২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৪৬:১৭ পূর্বাহ্ন


দেশকে শরিফ নুরুল আম্বিয়া
জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর নৈতিক শক্তি সরকারের নেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর নৈতিক শক্তি সরকারের নেই শরিফ নুরুল আম্বিয়া


বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো নৈতিক শক্তি সরকারের নেই। উপরন্তু জামায়াত নিয়ে সরকারে অবস্থান জনমনে গভীর সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনকালিন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই, যারা ঐসময়ে ক্ষমতায় থাকবেন তাদেরকে অবশ্যই নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে হবে। দেশের এই প্রবীন রাজনীতিবিদ শরিফ নুরুল আম্বিয়া আমেরিকার থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় চলমান রাজনীতি নিয়ে মতামত জানাতে গিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদকে এসব কথা বলেছেন। 

দেশ:  প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধান মোতাবেক। বিএনপি যদি এ দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়, তবে তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার উচ্চ আদালত বাতিল করেছেন। তাই এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। এ ধরনের বক্তব্যকে কিভাবে দেখেন। আপনি কি মনে করেন এই ধরনের বক্তবের পর চলমান রাজনৈতিক সংকটের কোনো সমাধানের পথে যাবে?

শরিফ নুরুল আম্বিয়া: সরকার পক্ষ আপাতদৃষ্টিতে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেছে। জনগণের আকাংখার সাথে সরকার পক্ষের ইচ্ছার ব্যবধান অনেক। ২০১৮ সনের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় জনগণ সরকারের এই অনড় অবস্থান যৌক্তিক মনে করে না। বরং সরকারের এমন বক্তব্য জনগণকে আন্দোলনে উস্কে দেবে। দেশের মানুষ একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতায় বাধ্য থাকে এমন নির্বাচিত সরকার এখন সময়ের দাবি। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও, এখন পর্যন্ত যা দেখা যায়, পশ্চিমা শক্তি-যাদের সংগে আমাদের ব্যবসাবাণিজ্য বেশি তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে ইতিমধ্যে  কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের ধারণা এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমারা মনে করি শান্তিপূর্ণভাবে সংকট উত্তরণের সময় এখনো রয়েছে।

দেশ: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনেই সরকার আবারও বিএনপিসহ বিরোধী দল ছাড়াই নির্বাচন করে ফেলতে পারে- এধরনের মনোভাবই কি দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে না?

শরিফ নুরুল আম্বিয়া: এমন একটা নির্বাচন এই সরকার করতে পারবে বলে মনে করি না। তারপরও, বিরোধীদল বিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা যদি করা হয় তা দেশে চরম অস্থিরতা ও  বিশৃংখলার জন্ম দেবে এবং এর সকল দায় বর্তমান সরকার প্রধানের উপর বর্তাবে। বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত লুটেরা-দুর্বৃত্ত এবং কায়েমি স্বার্থবাদীরা এমন অবাঞ্ছিত নির্বাচনের সুযোগ-সম্ভাবনা নিয়ে গল্প ফাঁদতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক বিচারে এর কোন সম্ভাবনা দেখিনা এখনো।

দেশ: আপনার কি মনে হচ্ছে না মাঠে শক্ত বিরোধিতা দৃশ্যমান না বলেই কি এমন সাহস দেখাতে পারছে সরকার?

শরিফ নুরুল আম্বিয়া: সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীদাররা ধৈর্য সহকারে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হয়। বিরোধী পক্ষের শক্তিসামর্থ্য পরীক্ষা করার চেষ্টা বড় ভুল হবে।

দেশ: নাকি সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের জোড়ে তাদের প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে। সেই কারণেই এমন টা হচ্ছে?

শরিফ নুরুল আম্বিয়া: উন্নয়ন যতটা দেখা যায়, ততটা জনপ্রিয়তা সরকার পায়নি। দুর্নীতির উঁই পোকা তা খেয়ে ফেলেছে। সরকারের উন্নয়ন নীতি লুটেরা দুর্নীতিবাজদের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করেছে। তারপরও, যে উন্নয়ন হয়েছে তাকে টেকসই ধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন এবং  জবাবদিহিতায়  বাধ্য নির্বাচিত  সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সরকারের এমন অবস্থানের পেছনে সম্ভবত লুটেরা-দুর্বৃত্তদের আগ্রাসী ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে।

দেশ: এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিএনপিসহ মাঠের আরও বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচন করে ফেললে কি মনে করেন কারো পক্ষেই সেটি তা ঠেকানো যাবে না?

শরিফ নুরুল আম্বিয়া: জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মত নৈতিক শক্তি সরকারের নেই। উপরন্তু জামায়াত নিয়ে সরকারে অবস্থান জনমনে গভীর সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

দেশ: আসলে পুরো রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আপনার পরামর্শ কি?

শরিফ নুরুল আম্বিয়া: আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম আলোচনার জন্য সহায়ক হবে, কেননা আলোচনার মাধ্যমেই  নিস্পত্তি হবে।  দেশের স্বার্থে সময় থাকতে সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে,-সেটাই কামনা করি। নির্বাচনকালিন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই, যারা ঐসময়ে ক্ষমতায় থাকবেন তাদেরকে অবশ্যই নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে হবে।

শেয়ার করুন