২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:২১:৫১ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদের একাধিক সফর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৩
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদের একাধিক সফর


বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে একের পর এক প্রতিনিধি আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বিশেষ করে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতকরনণ ও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিতেই মূলত তাদের আসা। এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিয় অনেক বিষয়ও থাকে কখনো কখনো। সর্বশেষ, সফর করে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচিত রিচার্ড নেফিউ। ঢাকায় তার ব্যস্ততম সফরে আলোচনা করেছেন দুর্নীতি দমন ও অর্থ পাচার বন্ধে সহযোগিতার বিষয়ে। তার তিন দিনের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রসচিবসহ দুর্নীতি দমন এবং অর্থ পাচার নিয়ে কাজের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এসময় কিছু তথ্যও দিয়ে গেছেন, যা পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। 

এরপরও দফায় দফায় আসছেন মার্কিনীরা। 

কেন মার্কিনীদের এমন দফায় দফায় সফর  

শুধু নির্বাচনের প্রাক্কালেই নয়। বেশ ক’বছর ধরেই বিভিন্ন পর্যায়ের মার্কিন নেতৃবৃন্দ সফর করছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিনিধিগণ সফর করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশে মার্কিনীদের আসার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম রোহিঙ্গা ইস্যু। এ ছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে।

 তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। দেশ দুটির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর রয়েছে। পাশাপাশি দ্বৈত কর এড়ানোর জন্যও চুক্তি করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছিল ৪৬ কোটি ডলার, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ০.৪ শতাংশ বেশি। দুই সরকারের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বার্ষিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। টিকফা বৈঠকের আলোচনায় বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার প্রবেশের সুযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য। আর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য।

ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে একটা গভীর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাংলাদেশের। সে আলোকে যুক্তরাষ্ট্রও কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের স্বচ্ছতা চেয়ে আসছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ব্যাপারে অভিন্ন  মতামত পোষণ করে। ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব সংলাপ’ বাংলাদেশকে অভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক লক্ষ্যসমূহকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে এবং চলমান ও আগামীর সহযোগিতামূলক কার্যক্রমকে কৌশলগত নির্দেশনা দেয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব সংলাপ’ সম্মেলনে নানা ধরনের বিষয় আলোচিত হয়। এর মধ্যে ছিল: গণতন্ত্র ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা। প্রতিনিধিদলগুলো টেকসই উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারগুলোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে কাজ করে। এর আগে দুই দেশের মধ্যে পঞ্চম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালে, ওয়াশিংটন ডিসিতে। ফলে এসবের জের ধরেই বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুটা দায়বদ্ধতা রয়েই গেছে। আর সেটা সম্পুর্ন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে। 

রিচার্ড নেফিউ’র পর কে আসছে বাংলাদেশ সফরে 

জানা গেছে, চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিরক্ষা সংলাপে যোগ দিতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক কমান্ডের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস জেমস। এ ছাড়া আগামী মাসের প্রথমার্ধে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ ঢাকায় পৌঁছবেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের বৈঠকে যোগ দেবেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, আগামী দুই মাসে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধিদলের ঢাকায় নিয়মিত ফোরামে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সংলাপ এবং টিকফা পরিষদের বৈঠক প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তবে নিরাপত্তা সংলাপ ঢাকায় হওয়ার কথা থাকলেও তা চূড়ান্ত হয়নি। তিনি জানান, দুই দেশের নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিন্স নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যেসব বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে সমঝোতা রয়েছে, এর মধ্যেও কিছু দ্বিমত বা মতপার্থক্য তৈরিও হয়েছে। এরমধ্যে মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়টি অন্যতম। 

আর এ ব্যাপারে বার বার তাগিদ দিয়ে একমত না হতে পেরেই গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। এরপর ১১ জুলাই চার দিনের ঢাকা সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, সাথে ছিলেন ডোনাল্ড লু।

বিশেষ করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, এরপর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপসংক্রান্ত ভিসা নীতিকে তারই প্রতিফলন বলে মনে করা হয়।তবে দুই দেশই নানা পর্যায়ে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রেখে চলেছে ।

এ ছাড়াও নির্বাচন পূর্ব-পরিস্থিতি মূল্যায়নে অক্টোবরে ঢাকা আসছে একটি মার্কিন পর্যবেক্ষক টিম। প্রস্তাবিত সূচি মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আগামী ৮ অক্টোবর বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা। ওই টিমে ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) ৩ জন এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) ৩ জন বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।  ঢাকায় অবস্থানকালে তারা ১২ অক্টোবর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের (স্টেক হোল্ডার) সঙ্গে তারা বৈঠক করবেন। 

গত পহেলা আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের আসার কথা জানিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ফলে সকল মার্কিন প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফরের অর্থই কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যু তা নয়, এরবাইরেও রয়েছে অনেক কিছু।  

শেয়ার করুন