১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান টার্গেট প্রতিদিন আটক ২ হাজারের বেশি অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান টার্গেট প্রতিদিন আটক ২ হাজারের বেশি অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় অভিবাসীদের শক্তির প্রদর্শন


সারাদেশে ক্রমাগত হারে ইমিগ্র্যান্টদের ধরপাকড় বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে চলছে ইমিগ্র্যান্টদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে মিছিল ও বিক্ষোভের ওপর ইমিগ্রেশন পুলিশ, আইস ও সর্বশেষ ন্যাশনাল গার্ডের আক্রমণ। গত সপ্তাহ ও সপ্তাহান্তে ৭ জুন (শনিবার) লস অ্যাঞ্জেলেস, ম্যাসাচুসেটস ও সানদিয়াগোতে চলেছে ব্যাপক ধরপাকড়। শত শত বিক্ষোভকারীকে রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সঙ্গে নিয়োগ করা হয়েছে ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড, যারা বিক্ষোভ দমানোর জন্য কাজ করছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসম বিক্ষোভ দমানোর এই নির্যাতনমূলক পদক্ষেপকে উদ্দেশ্যমূলক, উসকানিমূলক ও উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে বলে বর্ণনা করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল গার্ড ফেডারেল গভর্নমেন্টের কর্তৃত্ব নিয়ে এসে সেখানে ২ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে ভায়োলেন্ট বিক্ষোভকারীদের দমানোর জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা ফেডারেল ইমিগ্র্যান্ট এজেন্টের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। হোয়াইট হাউস থেকে আরো বলা হয়, ক্যালিফোর্নিয়ার ‘নির্বোধ’ ডেমোক্র্যাটরা পুরোপুরিভাবে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালনে বিরত রয়েছে।

গত ৬ জুন শুক্রবার ও ৭ জুন শনিবার ফেডারেল এজেন্টরা কাজের জায়গায় অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের অনুসন্ধানে তল্লাশি চালায়। গত শনিবার সর্বত্র বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পুলিশ, ইমিগ্রেশন পুলিশরা গ্রেনেড এর কৃত্রিম সাউন্ড সম্বলিত বোমা, টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। বিভিন্ন জায়গায় শত শত বিক্ষোভকারী শনিবার নেমে আসেন। সন্ধ্যায় কিন্তু তাদের সংখ্যা কমে আসে।

বস্তুত ট্রাম্প প্রশাসন এখন নতুন করে ইমিগ্র্যান্টদের ওপর নির্মম আচরণ শুরু করে। তাতে রয়েছে- ১. ওয়ার্ক প্লেসে তল্লাশি। ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বলা হয় সীমান্ত অতিক্রম করে লাখ লাখ অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট প্রবেশ করেছে। তাদের ধরাই হচ্ছে নতুন লক্ষ্য। ২. ক্যালিফোর্নিয়ার প্যারামাউন্টে- যা লস অ্যাঞ্জেলেসের ২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত, সেখানে এক হোম ডিপোর কাছে ফেডারেল ইমিগ্রেশন এজেন্টের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষ হয়। ৩. শুক্রবার সারাদেশে ধরপাকড় করে শত শত ইমিগ্র্যান্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে ১২১ জন লস অ্যাঞ্জেলেসে। ৪. ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ করে ইমিগ্র্যান্টদের কুলাঙ্গার বলে খ্যাত ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার ইমিগ্র্যান্টদের পক্ষে প্রতিবাদকে বিদ্রোহ বা ইনসার অ্যাকশন বলে বর্ণনা করেন। ৫. এছাড়া ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট তাদের অপারেশন বলবত রাখবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে ফ্লোরিডায় তালাহাসিতে মুখোশ পরিহিত ইমিগ্রেশন এজেন্টরা ডজন ডজন মাইগ্র্যান্টকে বাসভর্তি করে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যায়। নিউ অর্লিন্সে ফুড কনট্রোল প্রজেক্টে কর্মরত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সানদিয়াগো ও ম্যাসাচুসেটসের মার্থার আঙুর বাগান ও বার্কশায়ারে কর্মরতদের ধরে ফেডারেল এজেন্টরা নিয়ে যায়। আর তা এক ধরনের বিরোধের সৃষ্টি করে। 

ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে ওয়ার্ক সাইট কনস্ট্রাকশন সাইট, ফুড প্রোডাকশন ও আপ্যায়নের জায়গায় কত নির্মমভাবে তল্লাশি চালায় তা দেখার বিষয়। কোনো কোনো সময় কোনো গোপন সূত্র ধরে এ তল্লাশি চালানো হয়। তবে সরকারের ব্যাপক প্ল্যান নিয়ে প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক মহিলা মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে প্রতিদিন ২ হাজার করে ইমিগ্র্যান্ট গ্রেফতার করা হয়েছে। আগে এ সংখ্যা ছিল দিনে ৬০০। এদের মধ্যে কতজনকে ওয়ার্ক প্লেস থেকে ধরা হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। 

গোল্ডম্যান সার্চের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৭ কোটি ওয়ার্ক ফোর্সের মধ্যে ৪ পার্সেন্টেরও বেশি কাগজপত্রবিহীন কর্মচারি। এজন্য কাজের জায়গায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ ধরার সুযোগ। মে মাসের শেষ নাগাদ এই অবৈধদের সংখ্যা- যাদের ধরা হতে পারে, তাদের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখেরও বেশি। ইতিমধ্যে প্রশাসন টিপিএস (টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস) অনেক দেশের ওপর থেকে তুলে নিয়েছে। অন্য কোনো পন্থায় তারা বৈধতা না পেলে যেমন অ্যাসাইলাম, বিয়ে ও দক্ষ বা সদস্য শ্রমিক হিসেবে তাদের চলে যেতে হবে। সর্বশেষ টিপিএস বঞ্চিত হচ্ছে নেপাল। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে- ভেনেজুয়েলান, কিউবা, হাইতি ও নিকারাগুয়া টিপিএস সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে।

অবশ্য যারা কনস্ট্রাকশন ফার্মের মালিক, তারা মনে করে অবৈধদের ধরে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের কর্মের কথা চিন্তা করা উচিত। অনেক ফার্ম আছে, যাদের মূল কর্মচারি বহিরাগত। তাদের বিষয়ে ভাবা দরকার। এর মধ্যে রিপাবলিকান ও ডোমোক্র্যাটরাও রয়েছে। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব ফার্ম মালিকরা বিদেশি অবৈধ নিয়োগের জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে কনভিকটেড হয়েছিল, তাদের ক্ষমা করে দিচ্ছে। অবশ্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন কোনো সময় কাজের জায়গা থেকে ইমিগ্র্যান্ট তাড়ানোর পক্ষে ছিলেন না। এখন বিভিন্ন স্থানে কাজের জায়গায় মালিকদের কাছে ইন্সপেকশনের নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। ওয়াশিংটনে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এরকম ১৮৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয়। আরো জায়গায় তা পৃথকভাবে দেওয়া হচ্ছে, এই নোটিশ ধরে কাজের জায়গায় তল্লাশি হতে পারে।

শেয়ার করুন