লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসিএলএ) ক্যাম্পাসে গত ১৫ মে পবিত্র কোরআন অবমাননার এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ক্যাম্পাসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউসিএলএর রেডিট পেজ (আর/ইউসিএলএ) এ একাধিক পোস্টে দেখা গেছে, এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি কোরআনের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলা, পায়ের নিচে পিষ্ট করা এবং টয়লেটে ফেলে দেওয়ার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এসব পোস্টে ওই ব্যক্তি মুসলিম ছাত্রদেরও অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও পোস্টগুলো বিভিন্ন গোপনীয় অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছে, তথাপি সংশ্লিষ্ট ভিডিও ও ছবিগুলো একই ব্যক্তির বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একই দিনে ক্যাম্পাসের ডিকসন কোর্ট নর্থ এলাকায় এক অজ্ঞাত ব্যক্তি প্রো-প্যালেস্টাইনি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক এবং ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেন, ইসলাম অবিশ্বাসীদের হত্যা শিখায় এবং ইসলামকে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। ইউসিএলএর সঙ্গে ওই ব্যক্তির সম্পর্ক আছে কি না বা এটি অনলাইন পোস্টগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার মুসলিম অধিকার সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) দৃঢ় নিন্দা জানিয়েছে এবং ইউসিএলএ মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এমএসএ) ক্যাম্পাসে বেড়ে চলা ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তৎপরতা চেয়েছে। ইউসিএলএ এমএসএ এক ই-মেইল বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মুসলিম ছাত্ররা ‘সন্ত্রাসী’, ‘শিশু হত্যাকারী’ ও ‘ধর্ষক’সহ কুৎসিত গালাগাল ও হুমকির মুখে পড়ছেন। এই ধরনের বিদ্বেষমূলক ভাষা অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার ফলে মুসলিম ছাত্রদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও হেনস্তার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মানসিক চাপেও ভুগছেন।
কেয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের সিভিল রাইটস ম্যানেজিং অ্যাটর্নি দিনা চেহাতা বলেন, কোরআনের অবমাননা ও অন্যান্য বিদ্বেষপূর্ণ কার্যকলাপ একক ঘটনা নয়; এটি ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে চলমান বৃহত্তর ইসলামবিদ্বেষের অংশ, যেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি। ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের আরো বেশি মনোযোগ প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রো-প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে ক্যাম্পাসে বেড়ে চলা ইসলামবিদ্বেষকে উপেক্ষা করছে। ইউসিএলএ মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট অনুরোধ জানিয়েছে, যেন তারা দ্রুত একটি প্রকাশ্য বিবৃতি জারি করে ইসলামবিদ্বেষের বৃদ্ধিকে স্বীকার করে, মুসলিম ছাত্রদের সুরক্ষা ও কল্যাণে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষ ও হেনস্তার ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। কেয়ার ক্যালিফোর্নিয়ার সাম্প্রতিক ‘ক্যাম্পাস ক্লাইমেট রিপোর্ট’ অনুযায়ী, রাজ্যের প্রায় ৪৯ ভাগ মুসলিম ছাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে বৈষম্য ও হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। পাশাপাশি ৬৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুসলিম ছাত্রদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস বিশ্ববিদ্যালয়কে মুসলিম শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় দ্রুত এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ক্যাম্পাস একটি নিরাপদ, সহিষ্ণু এবং সাম্যবাদী পরিবেশ হিসেবে গড়ে ওঠে। ইউনিভার্সিটিকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে মুসলিম ছাত্ররা নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারে। বিদ্বেষমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্মানের সংস্কৃতি বিকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা এবং একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্পাস পরিবেশ নিশ্চিত করা।