২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:২৯:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


চুরির কারণে গ্যাস এখন তলাবিহীন ঝুড়ি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০১-২০২৩
চুরির কারণে গ্যাস এখন তলাবিহীন ঝুড়ি


জ্বালানি সেক্টরে একজন প্রফেশনাল হিসেবে বহুদিন থেকে নানাভাবেই বলছি, বাংলাদেশের মতো জনবহুল, অথচ সীমিত সম্পদের দেশ কখনো দ্রুত আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর হয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে না। নিজেদের জ্বালানি (কয়লা, তেলকে) উপেক্ষা করে কোন পরামর্শে বাংলাদেশ আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে গেলো তা আজো উদঘটিত হলো না? জাইকা ও টেপকোর সহযোগিতায় করা ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি) ২০১০’ যদি গ্রহণ করা হলো, তাহলে সে প্ল্যান উপেক্ষা করা হলো কাদের পরামর্শে? দেশে গণতান্ত্রিক সরকার এবং জাতীয় ক্রয়নীতি থাকা সত্ত্বেও কেন জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বিশেষ আইনের আওতায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হলো? কোন ভরসায় পর্যাপ্ত গ্যাস সংস্থান না থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হলো?

 ২০১০-২০২২ কর্মরত জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সচিবরা জবাব দিবেন কি? আজ যে জ্বালানি সংকট তার মূলে আছে অদূরদর্শী পরিকল্পনা। দুর্নীতি দূষিত প্রকল্প চাপিয়ে দেয়া, কয়লাসম্পদ মাটির নিচে ফেলে রাখা, জলে-স্থলে ন্যূনতম গ্যাস অনুসন্ধান না করা।  

২০১০-২০২২ এ দীর্ঘসময়ে বিভিন্ন কার্যকলাপে মনে হচ্ছে, অনেকটা পরিকল্পিত উপায়ে পেট্রোবাংলাকে পঙ্গু করা হয়েছে। কিন্তু এটা সত্যিকার অর্থেই কাদের স্বার্থে? কীভাবে নীতিনির্ধারকরা নিশ্চিত হলো দেশের গ্যাসসম্পদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে? তাহলে কেন, কার উৎসাহ আর পরামর্শে বাপেক্সকে দিয়ে ৫৮টি অনুসন্ধান কূপসহ ১০৮ কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল? কেন মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে শুরু করতেই ৫ বছর লাগলো? এসব এখন বিশাল বড় প্রশ্ন।

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কি সরকারকে জ্বালানি আমদানির পুঁজির জন্য পর্যাপ্ত? জানি গ্যাস প্রকৃতির দান মনে করে এখনো প্রকৃত অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি? সরকারপ্রধান বলছেন, আমদানিকৃত মূল্যেই শিল্পকে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেটাই বাস্তবতা। কিন্তু পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সরকার দায়ী। যে পরিস্থিতি ৩০০ এমএমসিএফডি অতিরিক্ত এলএনজি আমদানি করেও অন্যদের বাদ দিলাম শুধু শিল্পকেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না। দেশের গ্যাস সঞ্চালন এবং বিপণন ব্যবস্থায় অনেক লিকেজ, চুরির কারণে গ্যাস এখন তলাবিহীন ঝুড়ি। সরকার কেন এগুলো সর্বাত্মক প্রয়াস দিয়ে শূন্য করছে না? সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধোয়া তুলসী পাতা নয়। এদের দিকেও সঠিক লোক দ্বারা তীব্র নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।   

আমি মনে করি, শুধু লিকেজ মেরামত এবং চুরি বন্ধ করে ১৫০-২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস কনজার্ভ করা সম্ভব। আমি জানি, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে খুব শিগগিরই অর্থাৎ সম্ভবত মার্চ-এপ্রিলের দিকেই সরকারকে আবারো গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে। তা যদি করতেই হয়, তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণ ক্ষুণ্ণ হবে। মনে রাখা উচিত, এটা নির্বাচনি বছর। এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। ফলে এ সময়ে এ ধরনের বাধ্যবাধকায় সরকারকে চলে যেতে হলে ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি ভীষণ ক্ষুণ্ণ হবে। সরাসরি ক্ষমতাসীনদের ভোটের বাজারে প্রশ্নের মধ্যে থাকতে হবে।  

সর্বশেষ যেটা ভীষণভাবে প্রয়োজন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল তাহলো, প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে দ্রুত জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা। জবাবদিহিতা রয়েছে, কিন্তু এটা আরো স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন। আশাকরি সরকারপ্রধান এমন চিন্তাভাবনায় আস্থা রাখবেন। কেননা, এটাও বাস্তবতা বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সেক্টরের জন্য ভ্যাকসিন জরুরি হয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন