২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:০৮:১১ অপরাহ্ন


মার্কিন শিশুদের পর্ণোগ্রাফি : বাংলাদেশী আমিন গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৩
মার্কিন শিশুদের পর্ণোগ্রাফি : বাংলাদেশী আমিন গ্রেফতার ২৪ বছর বয়সী জোবায়দুল আমিন


আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফার এবং নির্যাতনকারী বাংলাদেশি জোবায়দুল আমিনকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে গ্রেফতার করেছে মালয়েশিয়ান পুলিশ। যদিও মালয়েশিয়ান পুলিশকে সবধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। জোবায়দুল আমিনের বয়স মাত্র ২৪ বছর। সে মালয়েশিয়ায় থাকতো। সেখানে বসেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় শতাধিক শিশুর পর্নোগ্রাফি তৈরি করে ইন্টারনেটে ছেড়ে ব্যবসা করছিলো। আলক্সা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি সূত্রে জানা যায়, জোবায়েদুল আমিন ২০২১ সাল থেকেই প্রতারণার এই ফাঁদ তৈরি করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্ট করেন। সেই সাখে তৈরি করে ড্রাফ বক্স। অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ১৫ বছরের নিচে শিশুদের সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। সেখানে জোবায়েদুল আমিনও নিজেকে ১৫ বছরের শিশু বলে দাবি করেন। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গভীর হলে জোবায়েদুল আমিন তাদের সাথে যৌনতা বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। একইসাথে তাদের সাথে ছবি আদান-প্রদান করেন। ছবি আদান-প্রদান করার সময় প্রথম সুন্দর ছবি আদান-প্রদান করতেন এবং বিশ্বাসী হয়ে উঠতেন। যৌনতা বিষয়ক আলাপ-আলোচার মাধ্যমে তাদের খোলামেলা ছবি দেয়ার জন্য বলতেন। খোলামেলা ছবি পাঠানোর পর তাদের আহ্বান করতো উলঙ্গ ছবি পাঠাতে। উলঙ্গ ছবি পাঠানোর পর তাদের বাধ্য করতেন পর্নোগ্রাফি তৈরি করে তা পাঠাতে। পর্নোগ্রাফি না পাঠাতে চাইলে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। বলতেন তোমার উলঙ্গ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তোমার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। যে কারণে অনেক সময় ভয়েই শিশুরা তাদের পর্নোগ্রাফি পাঠাতে বাধ্য হতো। এক পর্যায়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে ব্যবসা করতো। তার এই প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রথমে সোচ্চার হয়েছিলো আলাক্সার এক মেয়ে। সে আলাক্সা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে অভিযোগ করে। জোবায়েদুল আমিন অত্যন্ত চতুর এবং ধুরন্ধর। এভাবেই সে কয়েকশ শিশুর পর্নোগ্রাফি তৈরি করে। যতোবারই অভিযোগ করা হয়, ততোবারই সে অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন করতো এবং নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট করতো। এক পর্যায়ে জোবায়েদুল আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফার এবং শিশুনির্যাতনকারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আলাক্সার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির বর্ণনা অনুযায়ী জোবায়েদুল আমিন কয়েকশ শিশুকে তার প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এ অসুস্থ কাজ করতো। আলাক্সা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস থেকে প্রায় ২৫ জন শিশুর ঘটনা বর্ণনা করেন। যেখানে দেখা যায়, প্রতারক এবং চালাক জোবায়েদুল আমিন কয়েকশ বার তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলে। এই মামলার দায়িত্ব গ্রহণ করে এফবিআই। এফবিআই সবা ঘটনাই তদন্ত করেন, কিন্তু তার অবস্থান পরিষ্কার করতে পারছিলেন না। এক সময় তার অস্ত্র তার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করেন। স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তার সাথে শিশু সেজে যোগাযোগ করেন। এফবিআইয়ের সেই ফাঁদে চতুর জোবায়েদুল আমিন যোগাযোগ করেন। সেই সূত্র ধরেই এফবিআই তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। সেই অনুযায়ী, আলাক্সা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেন এবং সমস্ত ডকুমেন্ট পাঠিয়ে দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০২২ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে। আমেরিকায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মালয়েশিয়ার রয়েল পুলিশও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে সে মালয়েশিয়ার কারাগারে রয়েছে এবং বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১২টি বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়েছে। যার মধ্যে গুরুতর হচ্ছে শিশুর পর্নোগ্রাফি তৈরি এবং প্রতারণা।

আলাস্কার অ্যাটর্নি জেনারেল এস লেন ট্যাকার বলেন, এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। একটি শিশু জীবন শুরু করার আগেই তার জীবন ধ্বংস করে দেয়া। এই মামলার তদন্তকাজে ছিলো মালয়েশিয়া পুলিশ, আলাস্কা স্টেট ট্রুপারস, অ্যাঙ্করেজ পুলিশ বিভাগ, লারামি পুলিশ বিভাগ (ওয়াইমিং), ওয়াইমিং ডিভিশন অব ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন, ওয়াইমিং ইন্টারনেট অপরাধ শিশুদের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্স, ইয়ামহিল কাউন্টি শেরিফের অফিস (ওরেগন), মার্সার কাউন্টি শেরিফের অফিস (ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া), মার্সার কাউন্টি শেরিফের অফিস (ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া), কানাওহা কাউন্টি শেরিফের অফিস (ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া), গার্নসি কাউন্টি শেরিফ বিভাগ (ওরেগন), ক্লে কাউন্টি শেরিফের অফিস (ফ্লোরিডা), ডিসিহুটাস কাউন্টি শেরিফের অফিস (ওরেগন); এইচএসআই ওয়েনাচি, ডব্লিই/বেন্ড, বা; এবং পোর্টল্যান্ড, মিনিয়াপলিস, সিয়াটল, সল্টলেক, ডেনভারে এফবিআই ফিল্ড অফিস, জ্যাকসনভিল, সিনসিনাটি, ডেট্রয়েট, আটলান্টা, স্যাক্রামেন্টো, পিটসবার্গ, মিলওয়াকি, লস অ্যাঞ্জেলেস, নেওয়ার্ক এবং ওকলাহোমা সিটি। যে সমস্ত স্টেট এই মামলার তদন্তে ছিলো এসব স্টেটের শিশুরা জুবায়েদুল আমিনের প্রতারণার শিকার। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইউএস অ্যাটর্নি অ্যাডাম আলেকজান্ডার এবং জেনিফার আইভার্স মামলাটি পরিচালনা করছেন।

শেয়ার করুন