২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৩:১৬:০০ পূর্বাহ্ন


লড়াই হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ১৮ সেপ্টেম্বর : কেন্দ্র ৫, ভোটার ২৭৫১০
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২২
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ১৮ সেপ্টেম্বর : কেন্দ্র ৫, ভোটার ২৭৫১০


আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর প্রবাসের অন্যতম মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির বহুল আলোচিত নির্বাচন। এই নির্বাচন হবার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর। কিন্তু নয়ন-আলী প্যানেলের দুই সদস্য প্রার্থীর মামলার কারণে ঠিক দুদিন আগে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। যে কারণে এই দুই জন সদস্য মামলা করেছিলেন, কোর্টে গিয়েও তারা তাদের পক্ষে রায় আনতে পারেননি। তার ওপরে ছিল করোনার তাণ্ডব। যে কারণে বাংলাদেশ সোসাইটির কাক্সিক্ষত এবং সোসাইটির ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি এবং মামলার নিষ্পত্তির কারণে নির্বাচন কমিশন নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আলোচিত এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো ১৪ নভেম্বর। কিন্তু বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্য নীরা এস নীরুর মামলার কারণে নির্বাচন আবারো স্থগিত ঘোষণা করে মাননীয় আদালত। অবশেষে সেই মামলারও নিষ্পত্তি হয়েছে। যদি ইতিমধ্যে ওসমান চৌধুরী আবরো নির্বাচন স্থগিতের আবেদন করবেন।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশন আবারো নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন। সেই তারিখ অনুযায়ী বাংলাদেশ সোসাইটির কাক্সিক্ষত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর।

এবারের নির্বাচনে দুটো প্যানেল এবং ২ জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী নির্বাচন করছেন। রব-রুহুল প্যানেলের প্রার্থী সংখ্যা হচ্ছে ১৯ এবং মামলায় হেরে যাবার কারণে নয়ন-আলী প্যানেলের প্রার্থী সংখ্যা হচ্ছে ১৭। স্বতন্ত্র ২। সব মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৮ জন। রব-রুহুল প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রুহুল আমিন সিদ্দিকী। নয়ন-আলী প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি প্রার্থী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী। স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী জয়নাল আবেদীন এবং স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সোহেল। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে সর্বমোট ২৭ হাজার ৫১০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে সাধারণ ভোটার ২৭ হাজার ২২ জন এবং আজীবন সদস্য ৪৮৮ জন। একটি সূত্রে জানা গেছে, কুইন্স কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার ৬ হাজার ৮৭৮ জন এবং আজীবন সদস্য ১৬২ জন। ব্রুকলিন কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার ৫ হাজার ৯৬৭ জন এবং আজীবন সদস্য ৭৩ জন। ব্রঙ্কস কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার ৪ হাজার ৯৬৩ জন এবং আজীবন সদস্য ৫০ জন। জ্যামাইকা কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার ৪ হাজার ৯৬১ জন এবং আজীবন সদস্য ১৬৬ জন। ওজনপার্ক কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার ৪ হাজার ২৫৩ জন এবং আজীবন সদস্য ৩৭ জন।

নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান জামাল আহমেদ জনি জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে ৫ কেন্দ্রে মোট ৬০টির মতো মেশিন ব্যবহার করা হবে। ৫টি কেন্দ্র হচ্ছে উডসাইডের গুলশান টেরেস, ব্রুকলিনের পিবএস ১৭৯, জ্যামাইকার ইকরা সেন্টার, ব্রঙ্কসের গোল্ডেন প্যালেস এবং ওজনপার্কের দেশি সেন্টার। ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল ৯টা এবং তা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শেষে প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে এবং উডসাইডের গুলশান টেরেস হবে প্রধান ভোটকেন্দ্র। সেখান থেকেই সব কেন্দ্রের ফলাফল যোগ করে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হবে। দেশ পত্রিকার এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি জানান, আমাদের ৫ জন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, খোকন মোশাররফ, রুহুল আমিন সরকার এবং কায়সারুজ্জমান কয়েস ৫টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। ৬০টি মেশিনের মধ্যে ১৭টি দেয়া হবে গুলশান টেরেসে, ১৩টি মেশিন থাকবে ব্রুকলিন কেন্দ্রে, ১০টা থাকবে ওজনপার্ক কেন্দ্রে, জ্যামাইকায় থাকবে ৯টি মেশিন এবং ব্রঙ্কসে থাকবে ১১টি মেশিন। প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন ১৫ জন, পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন ৮৫ জন, মেশিন অপারেটর থাকবেন ৩৫ জন,  প্রতিটি কেন্দ্রে হেল্প ডেস্কে দায়িত্ব পালন করবেন একজন অফিসার। টেকনিশিয়ান থাকবেন ৭ জন এবং সিকিউরিটি থাকবে ৪৫ জন। আরেক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, ভোটাদের ভোট প্রদান করতে হলে ভোটার লিস্টে থাকা নামের সাথে জন্ম বছর মিলতে হবে। এই দুটোর কোনোটির একটি না মিললে কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে কমিশন সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচন একটি নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। কারণ এর আগে কখনো ২৭ হাজার ৫১০ জন ভোটার ছিল না। আবার এবারের নির্বাচনটি হচ্ছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শুধু নির্বাচন কমিশনকে মামলার কারণে ২ লাখ ৯ হাজার ডলার গচ্চা দিতে হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্যানেল এবং প্রার্থীদেরও অনেক অর্থ অপচয় হয়েছে। কিন্তু এসব অর্থের দায়িত্ব কাদের- এমন প্রশ্ন অনেকের। তারা আরো বলেন, মামলা যদি করারই খায়েস ছিল তাহলে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে কেন? ষড়যন্ত্র কাদের ছিল? এর উত্তর কি নির্বাচনী ফলাফলে মিলবে? নাকি গড্ডালিকা প্রবাহে সবাই গা ভাসাবেন? মামলাবাজরা কী যোগ্য উত্তর পাবেন ব্যালটে নাকি ১০ ডলারে বিবেক বিক্রি করবেন?

