২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:৫৪:০৪ পূর্বাহ্ন


“আমি সেদিন না-ও থাকতে পারি। -------”
এক মায়ের স্মৃতিতে তাঁর শহিদ সন্তান
রুবিনা হোসেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৮-২০২২
এক মায়ের স্মৃতিতে তাঁর শহিদ সন্তান বীর বিক্রম বদিউল আলমের মা রওশন আরা বেগম ও বদিউল আলম/সংগৃহীত



“আমি সেদিন না-ও থাকতে পারি।  --------------------------


অসম্পূর্ণ বাক্যগুলো ছিল মাকে বলা এক তরুণের কথা। কেন তারনা থাকার প্রশ্ন আসছে? তার বলা বাকি কথাগুলোই বাকী ছিল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ৫১ বছর পূর্বে, ১৯৭১ সালে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কঠিন সময় পার করছিল তৎকালীনপূর্ব পাকিস্তানবাসী। হানাদারবাহিনীর সীমাহীন বর্বরতার কারণে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালিদের ছিলনা বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা, উপরোন্ত  সে যদি হয়ে থাকে কোনো সূর্যসন্তান তাহলে তো কথাই নেই। তাদের ধরার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। 

আলোচ্য তরুণটি ছিলেন একজন সূর্যসন্তান,নাম বদিউল আলম,সংক্ষেপে বদি। সেক্টর ২ এর অধীনে আরবান গেরিলা ইউনিটের একজন দুর্ধর্ষ গেরিলা। অসংখ্য তরুণের ন্যায় তিনি ও জীবনবাজি রেখে লড়ে যাচ্ছিলেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য। তার মা শহিদ জননী রওশন আরা বেগম প্রাণ প্রিয়পুত্র এবং যুদ্ধকালীন স্মৃতি নিয়ে নিয়ে রচনা করেছেন ‘শহীদ বদি এবং আমার স্মৃতিতে একাত্তর’। ছেলের জন্ম, বেড়ে ওঠা, তার বিভিন্ন দিক, বিভিন্ন ঘটনা, সর্বোপরি দেশেরজন্য চরম আত্মত্যাগের কথা তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। গ্রন্থে বর্ণিতমায়ের স্মৃতির আলোকে জেনে নেব তাঁর শহিদ সন্তান বদিউল আলম, বীরবিক্রমকে।

মা রওশন আরা বেগম ছিলেন তাঁর ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। স্বাভাবিকভাবেই বদিউল আলমের জš§ তাঁর পরিবারে নিয়ে আসে আনন্দের জোয়ার। সপ্তাহখানেকের মধ্যে আকিকা দিয়ে ছেলের বাবা নাম রাখেন ‘বদিউল আলম’ আর ডাকনাম ‘তপন’ রাখেন তার নানা যার অর্থ সূর্য। বাস্তবিকই সূর্যের মতোই ছিল তার তেজস্বিতা। এ প্রসঙ্গে মা বলেন, ‘ভয় কাকে বলে সে জানতনা, আর ‘অসম্ভব’ শব্দটিও তার অভিধানে ছিলনা।’পরবর্তী সময়ে তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনায় বিশেষকরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এর প্রমাণ পাওয়া যায়।’

বিভিন্ন মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন বদি। ছোটোবেলা থেকেই ছিলেন মানব দরদী। বাড়িতে ফকির এলেই বালক বদি ছুটে আসতেন মায়ের কাছে পয়সা নেওয়ার জন্য। শুক্রবার  তার কাছে দারুণ মজার দিন ছিলকারণ সেদিন ফকিরের সংখ্যা বেশি হতো।  পয়সা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফকিরের সংখ্যাও গুণে রাখতেন। সংখ্যা বেশি হলেই তার আনন্দ বেশি হতো। বড়ো হয়ে যখন তিনি ক্যাডেট কলেজে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখনো শীতের দিনে বা বন্যার সময় বাসার পুরনো কাপড় নিয়ে মানুষকে দিতেন। বড় ভাই হিসেবে নিজের ছোটো ভাই-বোনদের প্রতি ছিলেন ভীষণ রকমের স্নেহশীলও দায়িত্বশীল। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালীন তিনি জিন্নাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। যখন বাসায় যেতেন তখন ছোট ভাইবোনদের যেমন শাসন করতেন তেমন আদরও করতেন। ছোটো ভাইবোনদের সকল আব্দার থাকতো বাবার পরিবর্তে বড়ো ভাই বদির কাছে। 

মা তাঁর গ্রন্থে বদির ছোটোবেলার এক মজার ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ১৯৫৩ সালে খুলনায় থাকাকালীন তিনি লক্ষ্য করেন বদি দেওয়ালে কাঠকয়লা দিয়ে লিখে রেখেছেন : ‘আমি যে কালো জিন্নাহ’। নিচে লেখা ‘ তপন ’। তিনি বদিকে এর কারণ জিগ্যেস করলে উত্তর পান, ‘জিন্নাহ সাহেব পাকিস্তান করেছেন, তাঁর কত নাম, আমিও তাঁর মতো নাম করব। আমি তো তাঁর মতো ফরসা নই, তাই কালো জিন্নাহ।’

স্কুলে পড়ার সময় বদিতার এক হিন্দুু সহপাঠীর ব্যক্তিগত সচিত্র ম্যাগাজিনটি পড়ার জন্য চান।  ধর্মীয় বিদ্বেষবশত সহপাঠীতাকে ম্যাগাজিনটি দেয় না।এতে তিনি অপমানিত বোধ করেন। মা ধারণা করেন, ছোটবেলার এই অপমান হয়তো বদির অবচেতন মনে ছিল বলেই পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে তনি নিজেই ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্রম ক্রেজি অ্যাঙ্গেল’ নামে একটি ইংরেজি ম্যাগাজিন বের করেন। ম্যাগাজিনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকমহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার চরিত্রের আরেকটি বিশেষ দিক ছিল অন্যায় সহ্য করতে না পারা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জন্য যে সাহসের প্রয়োজন হয় সেটা তার ছোটোবেলা থেকেই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনেও তিনি সেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। নিজের জীবন বিপন্ন করেও অনেক অসহায় নিরপরাধ ছেলেকে বাঁচিয়েছেন। যদিও এসব ঘটনা ফলাও করে কোনো দিন কারও কাছে বলেননি। দৈনন্দিন জীবনের ছোটোখাটো অন্যায় যিনি সহ্য করতে পারেন না, তার পক্ষে পাকিস্তান বাহিনীর কাপুরুষোচিত বর্বরতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক ছিল। আর তাই যুদ্ধে যাওয়ার প্রাক্কালে মাকে বলেছিলেন ‘আম্মা, পাকিস্তানি বাহিনী অন্যায় করছে। আমাদের দেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। তারপর আমাদের ওপর অত্যাচার করছে। এই অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতেই হবে।’

প্রচণ্ড মেধাবী বদি  এইচএসসি পাস করার পর  পাকিস্তান এয়ারফোর্সে যোগদানের সুযোগ পেয়েছিলেন (১৯৬৬ সালে)।  সেই সময় এয়ারফোর্সে সুযোগ পাওয়া বিরল বিষয় ছিল কেননা এয়ারফোর্সের টেস্ট ছিল মিলিটারি সার্ভিসের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন। করাচি থেকে এয়ারফোর্সে যোগ দেওয়ার নিয়োগপত্র এলেছেলে প্লেন অ্যাকসিডেন্টে মারা যেতে পারে-এ আশংকায় মা ছেলেকে পাইলট হতে দেননি। অথচ সেই ছেলেই যেদিন মুক্তিযুদ্ধে যেতে চাইলেন, সেদিন মা তার যুক্তিতর্কের কাছে হার মেনে আটকিয়ে রাখতে পারলেন না যেখানে প্রতি পদক্ষেপেই ছিল মৃত্যুর আশংকা। 

১৯৬৬ সালে বদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বদির আব্দারের প্রেক্ষিতে তার বাবা মোটর বাইক কিনে দেন।বাইক নিয়ে মাঝেমধ্যে কাপড়চোপড় ময়লা করে তিনি ঢাকার বাইরে থেকে ঘুরে আসতেন।  পরবর্তী সময়েমা  নিজমনে হিসেব মেলাতেন এই ভেবে যে মুক্তিযুদ্ধে কাজে লাগবে বলেই হয়তো ওর অজান্তেই এই অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। 

