২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:৪৮:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সিত্রাং এর তাণ্ডবে বহু ক্ষয়ক্ষতি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২২
সিত্রাং এর তাণ্ডবে বহু ক্ষয়ক্ষতি সিত্রাং-এর তাণ্ডবে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।


ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং কয়েক দফা গতিপথ পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে চলে গেছে। পটুয়াখালী, নোয়াখালী অঞ্চল এবং চট্টগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিলেট অঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এতে করে গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬ জেলায় অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে মৃত্যুসংবাদ বেশি এসেছে মিরসরাই থেকে। সেখানে সন্দ্বীপ চ্যানেল, ভোলা কুমিল্লা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জনপদ মৃত্যু সংবাদ সকালে কম থাকলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এর তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত হওয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে ঝালকাঠি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বরগুনা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত ও মৃত্যুর সংবাদ এসেছে। 

এ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ফলে সতর্কতা জারির মাধ্যমে মানুষ নিরাপদ স্থানে থাকা পরও এমন প্রাণহানি- গাছপালা উল্টে, ঘরের চাপা পড়ে, নৌকা উল্টে, এরকমভাবে ঘটেছে। 

তবে খুব বড় কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।  বয়ে যাওয়ার সময় এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০/৮০ কিলোমিটার বেগ ছিল। তবে এর স্থায়িত্ব খুব বেশি ছিল না। আঘাত হানার আগ থেকেই শুরু হয় বৃষ্টিপাত। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিল সোমবার মধ্যরাত থেকে সারাদিন ও রাতেও।  এ সময় বৃষ্টিপাত এর সাথে হালকা বাতাস ও দমকা হওয়া বেশ চলতে থাকে।  এবং বৃষ্টির সাথে ছিল দমকা হাওয়া। যাতে গাছপালা ক্ষতিসাধিত হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ ও কাচাঘরবাড়ি। তছনছ হয়ে গেছে এমন বহু ঘরবাড়ি। তবে ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর সংবাদ আরো বাড়তে পারে। 

রাজধানী ঢাকার চিত্র 

সিত্রাং এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাতেও সারাদেশের মত সোমবার ভোররাত থেকেই বৃষ্টিপাত চলতে থাকে। দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত যা দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত। এতে বিভিন্ন সড়কে গাছপালা উল্টে পড়ে। ডাল ভেংগে পরে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সারাদিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে নিম্নআয়ের মানুষের আভাসস্থল তলিয়ে যায়। বহু রাস্তাঘাটও পরের দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত তলানো ছিল। এমনিতেই সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেনেজ ব্যাবস্থা সুবিধাজনক নয় বিধায় উপচে ওঠে ড্রেনের পানি। সেখানে রাতভর ও সারাদিন বৃষ্টিতে একটা নাজুক অবস্থা তৈরি হয়। সোমবার রাতেই বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে দেয়া হয়। এবং যে সব স্কুলে ঘুর্ণিঝড় কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছেন সেসব স্কুল লোকজন সরে না সরে যাওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। রাজধানীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার বন্ধ ছিল। 

প্রতিমন্ত্রী যা জানালেন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো: এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর আঘাতে দেশের ৪১৯টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত (মঙ্গলবার সকাল) ৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।  সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ পরবর্তী সার্বিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। প্রতিমন্ত্রী এ সময় জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ৯ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ঘরের ওপর গাছ পড়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়ও ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও ১ হাজার মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝড়ে ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য টিন ও নগদ অর্থ দেয়া হবে। বুধবার থেকে এ সহায়তা দেয়া শুরু হবে। প্রকৃত ক্ষতির চিত্র জানতে আরও ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।  তিনি বলেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে দুইজনকে এ সহায়তা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের সুদহীন ঋণ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

তিনি আরেকটি ঘুর্ণিঝড়ের আভাস দিয়ে বলেন, ‘ডিসেম্বরে দেশে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ এ সময় তিনি জানান, এবার সিত্রাং থেকে বাচাতে প্রায় ৭ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ লাখ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় শেষে মধ্যরাত থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। সকালের মধ্যে সবাই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন।

শেয়ার করুন