এবারের নির্বাচনে ভোট বানিয়েও স্বস্তিতে নেই কেউ। ভাঙাগড়ায় নতুন খেলায় নতুন সমীকরণ আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে। কারো কারো পকেট ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা নিজের পকেটের অর্থ দিয়ে ভোটার বানানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত। নানান সমীকরণে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। আবার ভোটার সংখ্যা বেশি হলেও এতো ভোটার কেন্দ্রে আসবেন না- এমন মন্তব্য অনেকের। কারো কারো মতে অর্ধেক ভোটও কাউন্ট না হতে পারে। একদিকে ভাঙাগড়া, অন্যদিকে ভোটার কম আশার শঙ্কায় কারো পৌষ মাস আবার কারো সর্বনাশ হতে পারে। অন্যদিকে সভাপতি জয়নাল আবেদীনও কারো কারো জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তার ভোটও জয়-পরাজয়ের সমীকরণে ভূমিকা রাখতে পারেন। গণেশ উল্টেও যেতে পারে। এখনো পর্যন্ত তিনি ভোটের মাঠে নেই। জানা গেছে, নির্বাচনের তিনদিন আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে আসবেন। ইতিমধ্যেই ভোটাররা তাদের মাইন্ড সেট করেছে। কারণ তাদের ধারণা তিনি ভোটের মাঠে নাও থাকতে পারেন। তার ভোট অন্য প্যানেলে চলে যাবে। তবে এবারের নির্বাচন হবে জমজমাট। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে রব-রুহুল প্যানেলের সাথে নয়ন-আলী প্যানেলের। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি বা সেয়ানে সেয়ানে। তবে যারা চ‚ড়ান্ত দিনে ভোট বেশি আনতে পারবেন তাদের দিকেই ফলাফল ঝুঁকেপড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারাই বাজিমাত করতে পারেন। কম ভোট আসাও কারো জন্য আশীর্বাদ আবার কারো জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে আরেকটি শঙ্কা রয়েছে আর সেটি হচ্ছে একক প্যানেল না যাওয়ারও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। জানা গেছে, সচেতন ভোটাররা উভয় প্যানেল এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের নিয়ে তৃতীয় একটি প্যানেল করেছেন।

এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আব্দুর রব মিয়ার সাথে কাজী আশরাফ হোসেন নয়নের, সাধারণ সম্পাদক পদে রুহুল আমিন সিদ্দিকীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মোহাম্মদ আলীর। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আব্দুর রহিম হাওলাদারের সাথে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দেয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সহ-সভাপতি পদে ফারুক চৌধুরীর সাথে মোহাম্মদ রেজাউল করিম সগিরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মিয়া মোহাম্মদ দুলালের সাথে আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কোষাধ্যক্ষ পদে নওশাদ হোসেনের সাথে মোহাম্মদ জে খান ডিউকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আহসান হাবিবের সাথে আবুল কামাল ভুইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সংস্কৃতিক সম্পদক পদে মনিকা রায়ের সাথে ডা. শাহানাজ লিপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জনসংযোগ এবং প্রচার সম্পাদক পদে রিজু মোহাম্মদের সাথে শেখ হায়দার আলীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে আবুল কাশেম চৌধুরীর সাথে মোহাম্মদ টিপু খানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সাহিত্য সম্পাদক পদে মোহাম্মদ হাসান জিলানীর সাথে ফয়সল আহমেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ক্রীড়া সম্পাদক পদে মাইনুল উদ্দিন মাহবুবুরে সাথে মোহাম্মদ এইচ রানার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। স্কুল ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সামাদ মিয়ার সাথে প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কার্যকরি সদস্য পদে রব-রুহুল প্যানেলের ২ জন প্রার্থী জয়লাভ করবেন। যে ২ জন বেশি ভোট পাবেন, তারা সরাসরি নির্বাচিত হবেন। তবে সদস্য পদে ফারহানা চৌধুরী, সাদী মিন্টু ও এ বি সিদ্দিক ভালো অবস্থানে রয়েছেন। যাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তারা হলেন- শাহ মিজান, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আখতার বাবুল, সুশান্ত দত্ত, ছাইদুর খান, মোহাম্মদ মাহমুদ আলম ও আহসান উল্লা।

এদিকে শেষ সপ্তাহে উভয় প্যানেল বিরামহীনভাবে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই প্রতিটি প্রার্থী এককভাবে ভোট প্রার্থনায় নেমে পড়েছে। পর্দার আড়ালে চলছে নানামুখী খেলা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে যাদের ভূমিকায় ফলাফলে প্রভাব সৃষ্টি করে তাদের সাথে লাগাতার বৈঠক। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যেই তিনজনই এক প্যানেলের পক্ষে কাজ করছেন। তবে সরাসরি কাউকেই জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না। তবে তারা ভিতরে ভিতরে চূড়ান্তভাবে কাজ করছেন। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিন, ওজনপার্ক, জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কসে রব-রুহুল, নয়ন-আলী প্যানেলের পরিচিতি সভা অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন