৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:২৭:০৫ অপরাহ্ন


৬ হাজার ফোন বুথের শহর
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২৫
৬ হাজার ফোন বুথের শহর হাবিব রহমান


তখন হাতে হাতে মোবাইল ছিল না। বেশির ভাগ মানুষই ফোন করতে ছুটে যেতেন ফোন বুথে। মুঠোফোন বিশ্ব জয় করে নিলেও নিউইয়র্কে সেই বুথগুলো ছিল এতোদিন। এখন এগুলো আশ্রয় নিয়েছে স্মৃতিতে অথবা জাদুঘরে। ২০১৪ সালেও নিউইয়র্কের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফোন বুথ ছিল। সব মিলিয়ে ৬ হাজার বুথ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের এই মেগাসিটিতে। মুঠো ফোন-বিপ্লব শুরুর আগে ফোন বুথই ছিল জরুরি প্রয়োজনে স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। সস্তায় বিপদের বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্রে এক সময় ফোন বুথে প্রতিটি কলের জন্য খরচ করতে হতো ১০ সেন্ট। ১৯৮৪ সালে কলপ্রতি খরচ বাড়িয়ে করা হয় ২৫ সেন্ট। ২৫ সেন্ট দিয়ে তখন সর্বোচ্চ তিন মিনিট কথা বলা যেতো। ২০০২ সালে কলপ্রতি খরচ আরো বেড়ে হয়ে যায় ৫০ সেন্ট। তবে ৫০ সেন্ট দিয়ে যত খুশি সম্ভব কথা বলা যেতো।

মুঠোফোন যখন সবার হাতে হাতে, তখন আর বুথে ঢুকে ফোন করবে কে? খুব কম মানুষই সেখানে যেতেন। তাই নিউইয়র্ককে টেলিফোন বুথ মুক্ত করার পরিকল্পনা করে নগর কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে সাত বছরের এক প্রকল্পের অধীনে শুরু হয় এক এক করে সব ফোন বুথ সরিয়ে নেয়ার কাজ। তবে চেষ্টা করেও অবশ্য সব বুথ তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। কিছু বুথ পড়েছে ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে। অনেক মালিক চান নস্টালজিয়া হয়ে বুথটা থাকুক। আপার ওয়েস্ট এলাকার মানুষরা তো রীতিমতো লড়াই করে রক্ষা করেছেন টেলিফোন বুথ। এর বাইরে কিছু সাবওয়ের বুথও রাখা হয়েছে জনস্বার্থে।

খুচরো পয়সা দিয়ে ফোন করা যেতো- এমন কিছু বুথে ওয়াইফাই পোর্ট, ৯১১-এ যোগাযোগের ব্যবস্থাসহ আরো কিছু সেবার ব্যবস্থা করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। দুটো বুথকে চিরজীবী করার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। সেগুলোকে পাঠানো হবে মিউজিয়ামে।

ফ‍্যাশন শোর টিকেট ৭৫ হাজার ডলার!

গত ৫ মে নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের তহবিল সংগ্রহের জন‍্য মিউজিয়াম ভবনেই যে ফ‍্যাশন শোর আয়োজন করা হয় এর প্রবেশ মূল‍্য ছিল ৭৫ হাজার ডলার। আর টেবিল বুকিং দিতে গুনতে হয়েছে ৩ লাখ ডলার। বিশ্ব ফ‍্যাশনের সর্বাধিক আলোচিত-সমালোচিত এই অনুষ্ঠানে সারা দুনিয়ার বাছাই করা কয়েকশ অতিথি অংশ নেন।

এতোদিন শুধু ভারতীয় নারীদের দেখা গেছে মেট গালায়। এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছিলেন একজন পুরুষও। তিনি ছিলেন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। এবারই প্রথম তিনি মেট গালায় অংশ নেন। শাহরুখ যে পোশাকটি পড়েছিলেন তার ডিজাইন করেন বাঙালি ডিজাইনার সব‍্যসাচী মুখোপাধ‍্যায়। পোশাক ছাড়াও শাহরুখ খান পরেছিলেন একটি ব্রেসলেটও। সব্যসাচীর সূক্ষ্ম কারুকার্যের এই ব্রেসলেটে ছিল বেঙ্গল টাইগারের নকশা। নানা আকারের হীরা ও মুক্তা খচিত ছিল এই ব্রেসলেট। মেট গালার জন‍্য ও একটি বিশেষ ঘড়ি বেছে নিয়েছিলেন এই অভিনেতা। সুইস ব্রান্ডের এই ঘড়িটির দাম ২.৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৭ মেট আসর মাতিয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুুকোন ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এরপর থেকে মেট গালায় প্রায় নিয়মিত মুখ তারা। ২০২৩ সালে মেটের মঞ্চে অভিষেক ঘটে আলিয়া ভাটের। এই মেট গালা যতনা তারকাদের মেলা, তার চেয়েও বেশি আলোচনায় থাকে এর আলাদা কিছু বিশেষত্বের জন‍্য। শুধু আমন্ত্রণ পাওয়া নয়, মঞ্চে প্রবেশ থেকে শুরু করে আফটার পার্টি পর্যন্ত সব জায়গায় বাঁধা ধরা নিয়মের মধ্যে থাকতে হয় তারকাদের।

মেট গালার প্রথম ও একমাত্র শর্ত হলো আমন্ত্রণ। মেট গালার চেয়‍ারপারসন অ‍্যানা উইনটোর নিজ হাতে আমন্ত্রণপত্র তৈরি করেন। সেই আমন্ত্রণপত্র অতিথির বাসায় পৌঁছালেই কেবল মেট গালায় প্রবেশে সুযোগ মেলে। যত বড় তারকাই হোন না কেন, আমন্ত্রণপত্র ছাড়া মেট গালায় প্রবেশ নিষেধ।

গালায় আমন্ত্রিত সব তারকার জন‍্য থাকে নির্দিষ্ট চেয়ার। সেই চেয়ার সরিয়ে নিয়ে অন‍্য কোথাও বসার নিয়ম নেই। মজার ব‍্যাপার হলো, মেট গালায় কখনো স্বামী স্ত্রীকে একসঙ্গে বসতে দেওয়া হয় না। বরং দু’জনের জন‍্য চেয়ারের ব‍্যবস্থা থাকে আলাদা প্রান্তে।

প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট থিম অনুসারে করা হয়ে থাকে এই মেট গালার আয়োজন। এবারের থিম ছিল ‘সুপারফাইন টেইলারিং ক্লাক স্টাইল’। মূলত দাসপ্রথা নিষিদ্ধের পর কীভাবে আটলান্টিক প্রবাসী কৃষ্ণাঙ্গরা নিজেদের পরিচয় বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন, সেটা খেয়াল করেছে মেট। এবারের পোশাকে তাই ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস, স্টাইল ও পরিচয়। তবে যে ডিজাইনারের পোশাকই বানানো হোক না কেন, অ্যানা উইনটোরের অনুমতি ছাড়াঅনুষ্ঠানে তা পড়া ছিল একেবারেই নিষিদ্ধ। তিনি দেখে সবুজ সংকেত দেওয়ার পরই অতিথিরা সে পোশাক পরার সুযোগ পান।

মুঠোফোনে কড়াকড়ি

বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু মেট গালায় ফোন নিয়ে প্রবেশাধিকার ছিল একেবারেই নিষিদ্ধ। সবাইকে ফোনটা অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে রেখে আসতে হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে মেট গালার ভেতরের দৃশ্য বাইরে না যায়, সেজন‍্যই ছিল এই কড়াকড়ি ব‍্যবস্থা। লোকচক্ষুর আড়ালে তারকারা যাতে সময়টা উদ্‌যাপন করতে পারেন, সে ব্যবস্থাই ছিল এই মেট গালায়।

পেঁয়াজ-রসুন নয়

মেট গালাকে ধরা হয় আভিজাত্যের আসর। ফ্যাশনই এর কেন্দ্রবিন্দু। এতে যাতে কোনো কিছুই বাধা না হতে পারে, সে ব্যবস্থা থাকে পুরো ভেন্যুতে। সেটা খাবারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মেট গালায় উপস্থিত তারকাদের জন্য বানানো খাবারে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে, এমন খাবার একেবারে নিষিদ্ধ। এর মধ্যে ছিল পেঁয়াজ ও রসুন।

ধূমপান নিষিদ্ধ

যে মঞ্চে খাবারের দুর্গন্ধ পর্যন্ত সহ্য করা হয় না, সেখানে ধূমপান? অসম্ভব! যত বড় চেইন স্মোকার হন না কেন, মেট গালায় ধূমপানের কোনো সুযোগ থাকে না। এবারও তার ব‍্যতিক্রম হয়নি। তবে ধূমপান যতটা না গন্ধের জন্য, তার চেয়ে বেশি সাবধানতার জন্য। দামি পোশাক পরে তারকারা হাজির হন মেট গালায়। অনেকের পোশাকও তৈরি হয় দাহ্য উপাদান দিয়ে। এছাড়া মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে থাকা জিনিসপত্রের যেন ক্ষতি না হয়, সে জন্যও সিগারেট পান নিষিদ্ধ ছিল।

আমেরিকান ড্রিম

গাড়িটির নাম আমেরিকান ড্রিম। ১০০ ফুট লম্বা, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দৈর্ঘ্যের গাড়ি। ইতোমধ্যে গাড়িটি গিনেস বুক অব রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে। এই গাড়ির রয়েছে ২৬ টি চাকা। ৭৫ জনেরও বেশি বসার জায়গা রয়েছে। এই সুপার লিমো গাড়িটি বানিয়েছেন কার কাস্টমাইজার জে ওহরবার্গ নামের এক মার্কিন ব্যক্তি।

এই সুপার লিমোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য আমেরিকান ড্রিম’। কী নেই এই গাড়ির ভেতর! এতে রয়েছে ২৬টি চাকা, দুটো দূরন্ত ভি ৮ ইঞ্জিন যা সামনে ও পেছনে বসানো রয়েছে। এই গাড়ির ভেতরেই রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাড, ছোট গলফ মাঠ, ফ্রিজ, টেলিফোনের সুবিধা, আর সবচেয়ে বড় কথা এই গাড়িতে বসতে পারেন ৭৫ জনেরও বেশি মানুষ।

১৯৮৬ সালে তৈরি হয়েছিল এই দুর্লভ ও বিরল গাড়ি। মূলত ১৯৭৬ সালের ক্যাডিল্যাক এলডোরাডোর মডেলের উপর ভিত্তি করে এটি নির্মিত হয়েছে। ৩৬ বছর পরে সেটিকে আবার পুনর্র্নির্মাণ করা হয়েছে। সব খাত মিলিয়ে এর জন্য খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ১৯৮৬ সালে প্রথম যখন এটি বানানো হয় তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ৬০ ফুট যা এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০ ফুট। বর্তমানে এই গাড়িটি ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে ডেজারল্যান্ড পার্ক মিউজিয়ামে প্রদর্শনীতে রাখা রয়েছে এই সুপার লিমো ‘দ্য আমেরিকান ড্রিম’।

শেয়ার করুন