৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৫৪:২৫ অপরাহ্ন


দেশকে আরিফিন শুভ
প্রত্যেককে তার কাজটা শান্তিতে করতে দিন
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
প্রত্যেককে তার কাজটা শান্তিতে করতে দিন আরিফিন শুভ


সমালোচনা, গুঞ্জন আর বিতর্কের মধ্যেও আরিফিন শুভ আছেন নিজের কাজ নিয়ে। ঈদে আসছে নীলচক্র, শেষ করেছেন বলিউডের প্রথম প্রজেক্টও। তিনি বলছেন, ‘প্রত্যেককে তার কাজটা শান্তিতে করতে দিন।’ কাজ, বিশ্বাস ও বাস্তবতা নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন খোলামেলা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: এবারের ঈদে আপনার নীলচক্র সিনেমা আসছে। এই গল্প বেছে নেওয়ার পেছনে কি সময়ের সংকট, নাকি শিল্পীর দায়বোধ কাজ করেছে?

আরিফিন শুভ: এই গল্প এখনকার। ইন্টারনেট যুগে একটা অসাবধান ক্লিক পুরো জীবন বদলে দিতে পারে- এটাই দেখানো হয়েছে। সাহসী বলেই করেছি, দরকারি বলেই করেছি। অভিভাবক হোন বা তরুণ, যারা অনলাইনে থাকেন, সবারই দেখা উচিত। চোখ বন্ধ রাখলে বিপদ থেমে থাকে না।

প্রশ্ন: ঈদের মতো উৎসবে হলে দর্শক টানার জন্য কি এখন ‘নিরাপদ গল্প’-এর চেয়ে ‘ঝুঁকিপূর্ণ সত্য’ বেশি প্রয়োজন?

আরিফিন শুভ: এখনকার দর্শক অনেক সচেতন, তারা চায় রিয়েলিটি, চায় সংযোগ। শুধু ‘নিরাপদ গল্প’ দিয়ে তাদের মন জয় করা যায় না। আমি বিশ্বাস করি, শিল্পীর সাহস থাকলে দর্শক সেটা টের পায় এবং মূল্যায়ন করে। ঈদ যেমন আনন্দের সময়, তেমনি চিন্তার খোরাক দেওয়ারও সুযোগ। নীলচক্র ঠিক সেই জায়গায় কথা বলবে।

প্রশ্ন: বলিউডে কাজ করে ফিরলেন? কাজটি নিয়ে কতটুকু বলা যাবে?

আরিফিন শুভ: হ্যাঁ, সনি লিভের জ্যাজ সিটির কাজ শেষ করে ফিরলাম। তবে চুক্তিগত কারণে এখনই সব খোলাসা করে বলা যাচ্ছে না। আড়াই বছর আগে অডিশনের জন্য ডাক পাই। তারপর কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া শেষে ২০২৪ সালের মে মাসে চুক্তিবদ্ধ হই। গেল ৭ মাস ধরে কাজটির শুটিং ও ডাবিং শেষ করেছি। এটি আমার প্রথম বলিউড প্রজেক্ট, এখন বাকিটা মুক্তির পর দর্শক বলবেন...

প্রশ্ন: অনেকেই বলেন, আপনি আগের চেয়ে কম কথা বলেন এখন। সেটা কি অভিমানে, না বিতর্কের কারণে?

আরিফিন শুভ: এটা হয়তো অভিজ্ঞতা। হাজার জনের হাজার মত সবকটায় সাড়া দিতে গেলে নিজের কাজটাই আর করা হবে না। আমি বিশ্বাস করি, কাজ কথা বলবে। আর অভিমান? সেটা না হয় থাক, নিজের ভেতরেই। বিতর্ক বিহীন তো জীবন হয় না। যদি আমার বিষয়ে কোনো সত্যনিষ্ঠ এবং যুক্তিযুক্ত বিতর্ক থাকে, আমি তা শোনার জন্য প্রস্তুত।

প্রশ্ন: মুজিব সিনেমায় এক টাকা পারিশ্রমিক নেওয়ায় অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আপনি কী বলবেন?

আরিফিন শুভ: আশ্চর্য লাগে এই সমালোচনা শুনে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি বুঝি পারিশ্রমিক না নিয়ে কোনো বড় অপরাধ করে ফেলেছি! চুরি করিনি, দুর্নীতি করিনি, দেশের ক্ষতি করিনি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে এই সমালোচনা? আমি যদি বাইরে ১০০ টাকায় কাজ করে এখানে ১০ হাজার টাকা দাবি করতাম, তখন অন্তত সমালোচনার একটা ভিত্তি থাকতো। নিজের শ্রমের দাম কি কেউ নিজে ঠিক করে না? আর এটা প্রথম না-আগেও টাকাকে প্রাধান্য দিইনি। 

ঊনিশ ২০ সিনেমার কথাই ধরুন, চুক্তি অনুযায়ী পুরো টাকাই নিইনি। চাইলে প্রযোজকের কাছ থেকে শুনে নিতে পারেন।

প্রশ্ন: বলা হয়, এক টাকার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পূর্বাচলে জমি পেয়েছেন?

আরিফিন শুভ: এক টাকার পারিশ্রমিক আর পূর্বাচলের জমি- এই দুই বিষয়ে যে মুখরোচক গল্প ছড়ানো হচ্ছে, তা বাস্তবতা থেকে বহু দূরে। ফেসবুকে তো যা খুশি বলা যায়, প্রমাণ লাগে না, দায়ও নিতে হয় না। রাজউকের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, কীভাবে জমি বরাদ্দ হয়। ‘শিল্পী কোটায়’ এর আগেও ১৫১ জন শিল্পী জমি পেয়েছেন। তারা তো মুজিব সিনেমায় ছিলেন না, কেউ এক টাকা পারিশ্রমিকও নেননি। আমি নিয়ম মেনে আবেদন করেছি, সরকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করেছি। আমার ক্ষেত্রেই বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন সিনেমা আর জমি কোনো লেনদেনের অংশ! উদ্দেশ্য একটাই বিভ্রান্তি ছড়ানো।

প্রশ্ন: আপনার রাজনৈতিক আদর্শ কী?

আরিফিন শুভ: বেন কিংসলে মহাত্মা গান্ধী হয়েছেন, মরগান ফ্রিম্যান বা ইদ্রিস এলবা ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, তাতে কি তারা ওই জাতির প্রতিনিধি হয়ে গেছেন? তাহলে আমার ক্ষেত্রেও এই প্রশ্ন কেন? মুজিব সিনেমায় কাজ করার পর থেকে নানা গুঞ্জন চলছে যে আমি নাকি এমপি হচ্ছি। অথচ বাস্তব হলো, আমি অনেক আগেই বলেছি, আমি রাজনীতিতে আসছি না। এটা আমার সচেতন সিদ্ধান্ত। কারো যদি মনে হয়, আমি এ সিনেমার বিনিময়ে কোনো সুবিধা পেয়েছি, তাহলে দয়া করে অনুসন্ধান করুন, প্রমাণ নিয়ে আসুন, জনগণের সামনে তুলে ধরুন।

প্রশ্ন: রাষ্ট্রনির্ভর কোনো কাজ করলে একজন শিল্পীকে রাজনৈতিক রঙে দেখা- এটা কি শিল্পের স্বাধীনতায় বাধা?

আরিফিন শুভ: শুধু শিল্পী নয়, যে কোনো পেশার মানুষকে অযাচিতভাবে রাজনৈতিকভাবে চিত্রিত করলে, তা তার কাজের স্বাধীনতাকে আঘাত করে। এতে ব্যক্তি নয়, সমাজের ক্ষতি হয়। বিভক্তি বাড়ে, দেশ পিছিয়ে পড়ে। প্রত্যেককে তার কাজটা শান্তিতে করতে দিন। এই কাজেই দেশের লাভ।

প্রশ্ন: আপনার দর্শকপ্রিয়তা এখন অনেক বিস্তৃত, দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আপনি নিজেকে কীভাবে দেখেন?

আরিফিন শুভ: আমি নিজেকে এখনো একজন লার্নার হিসেবেই দেখি। আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাওয়া সম্মানজনক, তবে তাতে আমি যেন নিজের শিকড় ভুলে না যাই। আমি যেখানে জন্মেছি, বড় হয়েছি, সেই দর্শকদের ভালোবাসা নিয়েই সামনে এগোতে চাই।

প্রশ্ন: এরপরও কি আপনি অন্য কারো বায়োপিকে অভিনয় করতে চান?

আরিফিন শুভ: অবশ্যই। আমি একজন অভিনেতা। আমার কাজ চরিত্রে ঢুকে তাকে সত্যি করে তোলা। পরিচালক যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন, আমি সব সময় প্রস্তুত।

প্রশ্ন: সামনে দর্শক কী নতুন কাজ দেখতে পাবেন আপনার কাছ থেকে?

আরিফিন শুভ: সামনে দর্শক নূর, লহু, জাজ সিটি ও ঠিকানা বাংলাদেশ দেখবেন। এর পাশাপাশি দেশে ও দেশের বাইরে নতুন কিছু কাজ নিয়ে কথা চলছে। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবেন।

শেয়ার করুন