যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আলফারেটা শহরের তিনজন মুসলিম কলেজ ছাত্রীকে ঈদের দিন প্রকাশ্যে হেনস্তার অভিযোগে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিনের প্রাক্তন স্বামী পেরি গ্রিন ৭৫ হাজার ডলারে মামলা মীমাংসা করেছেন। এই ঘটনাটি ঘটে, গত মার্চ মাসে ঈদুল ফিতরের দিন, যখন ওই তিন মুসলিম নারী হিজাব পরিহিত অবস্থায় আলফারেটার অ্যাভালন শপিং সেন্টারের পার্কিং গ্যারেজে নামাজ আদায় করছিলেন। তখন একটি টেসলা সাইবার ট্রাকে চড়ে থাকা পেরি গ্রিন নামাজরত নারীদের উদ্দেশ্যে বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করেন এবং বলেন, তোমরা তোমাদের দেশে ফিরে যাও। ঘটনাটি একজন একটি মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয় এবং দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম নেয়।
ঘটনার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কেয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ভুক্তভোগী নারীদের আইনজীবী আলি আওয়াদ জানান, ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পেরি গ্রিন তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে যোগাযোগ করেন এবং এক পর্যায়ে সরাসরি ক্ষমা প্রার্থনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি পরে জনস ক্রিক শহরের একটি মসজিদে উপস্থিত হয়ে ১১ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের আগে তিন নারীকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চান এবং একটি লিখিত ও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেন। পেরি গ্রিন বলেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি চাই না আমার মতো কেউ এই ধরনের আচরণ করে। আমি বুঝেছি আমার কাজ ভুল ছিল এবং আমি চাই তারা আমাকে ক্ষমা করুক। ভুক্তভোগীরা জানান, তারা পেরি গ্রিনের ক্ষমা গ্রহণ করেছেন এবং তার দেওয়া ৭৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় মসজিদে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিন মুসলিম নারীদের একজন নেসরিন বলেন, আমরা ঘৃণার বদলে শান্তি ও সহনশীলতা বেছে নিয়েছি। ইসলাম আমাদের শেখায়, যারা ভুল স্বীকার করে, তাদের ক্ষমা করতে হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি, আমাদের প্রতি যারা বিদ্বেষ পোষণ করতো, তারাও একদিন আমাদের সমাজের সমান অংশ হিসেবে মেনে নেবে। এই ঘটনা ইসলামী মূল্যবোধ, বিশেষ করে ক্ষমাশীলতা ও সহানুভূতির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
কেয়ার জর্জিয়ার নির্বাহী পরিচালক আজকা মাহমুদ জানান, গাজায় চলমান মানবিক সংকটের পর জর্জিয়ায় ইসলামোফোবিক ঘটনার হার ২৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, মুসলিম নারীরা এখনো কী পরিমাণ বৈষম্য ও ভয়ভীতি মোকাবিলা করছেন। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পেরি গ্রিনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনবে না। আলফারেটা পুলিশ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, আমাদের সমাজে সব ধরনের বাক্্স্বাধীনতা, এমনকি তা আপত্তিকর হলেও সংরক্ষিত। এই মন্তব্য পুলিশের পক্ষের স্বাধীন মতপ্রকাশকে নির্দেশ করলেও অনেক নাগরিক এটিকে মুসলিম নারীদের প্রতি অবিচার হিসেবেই দেখছেন। অন্যদিকে আইনজীবী আলি আওয়াদ বলেন, তারা এই ঘটনার মীমাংসায় শান্তি ও শিক্ষা প্রচারের পথ বেছে নিয়েছেন। আমরা মানুষকে নিচে নামাতে চাই না, বরং চাই সমাজে বোঝাপড়া ও সহমর্মিতা বাড়ুক। এই ঘটনা যেন অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে থাকে, এইটাই আমাদের উদ্দেশ্য।
এ ঘটনা শুধু একটি হেনস্তার মামলায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমেরিকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও সামাজিক সহনশীলতার মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব এবং প্রাসঙ্গিক নীতির ওপর গভীর আলো ফেলেছে। পেরি গ্রিনের ক্ষমা এবং মুসলিম নারীদের সদ্ব্যবহার একে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় মুহূর্তে রূপ দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির অনুপ্রেরণা হতে পারে।