০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৪:১৭:৪০ অপরাহ্ন


বিসিবি সভাপতির কাছে খোলা চিঠি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৫
বিসিবি সভাপতির কাছে খোলা চিঠি বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল


অনুজপ্রতিম বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল অনুধাবন করছে গতানুগতিক ধারায় বাংলাদেশ ক্রিকেট উন্নয়নের এখন শূন্য সম্ভাবনা। জানি বুলবুল সজ্জন মানুষ, সৎ, নিবেদিত এবং বিশ্ব ক্রিকেট বিষয়ে বিপুল জ্ঞানের অধিকারী। বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়েই সদিচ্ছায় বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়েছে। যারা বিসিবির অন্দর মহলের খবর জানেন তারা অবহিত যে একটি অশুভ সিন্ডিকেটের কোরাল গ্রাসে থাকা অভিশপ্ত ক্রিকেট এক পা এগুলোও দু-পা পিছিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে সীমিত সময়ের জন্য বাংলাদেশ গিয়ে কিছু ব্যতিক্রমধর্মী সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে সেগুলো পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দীর্ঘায়িত করেছে। আমি ঘনিষ্ঠতার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বুলবুলের পরিকল্পনা কিছুটা অবহিত। কিন্তু বাংলাদেশের দূষিত বিষাক্ত পরিবেশে পদে পদে বাধা পেয়ে কত দিন ধৈর্য থাকবে বুলবুলের নিশ্চিত নই।

আড়াই দশকেও বাংলাদেশ বিশ্বক্রিকেটে একটি স্বস্তির স্থানে পৌঁছতে পারলো না। তার প্রধান কারণ ক্রিকেট প্রশাসনের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা। দূরদৃষ্টির অভাব এবং অবশ্যই দুর্নীতি। দেশে ক্রিকেটের অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা এবং অন্য যে কোনো ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর মতো এবং ক্ষেত্রবিশেষে অপেক্ষাকৃত বেশি সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে বিশ্ব ক্রিকেটে তলানিতে খাবি কাছে তার জন্য আমি খেলোয়াড়দের থেকেও দায়ী করবো ২০০০-২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে দায়িত্ব পালন করি তথাকথিত কর্মকর্তাদের। কিছু বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত এবং সম্মিলিত অবদানে বিশ্ব পর্যায়ে সব ফরম্যাটে বাংলাদেশ কালেভদ্রে ছিটাফোঁটা সাফল্য পেলেও ধারাবাহিকতা নেই।

ক্রিকেট সংস্কৃতি এখনো বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড দূরের কথা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও তুলনীয় নয়।

দেশব্যাপী ক্রিকেটের উন্নত অবকাঠামো গড়ে তোলা। তৃণমূলে ট্যালেন্ট হান্টিং। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট অনুষ্ঠান, কোচিং আম্পায়ারিং উন্নত প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় শহরগুলো নিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে জেলা-উপজেলায় ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ায় পরিকল্পনার সুফল পেতে বিসিবিতে প্রয়োজন কিছু ক্রিকেট অভিজ্ঞ, সৎ ও নির্ভীক সাথী। আমি মনে করি বেশ কয়েকজনকে বুলবুল এখন পেয়েছে। ক্রিকেটের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতি দূর করার জন্য এখন প্রয়োজন অংশীজনদের সর্বাত্মক সহায়তা।

জাতীয় দলগুলোর পারফরম্যান্স উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সৎ ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া, সঠিকভাবে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এবং সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত হওয়া। অতীতে অনেক প্রতিভা সম্পন্ন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়েছে সিন্ডিকেটের আগ্রাসনে। এমনকি বুলবুল নিজেও ভুক্তভোগী। তথাকথিত পঞ্চপাণ্ডবসহ কারো বিদায় সঠিক সময়ে সঠিক পথে হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান ছন্নছাড়া অবস্থান থেকে উন্নয়ন করতে হলে ক্রিকেটকে অবিলম্বে চিহ্নিত সিন্ডিকেটের প্রভাব মুক্ত করতে হবে। ছেলেদের বলেন বা মেয়েদের বলেন উভয় ক্রিকেটে সিন্ডিকেটের প্রভাবে ক্রিকেট কাক্সিক্ষত সাফল্য পাচ্ছে না। সিন্ডিকেটে বোর্ড কর্মকর্তা, নির্বাচক, ক্লাব কর্মকর্তা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ক্রীড়া সাংবাদিকরা জড়িত আছে। বিসিবির উচিত সর্বত্র একটি সঠিক প্রসেস সৃষ্টি করা। সবাইকে দায়িত্ববোধের আওতায় আনা।

দেখুন বাংলাদেশ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো খেলেছে। অনেক তরুণ প্রতিভা আছে, ট্যালেন্ট হান্টিং করলে আরো উঠে আসবে। তাবু কেন জাতীয় দল নির্বাচনে কিছু ক্রমাগত ব্যর্থ খেলোয়াড়দের ওপর অতি নির্ভরশীলতা? কেন এতো দিনেও মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, রিয়াদদের যোগ্য উত্তরসূরি পাওয়া গেলো না? কেন সাব্বির, নাসিররা হারিয়ে গেলো? কেন বিপিএল ব্র্যান্ডিং পেলো না? সবাই জানে সবকিছু। বুলবুলকে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় দলগুলো নিয়েও কিছু ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিতে হবে। আমি মনে করি সঠিক প্রসেস নেয়া হলে তিন-পাঁচ বছরে টপ পাঁচ-ছয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছানোর সোনালি সম্ভাবনা রয়েছে নারী এবং পুরুষ ক্রিকেট দলের।

শেয়ার করুন