২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:০১:৫৯ অপরাহ্ন


লস অ্যাঞ্জেলেসে সম্মেলন অপরাধী মুক্ত করা হলো ফোবানা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২২
লস অ্যাঞ্জেলেসে সম্মেলন  অপরাধী মুক্ত করা হলো ফোবানা


৩৬তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর লেবার ডে উইকেন্ডে হলিউডের শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে। এবারের ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যারিয়ট বারব্যাংক এয়ারপোর্ট হোটেলের বলরুমে। সেই সাথে ফোবানাকে অপরাধী মুক্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে নতুন কমিটি। দীর্ঘদিন থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিলো ফোবানাকে অপরাধী মুক্ত করার কিন্তু আমরা সেটা পারছিলাম না। কারণ অপরাধীরাই শক্তিশালী ছিলো। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা নিয়ে ফোবানা সম্মেলন শুরু করেছিলাম, তারা সেই চেতনার বিরোধী ছিলো। যে কারণে গত ওয়াশিংটন সম্মেলনেও তারা নানাভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে। গত ২ জুলাই নিউইয়র্কে ফোবানার নির্বাহী কমিটি এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের হোস্ট কমিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানে ফোবানার কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোবানার চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান।

তিনি বলেন, কমিউনিটির ইমেজ বহুজাতিক সমাজে প্রশ্নবিদ্ধ হবে যদি নানাবিধ অপরাধে দÐ ভোগকারীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে না পারি। প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রজন্মও লজ্জাবোধ করেন চিহ্নিত অপরাধীরা ফোবানার মঞ্চে উঠলে। তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন ১৯৮৭ সালে ফোবানার যাত্রা শুরু হয়েছে উত্তর আমেরিকায় প্রবাসীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং প্রবাসে স্বপ্ন পূরণে মূলধারায় সম্পৃক্ততার প্রত্যাশায়। সে তাগিদেই আজকের এ আয়োজন। তিনি বলেন, জানি আপনাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সর্বপ্রথমে প্রশ্ন করবেন আমরা ইসি কেন কার্যকরি কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি তৈরি করলাম এবং কেন নতুন করে লস অ্যাঞ্জেলেসে ৩৬তম ফোবানা সম্মেলন করার ঘোষণা দিলাম। তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন, যখন কাউকে ঠেলতে ঠেলতে পিছনে নিয়ে যায় এবং তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন দুটি উপায় থাকে তাদের সামনে। একটি হচ্ছে বাধা-বিপত্তিকে ঠেলে সামনে দিকে এগিয়ে যাওয়া অথবা দেয়াল চ্যাপ্টা হয়ে থাকা। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে সৃষ্টিতে যাওয়ার জন্য বর্তমান কার্যকরি কমিটি ভেঙে দিয়েছি। কারণ সৃষ্টিতে ফোবানার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিলো উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশি ও নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চেতনা এবং চর্চার প্রতি অনুপ্রেরণা, উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করা। সেই ফোবানার আদর্শকে ভুলে গিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা ফোবানার মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরে গিয়ে ফোবানার মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোবানাকে করপোরেট ফোবানায় পরিণত করেছে। আমরা এই ফোবানাকে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সকল সিন্ডিকেট, সকল করপোরেট মনোভাব পরিহার করে ফোবানাকে তার সঠিক পথে চলার নকশায় ফিরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য প্রবাসী শিল্পী, সাহিত্যিকদের সুযোগ সৃষ্টি করা, প্রেরণা উৎস হিসেবে কাজ করা এবং তার ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা সংস্কৃতির ফাগুনধারা প্রবাহিত করা। তিনি বলেন, পূর্বে ঘোষিত শিকাগোর ফোবানা সম্মেলন বাতিল করে নবতরভাবে নতুন লক্ষ্যে ফোবানা সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসকে দায়িত্ব দেয়া। এখানেও ফোবানা পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির অবতারণা করা হয়েছে। আপনারা ইতিমধ্যেই দেখেছেন স্বাগতিক সংগঠন হিসাবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গÐগোল হয়ে থাকে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে ফোবানার লক্ষ্যকে প্রাধান্য দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনসমূহ আয়োজিত স্বাগতিক সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে ফোবানা।

ফোবানার সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও বর্তমান কমিটির আউটস্ট্যান্ডিং মেম্বার জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ইমিগ্রেশনের জালিয়াতির জন্যে ওয়াশিংটনের মোহাম্মদ আলমগীর এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত মাসুদ রব চৌধুরী দীর্ঘমেয়াদে জেল খেটেছেন। দীর্ঘদিন থেকেই এদেরকে ফোবানা থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু নামসর্বস্ব সংগঠনের মাধ্যমে এরা নিজেদের দাপট অব্যাহত রেখেছিল। অতি সম্প্রতি আমাদের সেই প্রয়াস সফল হয়েছে এবং আতিকুর রহমানকে চেয়ারম্যান ও ড. রফিক খানকে নির্বাহী সচিব করার মধ্য দিয়ে। তিনি আরো জানান, একইসাথে শিকাগোতে ফোবানার যে সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছিল সেটিও বাতিল করা হয়েছে। কারণ মাত্র ৫০০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তন ভাড়া করা হয়েছিল শিকাগোতে। 

সংবাদ সম্মেলনে লস অ্যাঞ্জেলেস হোস্ট কমিটির প্রেসিডেন্ট জাহিদ হোসেন জানান, আমরা প্রস্তুতির সময় পেয়েছি মাত্র সোয়া দুই মাস। এরই মধ্যে কয়েক হাজার মানুষের আসনবিশিষ্ট অডিটরিয়াম ভাড়া করা হয়েছে। আশা করছি হাজার দশেক প্রবাসীর সমাগম ঘটবে। তিনি সকলের সপরিবারে যোগদানের কথা জানিয়েছেন। 

‘আমরা করবো জয়’ সেøাগানে লস অঞ্জেলেস সম্মেলনের হোস্ট কমিটির কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জমির বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে ফোবানা প্রতিষ্ঠার সংকল্পের পরিপূরক কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। প্রবাসের শিল্পীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। উন্নয়ন-অভিযাত্রার পরিপূরক সেমিনারে দেশ ও প্রবাসের অভিজ্ঞজনেরা অংশ নেবেন। মার্কিন রাজনীতিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। 

১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফোবানার অভিযাত্রার কথা স্মরণ করে সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান কমিটির আউটস্ট্যান্ডিং মেম্বার বেদারুল ইসলাম বাবলা বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে রাখতে নানা কর্মসূচি রয়েছে।

গত বছর ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩৫তম ফোবানার হোস্ট কমিটির সদস্য সচিব শিব্বির আহমেদ বলেন, গত সম্মেলনে অপরাধী এবং স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের অনুষ্ঠান বানচালের ষড়যন্ত্র করেছিলো। সম্মেলন সফল করতে আমাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছিলো। এতোদিন পর্যন্ত ফোবানা স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠীর কাছে বলতে গেলে জিম্মি ছিলো। সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি।

সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে আরো ছিলেন ফোবানার নতুন কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম কলিন্স। এর আগে শুরুতে বিপুল করতালির মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান আতিকুর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান নিউইয়র্কের কর্মকর্তারা। একইসাথে গত ফোবানা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণের জন্য কর্মকর্তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদম আমদানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, একটি গোষ্ঠী আদম আনার চেষ্টা করেছিলো, আমরা জানতে পেরে তা ব্যর্থ করে দিই। যার জন্য আমাদের অনেক কাগজপত্র পাঠাতে হয়েছিলো ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে।


শেয়ার করুন