদি অবৈধভাবে প্রবেশ বা পুনরায় প্রবেশ করতে দেখা যায়, তবে তাদের বাধ্যতামূলক কারাদণ্ড দেওয়া হবে, এমনকি তাদের ফেডারেল ইমিগ্রেশন আবেদন বিচারাধীন থাকলেও। গত ৭ এপ্রিল সিনেট বিল ৪সির প্রয়োগে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ফেডারেল আদালত একটি আদেশ জারি করেছে। এই আদেশটি আইনটির কার্যকরিতা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আইনের প্রয়োগ না করা যায় এবং তাদের মানবাধিকার রক্ষা করা যায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সিনেট বিল ৪সি আইনটি রাজ্য পুলিশকে জোর করে জটিল ফেডারেল ইমিগ্রেশন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে, এমন ব্যক্তিদের আটক করছে যারা সমাজের কোনো হুমকি নন, এবং এমন মানুষদের অপরাধী বানাচ্ছে যারা ভবিষ্যতে অ্যাসাইলাম, ভিসা বা স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা পেতে পারেন। এই আইনে মানবিক সুরক্ষা প্রার্থী বা অভিবাসন সুরক্ষার জন্য আবেদনকারীদের জন্য কোনো ব্যতিক্রম রাখা হয়নি। এ আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থী, কারণ ইমিগ্রেশন নীতি এবং প্রয়োগ একান্তভাবে ফেডারেল সরকারের অধিকারভুক্ত। তবে, সিনেট বিল ৪সি ফ্লোরিডা রাজ্যকে নিজে ইমিগ্রেশন আইন ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগ করার অনুমতি দেয়, যার ফলে রাজ্য ও স্থানীয় পুলিশকে এমন ইমিগ্রেশন বিষয়ক ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, যার জন্য তাদের কোনো প্রশিক্ষণ বা সাংবিধানিক বৈধতা নেই।
এই আইনের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এটি ইমিগ্রেশন আবেদনকারীদের জন্য কোনো ব্যতিক্রম রাখে না। যারা অ্যাসাইলাম, ইউ ভিসা, পারিবারিক পুনর্মিলন বা অন্যান্য অভিবাসন সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন, তাদেরও এই আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা হতে পারে, এমনকি যারা মানবিক সুরক্ষার আবেদন করেছেন, তাদেরও আইনের রেহাই নেই। এ আইনটি কৃষি ও মৌসুমি শ্রমিকদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কারণ তারা প্রায়ই ফ্লোরিডা এবং অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে যাতায়াত করে। এর ফলে ফ্লোরিডার কৃষি ও নির্মাণখাতে শ্রমিক সংকট, উৎপাদন ব্যাঘাত এবং আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো এই আইনটিকে অসাংবিধানিক, নিষ্ঠুর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযুক্ত করেছে। এএসএলইউ অব ফ্লোরিডা, ফ্লোরিডা ইমিগ্র্যান্ট কোয়ালিশন এবং ফার্মওয়ার্কার অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডাসহ একাধিক সংগঠন সিনেট বিল ৪সির বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় তারা উল্লেখ করেছে যে, এ আইনটি পরিবারের একত্রীকরণে বাধা সৃষ্টি করছে, দীর্ঘদিনের বৈধ বাসিন্দাদের অপরাধী বানাচ্ছে এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
সার্বিকভাবে সিনেট বিল ৪সি আইনটি ফ্লোরিডায় রাজ্যচালিত ইমিগ্রেশন পুলিশিং শুরু করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূলভিত্তি-ফেডারেল কর্তৃত্ব, নাগরিক অধিকার এবং মানবিক ন্যায়ের পরিপন্থী। এই আইনটির বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ এবং অভিবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
অ্যামেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অব ফ্লোরিডার নির্বাহী পরিচালক বাকারদি জ্যাকসন বলেছেন, ‘সিনেট বিল ৪সি শুধু অসাংবিধানিক নয়, এটি নিষ্ঠুর ও বিপজ্জনক। এই আইন ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা হরণ করে রাজ্য পুলিশদের হাতে তুলে দিচ্ছে, যাদের ইমিগ্রেশন বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। এটি পরিবার বিচ্ছিন্ন করবে এবং তাদের আটকাবে যারা এখানে থাকার পুরোপুরি আইনগত অধিকার রাখেন। এ আইনটি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ গভর্নর রন ডি স্যান্টিস স্বাক্ষর করার পর থেকে কার্যকর হয়েছে, এবং এতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী কাউকে অবৈধ প্রবেশ বা পুনরায় অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে বাধ্যতামূলক কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে, এমনকি সেই ব্যক্তির বৈধ ইমিগ্রেশন আবেদন বিচারাধীন থাকলেও।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ইমিগ্র্যান্টস রাইটস প্রজেক্টের অ্যাটর্নি হান্না স্টেইনবার্গ বলেন, ফ্লোরিডা ইতিমধ্যেই পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশী এবং কমিউনিটির মানুষদের গ্রেফতার ও অভিযুক্ত করা শুরু করেছে। এই আইন প্রয়োগ অব্যাহত থাকলে ব্যাপক ধ্বংস ডেকে আনবে-আমরা চাই আদালত অবিলম্বে এই আইনপ্রয়োগ বন্ধ করুক। আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুপ্রিমেসি ক্লজ এবং কমার্স ক্লজের স্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ এতে রাজ্য সরকার ফেডারেল অভিবাসন আইনের উপর অগ্রাধিকার দাবি করছে, যা পূর্বে টেক্সাস, আইওয়া এবং ওকলাহোমার অনুরূপ আইনগুলো আদালত বাতিল করেছে।
বাদীপক্ষের অ্যাটর্নি অ্যামি গডশল জানান, আমাদের মামলার মধ্যে রয়েছেন এক মা, যিনি অপরাধের শিকার হয়ে ইউ ভিসার জন্য আবেদন করেছেন; আরেকজন মা, যিনি তার প্রতিবন্ধী শিশুর দেখাশোনা করেন; এবং কয়েকজন কৃষিশ্রমিক, যারা ফ্লোরিডা ও অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে যাতায়াত করেন খাদ্য উৎপাদনে কাজ করতে। তিনি বলেন, এই আইন শুধু অসাংবিধানিক নয়- এটি আমাদের সমাজের দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
এখন আদালতের কাছে মামলাটির মাধ্যমে আবেদন জানানো হয়েছে, যেন এই আইন অবিলম্বে স্থগিত করা হয় এবং এটি কার্যকর হতে না পারে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আইনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে এবং বলেছে- এই যুদ্ধ শুধু অভিবাসীদের নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, নাগরিক অধিকার এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তির ওপর একটি সরাসরি আক্রমণ।