১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৫:১৫:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


অভিবাসীদের হাত ধরেই গড়ে উঠছে আধুনিক আমেরিকা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৬-২০২৫
অভিবাসীদের হাত ধরেই গড়ে উঠছে আধুনিক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহর


অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা শুধু নতুন জীবনের খোঁজে আসা মানুষ নয়, বরং তারা এই দেশের শহরগুলোর গঠন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সামাজিক বিকাশের কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। আমেরিকার ১০০টি প্রধান মেট্রো এলাকায় অভিবাসীরা জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি, জরুরি সেবামূলক খাতে কর্মরত, নতুন ব্যবসা শুরু করছে এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করছে তারা। একজন নার্স, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ বা করদাতা হিসেবে তারা মার্কিন শহরগুলোকে বাঁচিয়ে রাখছে, শক্তিশালী করছে এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। অভিবাসীরা শুধু জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোকে পুনর্জীবিত করছেন না, বরং অর্থনীতি, শ্রমবাজার এবং উদ্ভাবনী খাতে তাদের অপরিহার্য অবদান জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোতে অভিবাসীদের অবদান দিনদিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আমেরিকার ১০০টি বৃহত্তম মেট্রো এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৪২.১ শতাংশের জন্য অভিবাসীরাই অবদান রাখছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, সিয়াটল মেট্রো এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৯১.৭ শতাংশ, স্ক্রান্টন, পেনসিলভানিয়ায় ৮৩.৭ শতাংশ, নিউইয়র্ক মেট্রোতে ৮২.১ শতাংশ এবং পকিপসি, নিউইয়র্কে ৭৬.৯ শতাংশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে অভিবাসীদের অবদান রয়েছে। ২০২৩ সালে এই ১০০টি প্রধান মেট্রো এলাকায় প্রতি ছয়জন বাসিন্দার মধ্যে একজন অভিবাসী ছিল। অভিবাসীরা কেবল জনসংখ্যাই বাড়াচ্ছে না, তারা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পক্ষেত্রে কর্মশক্তি সরবরাহ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া এলাকাগুলোতেও অভিবাসীরা একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এই ১০০ মেট্রো এলাকার প্রায় এক-পঞ্চমাংশে স্থানীয়, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যা কমেছে, তবে এসব এলাকার ৮৫ শতাংশ এ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে। এমনকি কিছু এলাকায় অভিবাসীদের কারণে সামগ্রিক জনসংখ্যা হ্রাস রোধ করা গেছে। যেমন, বাল্টিমোরে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অভিবাসী জনসংখ্যা ১৯.৪ শতাংশ বেড়েছে, যার ফলে শহরটি সামগ্রিকভাবে ১.১ শতাংশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা পেয়েছে, যা না হলে ০.৯ শতাংশ হ্রাস পেত। ডেট্রয়েট, সিরাকিউজ (নিউইয়র্ক) এবং ইনল্যান্ড এম্পায়ার (ক্যালিফোর্নিয়া) এলাকাগুলোতেও একই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

অভিবাসীদের সংখ্যা যেসব এলাকায় দ্রুত বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে লেকল্যান্ড, ফ্লোরিডা (৫৭.৬ শতাংশ), ব্যাটন রুজ, লুইজিয়ানা (৪১.৭ শতাংশ), নক্সভিল, টেনেসি (৩৮.৮ শতাংশ), র‍্যালি, নর্থ ক্যারোলিনা (৩৮.৬ শতাংশ), এবং ইন্ডিয়ানাপলিস, ইন্ডিয়ানা (৩৭.৮ শতাংশ)। এই এলাকাগুলোতে ২০১৮ সালে অভিবাসী জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল।

২০২৩ সালে অভিবাসীদের মধ্যে ১৬ থেকে ৬৪ বছর কর্মক্ষম বয়সী মানুষের হার ছিল ৭৬.৯ শতাংশ, যেখানে স্থানীয়দের মধ্যে তা ছিল মাত্র ৬১.৪ শতাংশ। যেহেতু ২০৪০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮ কোটি ছাড়াবে, অভিবাসীরা এই ফাঁকা জায়গাগুলোতে কাজ করে স্বাস্থ্যসেবা এবং সেবাদানকারী পেশাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখছেন। ২০২৩ সালে ১০০টি প্রধান মেট্রো এলাকায় নার্সদের ২০.৭ শতাংশ অভিবাসী ছিলেন। সান হোসে, মিয়ামি, লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক এবং সান ফ্রান্সিসকোতে এক-তৃতীয়াংশ বা তার চেয়েও বেশি নার্স অভিবাসী। বিশেষ করে, সান হোসে মেট্রো এলাকায় ৫৪ শতাংশ নার্স অভিবাসী, মিয়ামিতে ৪৯.৫ শতাংশ, লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪১ শতাংশ, নিউ ইয়র্কে ৪০.১ শতাংশ এবং সান ফ্রান্সিসকোতে ৩৯.৪ শতাংশ।

শুধু শ্রমিক হিসেবেই নয়, অভিবাসীরা করদাতা ও ভোক্তা হিসেবেও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০২৩ সালে অভিবাসী পরিবারের সদস্যরা ফেডারেল কর হিসেবে ৩৭৩.১ বিলিয়ন ডলার এবং স্থানীয় ও রাজ্য কর হিসেবে ২০৪.৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে। তাদের মোট খরচ করার ক্ষমতা ছিল ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা স্থানীয় ব্যবসা ও পরিষেবা খাতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। উদ্যোক্তা হিসেবে অভিবাসীদের অবদানও লক্ষণীয়। ২০২৩ সালে ১০০টি প্রধান মেট্রো এলাকায় ব্যবসার ২৯.৮ শতাংশ পরিচালনা করতেন অভিবাসীরা, যার মাধ্যমে ৯৮.২ বিলিয়ন ডলার আয় এসেছে। মায়ামি, ম্যাকঅ্যালেন (টেক্সাস) এবং সান হোসে শহরে ব্যবসার অর্ধেকের বেশি পরিচালনা করেন অভিবাসীরা।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও অভিবাসীরা বড় ভূমিকা রাখছেন। গোটা যুক্তরাষ্ট্রে স্টিম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) পেশাজীবীদের ২৩.৬ শতাংশ অভিবাসী, যেখানে সান হোসেতে এই হার ৬৭.৪ শতাংশ এবং সান ফ্রান্সিসকোতে ৪৯.৭ শতাংশ। অভিবাসীদের প্রভাব প্রতিটি অঞ্চলে বিভিন্ন হলেও সামগ্রিকভাবে তাদের গুরুত্ব স্পষ্ট। তারা শ্রমবাজার, জনসংখ্যা, উদ্ভাবন এবং অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রেক্ষাপটে অভিবাসীদের অবদান স্বীকার এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আজকের জন্য একান্ত জরুরি।

উপরোক্ত পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ থেকে পরিষ্কার যে, অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোকে নতুন প্রাণ দিচ্ছে। তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনশূন্যতা মোকাবিলা করছে, স্বাস্থ্যসেবা ও সেবাদান খাতকে টিকিয়ে রাখছে, উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। তারা কেবল শ্রমিক নয়-তারা করদাতা, ভোক্তা, গবেষক, উদ্ভাবক ও সমাজের সক্রিয় অংশ। অভিবাসীদের অবদান ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, জনসংখ্যা কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ অগ্রগতিকে কল্পনা করা কঠিন। তাই অভিবাসীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে, সহানুভূতিশীল ও কার্যকর নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা জাতির অগ্রগতির জন্য একান্ত প্রয়োজন।

শেয়ার করুন