০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৫:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


‘সিঙ্গাপুর বৈঠক’ নিয়ে রাজনীতিতে গুঞ্জন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৪
‘সিঙ্গাপুর বৈঠক’ নিয়ে রাজনীতিতে গুঞ্জন


প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ সহকারী এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র পরিচালক আইলিন লুবাচার, দাতব্য সংস্থা ইউএসএআইডি’র এশিয়া বিষয়ক সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আকতারের বাংলাদেশ সফর করে যাবার পর থেকেই রাজনীতির মাঠে রটছে বিভিন্ন রটনা। এক এক করে সকল বিরোধী দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ছেড়ে দেয়া (সর্বশেষ- ভারতে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করে দেশে ফিরেই ২১ মাসের কারাদণ্ড আদেশে জামিন নাকচ করে হুইল চেয়ারে বসা মেজর (অব. হাফিজ) ও জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান), সিঙ্গাপুর বৈঠক, মধ্যবর্তী নির্বাচনের গুঞ্জন নিয়ে চলছে কানাঘুষা। যদিও এসব বিষয়ে কারো গ্রহণযোগ্য বক্তব্য মিলছে না। অনেকটাই গুজব আকারে এগুলো ছড়ালেও কিছু না ঘটলে কিছু রটবে এমনটা তো হওয়ার কথা না। তবে এসবের সঙ্গে কাকতালীয়ই হোক আর যেভাবে, মিলে যাচ্ছে অনেক কিছু। 

যেমনটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই তিন সদস্যের হাইপ্রোফাইল কর্মকর্তাদের নির্বাচন শেষে হঠাৎ করে বাংলাদেশ সফর করার এতটা গুরুত্ব হয়ে উঠলো কেন? মায়ানমারে চলছে অভ্যন্তরীণ সংঘাত। যার পেছনেও রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের প্রভাব। যারমধ্যে ভারত, চীনও রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে মার্কিনীদের আনাঘোনা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। চীনের প্রভাব ঠেকাতে সদা প্রস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা বহুদিন থেকেই। ফলে এ তিনের দৃষ্টি যখন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে, সেখানে বাংলাদেশকে নিয়েও তারা ভাববে না, এটা না বোঝার কোনো কারণই নেই। 

একটা (মায়ানমার) দেশের অভ্যন্তরীণ ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রেশ সীমান্তের অপরপ্রান্তে থাকা যতই শান্তিপ্রিয় দেশ হোক না কেন তার রেশ পরবেই। হয়তো সেসব হিসেব নিকেষে চলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভ্যন্তরেও। কারণ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় দুইবছর ধরে। দ্বাদশ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে তাদের হঠাৎ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া তো রহস্যজনকই ছিল এটা তো আর লিখে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। ফলে মার্কিনীরা হাতগুটিয়ে নিল কি-না এ প্রশ্ন যখন বাংলাদেশের মানুষের, ঠিক তখনই এসব বিষয়ের অবতারণা।

সিঙ্গাপুরে বৈঠক গুঞ্জন

দীর্ঘ কারাভোগের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে গমন করেন বাংলাদেশে তার চিকিৎসকের পরামর্শক্রমেই। কারণ কারাভোগের সময় তার শরীরের নানা জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারাভোগের পর মির্জা ফখরুলকে লাঠি ভর করে হাঁটতে দেখা গেছে। যা তার গ্রেফতার হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবরেও লাঠি ভর দিয়ে চলেননি তিনি। এর আগেও সিঙ্গাপুরে তিনি চিকিৎসা করিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের কঠিন রোগমুক্তিও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার মাধ্যমে। ফলে নিয়মিত তিনিও যাতায়াত করেন সেখানে। এবারও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সিঙ্গাপুরে গমনের পর তিনিও গিয়েছিলেন। পূর্বের সিডিউল এমনটা থাকতেই পারে। যা একই সময়ে দেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের। এখানে আরেকটি বিষয় আলোচিত তিনি হলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সিঙ্গাপুর সফর নিয়ে। কারণ মার্কিনীদের এশীয় বিষায়ক একটা গুরুত্বপূর্ণ দফতর সিঙ্গাপুরে থাকলেও পিটার হাস সেখানে কখনও গিয়েছেন এমনটা মিডিয়াতে আসেনি। যা ওই দুই মহাসচিবের সফরকালে এসেছে। এতেই রহস্যের জট। কোনো বৈঠক কি এ তিনে ঘটেছে? না আদৌ হয়নি এ প্রসঙ্গ নিয়ে গুঞ্জন বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বাতাসে। 

পরিশেষে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সিঙ্গাপুর ফেরৎ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। গত শনিবার দেশে ফেরার পর রবিবার (১০ মার্চ) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে ‘সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সেখানে মির্জা ফখরুল ও পিটার হাসের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের কোনও বৈঠক হয়েছে কিনা’ জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুনেছি তারা সেখানে গেছেন। কিন্তু কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি।’ একই সময়ে আরেকটি প্রশ্নও করা হয় তার কাছে। তিনি সেটাও উড়িয়ে দেন। প্রশ্নটা ছিল- 

‘মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবি’ সংক্রান্ত। ওবায়দুল কাদের বিএনপির অমন দাবী উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রাখেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন কোন দুঃখে? মামা বাড়ির আবদার!’ তবে এ বিষয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময়ে তিনি ফেরেননি বাংলাদেশে। 

মার্কিন প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশ সফর শেষ করে চলে যাবার পরই রাজনৈতিক মহলে কথা ভেসে বেড়াচ্ছিল মার্কিনীদের পরামর্শ মধ্যবর্তি নির্বাচনের। সে সময় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও একই বক্তব্য দেন। সে থেকেই মধ্যবর্তি নির্বাচনের গুঞ্জনের ডালপালা মেলতে শুরু করে। 

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন মির্জা ফখরুল 

সিঙ্গাপুরে দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ৬ মার্চ থেকে তার শারীরিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ বা তার পরবর্তিতে যে কোনো সময় শেষে দেশে ফিরবেন। আগামী ২৮ মার্চ বিএনপির একটি ইফতার মাহফিলের সূচি চূড়ান্ত। যাতে রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা অংশ নেবেন। ওই ইফতারে মির্জা ফখরুলের উপস্থিত থাকা চূড়ান্ত করেই ইফতার পার্টির সময় নির্ধারিত হয়েছে। 

এদিকে মির্জা ফখরুলকে নিয়ে বিভিন্ন রটনাও ছড়িয়ে পরেছে। যার উত্তরও তিনি দিয়েছেন। গুঞ্জন ওঠে, মির্জা ফখরুল মহাসচিবের পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে কারামুক্ত হওয়ার পর তার নীরবতা এসকল প্রশ্নের অবতারণা। জানা গেছে দীর্ঘ কারাভোগে মির্জা ফখরুল ভীষণ অসুস্থ হলেও তিনি সেটা সাধারণ নেতা কর্মীদের বুঝতে দেননি। হাসি মুখে আড়াল করেছেন সব। তবে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত হওয়ার পর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ ছিল। সেটাই অনুসরন করেছেন তিনি। এ জন্য তিনি কারামুক্তির পর ঢাকাতে থাকলেও মিডিয়ায় মুখ খোলেননি এবং তেমন কোনো কর্মসূচিতেও যাননি।

জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রাজনীতিতে মনযোগী হবেন বিএনপি মহাসচিব। 

শেয়ার করুন