০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৪৬:১০ পূর্বাহ্ন


ভারতের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি বাংলাদেশের মানুষ
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১২-২০২৪
ভারতের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা


প্রায় তিনদিক ভারত পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ এখন বৈরী প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের শিকার। বাংলাদেশে একজন ইসকন বহিষ্কৃত ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার এবং প্রতিক্রিয়ায় দুষ্কৃতকারীদের হাতে এখন আইনজীবীকে হত্যার প্রক্রিয়ায় ভারতের কিছু এলাকায় বাংলাদেশবিরোধী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পারস্পরিক সম্পর্ক তিক্ততায় রূপান্তরিত হয়েছে। এমনিতেই ভারতের দাদাগিরির কারণে বাংলাদেশিদের মনে ভারত বিরোধিতা আছে। দীর্ঘদিন একতরফাভাবে ভারত বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। 

সৎ প্রবাসী হিসাবে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ উদারতা দেখালেও ভারত নিজের স্বার্থের বাইরে এক ইঞ্চি সম্যথার পথে হাতে নি। পরিবর্তিত সময়ে ভারত বিরোধিতা থেকে বিদ্বেষ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে এমন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে ভারত। সীমান্তের ওপারে পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা এবং অন্য কিছু অঞ্চলে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্র্ভূত কাজগুলো বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে। সৌভাগ্য বাংলাদেশের সচেতন জনসমাজ এখনো ভারতের সাজানো ফাঁদে পা দেয়নি। এ ব্যাপারে রাজনৈতি নেতৃবৃন্দও ব্যাপক কাজ করেছেন। আহ্বান জানিয়েছেন ধৈর্য ধারণের। মানুষ সেটাই শুনেছেন। 

কিন্তু ভারত সরকার অবিলম্বে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি-বিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায় অত্যাচার নিয়ে মনগড়া মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উগ্রবাদী ভারতীয়রা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশেও সংগত কারণে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সম্প্রতি কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভেঙে ভারতীয়রা ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন আক্রমণ করে ভাঙচুর, লুটপাট করেছে, কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে ভীতির সঞ্চার করেছে, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কয়েকটি এলাকায় উগ্রবাদী ভারতীয়রা দুই দেশের আমদানি-রফতানি স্থগিত রেখেছে হোটেল, পর্যটনকেন্দ্রগুলো থেকে বাংলাদেশিদের বের করে দিয়েছে, কিছু হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের সেবা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এগুলো কিছুই কিন্তু সৎ প্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সহায়ক নয়, বরং শিষ্টাচারবহির্ভূত। 

এমনিতেই কিন্তু ভারত বাংলাদেশ বৈরী সম্পর্কের প্রেক্ষাপট আছে। এক সময়ে এই অঞ্চলের সব দেশগুলো অখ- ভারতের অংশ ছিল। দীর্ঘদিন পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম মুঘলরা ভারত শাসন করেছে। এরপর ভারত ২০০ বছর ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশ। ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার আগে বিভেদ এবং শাসন কৌশলে ধর্মের ভিত্তিতে না ১৯৪৭ সালে ভারত, পাকিস্তান বিভাজন করে যায়। বাংলাদেশকে পাকিস্তান ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত শাসন-শোষণ করার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সক্রিয় সহযোগিতায় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে জন্ম হয় বাংলাদেশের। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই একাত্তরে ৯ মাস সংগ্রামের সময় ভারত সরকার সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের অনেক সৈনিক স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন বিসর্জন দিয়েছে।

কিন্তু একই সঙ্গে এটিও অস্বীকার করা যাবে না ভারত কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তা কখনো আন্তরিকভাবে মেনে নেয়নি। সিকিম, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ থেকেও বাংলাদেশের ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকা-সহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় ভারতের ভূমিকা রহস্যাবৃত। বাংলাদেশ ভারতকে আন্তঃআঞ্চলিক যোগাযোগ, বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে অবারিত সুযোগ দিলো অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সুবিধা ভারত দেয়নি, সীমান্ত হত্যা চালু রেখেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সব বিষয়ে ভারত গত দেড় যুগ নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাতে প্রণোদনা দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে এই কারণে ভারত বিরোধিতা তীব্র।

বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা, পর্যালোচনার সুযোগ হয়েছে। দাবি করেছি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সমানঅধিকার নিশ্চিত করার, ভারত মানতে চায়নি। ওদের মানসিকতাই নেই প্রতিবেশীদের ন্যায্য সমানঅধিকার মেনে নেওয়ার। এখন কিন্তু পরিস্থিতি পালটে গেছে। জুলাই আগস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার কিন্তু জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এই সরকারকে কিন্তু দাদাগিরি করে প্রভাবিত করা যাবে না। ভারত সরকারকে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব বুঝতে হবে। অযাচিত চাপ সৃষ্টি করে সাময়িক সংকট সৃষ্টি করা যাবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ভারতের মতো ধর্মীয় গোষ্ঠী বাংলাদেশে হালে পানি পায় না।

আশা করি, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে কিছু প্রান্তিক গোষ্ঠীর অযাচিত কার্যক্রম বন্ধ করবে।

বাংলাদেশে এখনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে। সরকার জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে সচেষ্ট। ভারত বাংলাদেশকে নেপাল, সিকিম, ভুটান মনের করলে ভুল করবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রের অভাব নেই। কিন্তু ভারতের স্বার্থে স্থিতিশীল বাংলাদেশকে প্রয়োজন। কিন্তু ভারত সেটা না করে, বরং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনার বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ স্বার্থবিরোধী কাজে মগ্ন। ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা বুঝতেই চাইছে না বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কী চায়। পক্ষান্তরে ভারতের উসকানিমূলক মনোভাবের বলে গোটা বাংলাদেশ এখন যেন এক মন্ত্রে অটুট। 

বাংলাদেশ এবং ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে কিন্তু কোনো বৈরিতা নেই। শুধু উগ্রবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠী উত্তাপ ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সামাজিক স্বার্থে অবিলম্বে সব বৈরিতা পরিহার করতে ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে।

শেয়ার করুন