১৫ মে ২০১২, বুধবার, ০৯:৫১:১১ পূর্বাহ্ন


সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৪-২০২৪
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে  দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি এসব কথা বলেছেন, একটি গৌরবান্বিত মুক্তিসংগ্রামের ভেতর দিয়ে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, অসা¤প্রদায়িক, মানবিক মূল্যবোধ, সম্মান, সমৃদ্ধ ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকার ও বেসরকারি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা যেখানে অসমতা থাকবে না, কুসংস্কার থাকবে না, সমাজের কোনো জনগোষ্ঠী ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গভেদে বৈষম্যের শিকার হবে না, থাকবে না ক্ষুধা।

শিশু একাডেমিতে ডিএসকে সভাপতি ডঃ নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ৩৫ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি এসব কথা বলেন।

প্রথম অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএসকের নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ স্বাগত ভাষণে বলেন, বিগত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যস্থ হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষন ও সুরক্ষায় বাংলাদেশকে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয়ে উন্নয়নে কৌশলে যত ধরণের নেতিবাচক প্রবনতা আছে সেগুলো বন্ধ করতে (থামাতে) হবে। বাংলাদশে প্রকৃতি ভিত্তিক, পদ্ধতি অনুসরণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তে বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল, বিল, হাওর, বাওর সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রকৃতি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পিকেএসএফ চেয়ারম্যান, ড. এম খায়রুল হোসেন,সাবেক রাষ্ট্রদূত, অর্থনীতিবিদ, সম্মানীয় ফেলো, সিপিডি, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য; এমআরএ নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন, অবসাইট, সিআইবি ও আইসিটি), মুহাম্মদ মাজেদুল হক; টহরপবভ ইধহমষধফবংয, ঙওঈ, ঈযরবভ ড়ভ ডঅঝঐ, গৎ. জধঢ়যধবষ ঘড়িুড়ৎ; ওয়াটারএইড বাংলাদেশ দেশীয় পরিচালক, হাসিন জাহান; ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক, আসিফ সালেহ্; আবু আবদুল­াহ মোঃ ওয়ালী উল্লাহ উপপরিচালক (শিশু সুরক্ষা শাখা) সমাজসেবা অধিদপ্তরের; ডিএসকে’র ঋণ কার্যক্রমের সদস্য, মোসা: রেজিয়া বেগম।

পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, দেশে দারিদ্র নিরসনে তৃণমূল সংগঠন ও সমিতি গড়ে তোলে স্বাস্থ্য শিক্ষা জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম অত্যন্ত সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করছে।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ডিএসকে'র মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম গোলাম মরতুজা বলেন, ডিএসকে শক্তিশালী সমাজভিত্তিক সংগঠন (সিবিও), এর মাধ্যমে যারা নিজেরাই নিজেদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন, অগ্রাধিকার চিহ্নিত করার ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে পরিবার ও কমিউনিটি, সরকারি সংস্থা, দাতা সংস্থা ও সকলের অংশগ্রহণ জরুরী। দিনব্যাপী উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনেই পূর্বে কবুতর ও বেলুন উড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎসাহ, উদ্দীপনার সাথে বর্ণিল পরিবেশে উদ্বোধন হয়।

ডিএসকে’র দীর্ঘদিনের সমর্থক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা ব্র্যাক, ওয়াটারএইড, ওয়াটার ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিসেফ, ঢাকা ওয়াসা ও পিকেএসএফ’কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এছাড়া ডিএসকে’র বিভিন্ন স্তরে কর্মরত ৫ জন কর্মীকে তারকা কর্মী হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন সোহাগ মিয়া ( শাখা ব্যবস্থাপক, ঋণ কার্যক্রম), চন্দনা দেবনাথ ( সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক, ঋণ কার্যক্রম), ইয়াসমিন নাহার(মাঠ কর্মকর্তা, ঋণ কার্যক্রম), মোঃ নাজিম উদ্দিন, (কমিউনিটি মবিলাইজার, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প),(মোসা. সাথী বেগম, সহকারী সেবিকা, স্বাস্থ্য কার্যক্রম)। এসব  কর্মীদেরকে ক্রেস্ট, সনদপত্র, নগদ চেক প্রদান করা হয়।

দ্বিতীয় অধিবেশন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পাট বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এ বি এম আব্দুল্লাহ'র সভাপতিত্বে সারাদিন ব্যাপী উদযাপন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন - শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংলাপ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন - ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক ডা. খায়রুল ইসলাম।

কেমন বাংলাদেশ চাই, শীর্ষক উম্মক্ত সংলাপে ধারনা পত্র উত্থাপন করেন ডা. দিবালক সিংহ। বাংলাদেশ ক্রমাগত বিগত দশকে গড়ে সাত শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে, নব্বইর দশকে যেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৩৩০ ডলার যেখানে ২০২৩ সালে তা এসে দাড়িয়েছে ২,৭৬৫ ডলারে। যেখানে নব্বইয়ের দশকে ৫৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র (সীমার নীচে বসবাস করত সেখানে ২০২৩ সালে এসে সে সংখ্যা নেমে গেছে আঠার শতাংশে। যেখানে নব্বইর দশকে স্কুলে থাকার সময়সীমা গড়ে ছিল পাঁচ বছর তা এখন এসে দাড়িয়েছে এগার বছরে। নব্বইর দশকে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ছিল ২.৮ তা এখন এসে দাড়িয়েছে প্রতি লাখ ১৫৬। পাঁচ বছরের কম শিশু মৃত্যু হার এখন এসে দাড়িয়েছে প্রতি হাজারে ২৮ বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ নির্ধারিত উন্নয়নশীল দেশের স্তরে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পাবে।

অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন বলেন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের উন্নয়ন ধারণার প্রধান স্তম্ভ হলো মানুষের মুক্তির-(ঋৎববফড়স) জন্য উন্নয়ন। এ ধারনাকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে তিনি বলেছেন আর মুক্তি নিশ্চিত করতে তার অর্থনৈতিক সুযোগ রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং তার মৌলিক সেবা যথা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে

এম এম আকাশ বলেন, বাংলাদেশ আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় চরম দূর্নীতগ্রস্ত দেশ হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছে। তাছাড়া আমদানির ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানি আয়, দেশে ফেরত না আনা, রপ্তানির ইনভয়েসিং অর্থের পরিমান কমানো, হুন্ডি পদ্ধতিতে ব্যাংক ঋণ বিদেশে পাচার এই চারটি প্রধান প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে প্রতিবছর ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার (এক বিলিয়ন ১০০ কোটি) বিদেশ পাচার হয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন