৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:০৪:২৩ অপরাহ্ন


সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিল রক্ষায় অভিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিল রক্ষায় অভিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড


যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল সিকিউরিটি কর্মসূচির আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় অভিবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এই কর্মসূচি ‘পে অ্যাজ ইউ গো’ ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ বর্তমান কর্মজীবী মানুষের প্রদত্ত পে-রোল ট্যাক্স থেকেই বর্তমান উপকারভোগীদের পেনশন পরিশোধ করা হয়। অভিবাসীরা নাগরিক হোক বা অনিবন্ধিত নাগরিক হোক না কেন এই তহবিলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন। ফলে তারা নিজেরা কখনো এই সুবিধা না পেলেও কর্মসূচির স্থায়িত্ব এবং লাখ লাখ মার্কিন নাগরিকের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখেন।

প্রকৃতপক্ষে অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের শ্রমশক্তি, পে-রোল ট্যাক্সে অবদান এবং তুলনামূলকভাবে তরুণ জনসংখ্যা এই কর্মসূচিকে দীর্ঘমেয়াদে সচল রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সাম্প্রতিক নীতিমালায় এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে অভিবাসীদের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে, যা শুধু ভ্রান্ত তথ্যের প্রশার ঘটাচ্ছে না, বরং কর্মসূচির সার্বিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে ফেলছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা তুলনামূলকভাবে বেশি কর্মক্ষম এবং উচ্চহারে শ্রমবাজারে সক্রিয়, যা তাদের অর্থনৈতিক অবদানকে আরো বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি অভিবাসী ও তাদের যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সন্তানদের গণনায় না ধরা হয়, তাহলে ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনসংখ্যা ৮ মিলিয়নেরও বেশি কমে যেত। অভিবাসীরা গড়ে তুলনামূলকভাবে তরুণ হওয়ায় তারা দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে পে-রোল ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে এই তহবিলে অবদান রাখতে পারেন।

সোশ্যাল সিকিউরিটি প্রশাসনের বার্ষিক ট্রাস্টি রিপোর্টে অভিবাসনের প্রভাব স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রশাসনের অ্যাকচুয়ারিয়াল বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যদি প্রতি বছর গড়ে চার লাখ বেশি অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আসে, তাহলে সামগ্রিক ঘাটতি প্রায় ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে। অন্যদিকে অভিবাসনের হার প্রত্যাশিতের চেয়ে কম হলে ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। ২০২৪ সালের প্রজেকশনে সোশ্যাল সিকিউরিটি প্রশাসন প্রতি বছর গড়ে ১.২ মিলিয়ন নিট অভিবাসনের ভিত্তিতে আর্থিক পূর্বাভাস তৈরি করেছে।

২০২২ সালে অনিবন্ধিত অভিবাসীরা আনুমানিক ২৫.৭ বিলিয়ন ডলার সোশ্যাল সিকিউরিটি ট্যাক্স প্রদান করেছিলেন। ২০২৩ সালে এই পরিমাণ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা মূলত মুদ্রাস্ফীতি এবং অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে। ২০২৪ সালের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশিত না হলেও পূর্ববর্তী প্রবণতা অনুযায়ী, এই অবদান আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও তারা নিজেরা খুব কম ক্ষেত্রেই এই সুবিধা পান, তবুও ২০১৩ সালের একটি সরকারি রিপোর্টে দেখা যায় ২০১০ সালে অনিবন্ধিত অভিবাসীরা নিট ১২ বিলিয়ন ডলার তহবিলে অবদান রেখেছিলেন।

এই বাস্তবতা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন হ্রাস ও ব্যাপকভাবে অভিবাসী বিতাড়নের নীতি গ্রহণ করেছে। এমনকি যারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করছেন, তাদেরও স্থিতি বাতিল করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এই নীতিগুলো কেবল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, আর্থিক দিক থেকেও ক্ষতিকর। কারণ এতে অভিবাসী শ্রমশক্তি হ্রাস পাবে, ফলে সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিল আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।

সোশ্যাল সিকিউরিটি কর্মসূচি ইতিমধ্যেই ২০৩৫ সালের মধ্যে ঘাটতির মুখোমুখি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তখন যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে কেবল ৮৩ শতাংশ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যদি নীতিনির্ধারকরা সত্যিকার অর্থেই উদ্বিগ্ন হন, তবে তাদের উচিত হবে বাস্তবভিত্তিক সমাধান খোঁজা। যেমন রাজস্ব বৃদ্ধির উপায় বের করে সোশ্যাল সিকিউরিটির ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ করা। অথচ ট্রাম্প প্রশাসনের মতো অভিবাসীদের দোষারোপ ও ভুল তথ্য ছড়ানো কেবল সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা দুর্বল করে দিচ্ছে।

সর্বোপরি অভিবাসীরা কেবল অর্থনীতির জন্য নয়, সোশ্যাল সিকিউরিটির মতো জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। তাদের অবদান স্বীকৃতি পাওয়া উচিত, নাকি তাদের অবমূল্যায়ন করে আর্থিক সংকটের দায় চাপানো হবে— এটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

শেয়ার করুন