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হয়ে ওঠার কারণে ১৯৭০ সালের শেষের দিকে বদি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড ক্লাস লাভ করেন।পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানকালীন  তিনি দুই অঞ্চলের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্যসমূহের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। সত্তরের গণ-আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ঢাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে ৬ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাধিক্যে ভোটে বিজয়ী হয়। যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা, সেখানে জেনারেল ইয়াহিয়া ও পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক গোষ্ঠী সত্তরের নির্বাচনী রায় মানতে রাজি হয়নি, নানা ছলছুতোর আশ্রয় নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় চলে আসে ভয়াল ২৫শে মার্চের কালরাত্রি। সেদিন বিকেলে বদি এসে জানান, ‘শহরের অবস্থা ভালো নয়। ইয়াহিয়া খান ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। রাস্তায় দেখে এলাম ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে। অনেক রাস্তায় আর্মির গাড়িও দেখা যাচ্ছে। আজ রাতে মনে হয় ভয়াবহ কিছু ঘটে যেতে পারে।’

পাকিস্তানি সমর নায়ক ইয়াহিয়া খান আলোচনার প্রহসন করে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক প্রস্তুতি সুসম্পন্ন করে ২৫শে মার্চ দিন শেষে বিশ্বের নৃশংসতম গণহত্যার আদেশ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে। রাত আনুমানিক  ১২টার দিকে হিংস্র বর্বর বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢাকা শহরের ওপর। শুরু হলো নির্বিচারে ধ্বংস আর হত্যাযজ্ঞ। সারা রাত ভারি বোমার শব্দ, মেশিনগানের  আওয়াজ, মানুষের চিৎকার, আগুনের শিখা, ধোঁয়ার কুণ্ডুলীতে রাতের আকাশ আচ্ছন্ন। শেষ রাতের দিকে জিপে করে কারা যেন এসে বারবার বলে গেল, ‘পতাকা নামিয়ে ফেলো।’ বদি  তাড়াতাড়ি উঠে হামাগুড়ি দিয়ে দুটো পতাকাই নামিয়ে ঘরে নিয়ে এলেন। 

২৭শে মার্চ স্বল্প সময়ের জন্য কারফিউ তোলা হলে বদি তার মাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দিয়ে যুদ্ধে যোগদানের অনুমতি নেওয়ার সময় বলেন, ‘তোমার ছয় ছেলে, এক ছেলেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না?’ সেদিন তার চোখেমুখে প্রতিশোধের যে আগুন ঝড়ে পড়েছিল, হানাদারদের বিরুদ্ধে যে আক্রোশ, ঘৃণা ফুটে উঠেছিল, তা দেখে তাকে বাধা দেওয়ার শক্তি মায়ের  ছিল না।

২৫শে মার্চের বিভীষিকাময় রাতের পরপরই যেসব তরুণের হƒদয়ে সংগ্রামের প্রতিবাদী চেতনা জেগে উঠেছিল, স্বদেশকে মুক্ত করার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে পশ্চিমা শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেনÑএদেরই প্রথম শিক্ষিত গেরিলা দল বদিউল আলম, আশফাকুস সামাদ, শহীদুল্লাহ খান ও মাসুদ ওমর অস্ত্র জোগাড়ের উদ্দেশে চলে যান কিশোরগঞ্জ।

পরবর্তী সময়ে বদি তার মামা, বন্ধু ও স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গঠন করেন মুক্তিবাহিনীর দল এবং ভাটির বিভিন্ন এলাকায় অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, মদন, তাড়াইলে বিভিন্ন সময়ে রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের  বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করেন। সেই ভয়াবহ দুর্দিনে বদি তার সহযোগী বন্ধুদের নিয়ে ভাটি অঞ্চলে শত্রুর বরুদ্ধে অপারেশন করতে গেলে তাদের  পেয়ে গ্রামের লোকজনের মনে কী বিপুল উত্তেজনা! মনেসাহস ও উত্তেজনা বেড়ে যায়। 

গ্রামের আপামর জনগণ কীভাবে মুক্তিবাহিনীকে সব সময় সহায়তা করেছে সে প্রসঙ্গে মা বদির এক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তাঁর গ্রন্থে।  কোনো এক গ্রামে শেষ রাতের দিকে বদির গ্রুপ অপারেশন করে ফিরে  আসার সময় সিদ্ধান্ত নেয় পৃথক রাস্তা দিয়ে তারা তাদের ঘাঁটিতে মিলিত হবে। যদি মিলিটারি বা রাজাকারের হাতে ধরা পড়ে, একজনই পড়বে। বদি  তার হাতের ব্যাগে স্টেনগান খুলে রেখে একা নদীর পাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় একটি ছেলে দৌড়ে এসে তাকে রাজাকার আসার খবর দেয়। লুকাবার মতো কোনো জায়গা ছিল না। বদি কী করবে ভাবছিলেন।

এমন সময় খালে একজন লোককে দেখতে পান যিনি মাছ ধরছিলেন। বদিকে হাত নেড়ে ডাকছে। কাছে যেতেই তার কোমরের গামছাটা খুলে বদির মাথায় বেঁধে দিল এবং শার্ট খুলে স্টেনগানটা জড়িয়ে কাদায় পুঁতে ফেলল। বদিকে তার মাছ ধরার সহযোগী করে নিল। রাজাকার এসে কিছু বুঝতে পারেনি। মাছের খোঁজ নিয়ে না পেয়ে চলে গেল। বদি তখন লোকটিকে বললেন, ‘একটু কষ্ট করে আমার সাথে আসেন। ব্যাগটা খুঁজে পানি থেকে তুলতে হবে। আমাদের অস্ত্র অনেক কম। অস্ত্রটা আমার জীবনের চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান।’ লোকটি হেসে বলল, ‘আমি এই কাজ কয়েকবার  করছি। আপনারটাও আমি ঠিক জায়গা থন আনতাছি।’ এই সাহায্যকারী নাম না জানা গ্রামবাসীটি সম্পর্কে বদি তার মাকে বলেছিলেন ‘ওরাই দেশের খাঁটি মানুষ, দেশ আর দেশের মানুষের ভালো চায়। স্বাধীনতা শব্দটি এদেরই মুখে মানায়। দেশ স্বাধীন হলে যদি ওদের মতো মানুষদের দুর্দশার অবসান হয়, তখনই আমাদের স্বাধীনতা সার্থক হবে।’

আগস্টের প্রথমদিকে বদির সাথে মায়ের শেষ দেখা হয় কিশোরগঞ্জে তার খালার বাসায়। সেখানে এক রাত এবং এক দিন অবস্থানের পর তিনি ঢাকা চলে যান এবং সেই মাসেই পরিচালিত বেশ কয়েটি দুর্ধর্ষ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন যার মধ্যে ছিল ফার্মগেট, সিদ্ধিরগঞ্জ রেকি এবং ধানমন্ডি অপারেশন। 

আগস্ট মাসে ক্র্যাকপ্লাটুনের সদস্যরা যখন একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ভেতর কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল, সেই সময় এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় সর্বপ্রথম ধরা পড়েন বদিউল আলম। ২৯ আগস্ট, রবিবার, দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর জালাল উদ্দিন সাহেবের বাসায় তাঁর ছেলে ফরিদ ও অন্য বন্ধুদের সাথে তাস খেলছিলেন বদিউল আলম। কিছুক্ষণ পর ইতিহাসের ঘৃণিত চরিত্র ফরিদ বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এবং কয়েকজন পাকসেনা নিয়ে এসে ধরিয়ে দেয় বদিউল আলমকে। এরপর ২৯ থেকে ৩১শে আগস্টের মধ্যে একে একে ধরা পড়েন জুয়েল, আজাদ, রুমী, বাকের, হাফিজ, আলতাফ মাহমুদ, চুল্লুসহ আরো অনেকেই। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ফিরে আসেনি।  

১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১। অবশেষে স্বাধীনহলো দেশ। মা রওশন আরা খানমের বয়ানে-

আমি সকাল থেকেই সবার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। আমার ছেলের কথাগুলো মনে পড়ল। 

‘আমি সেদিন না-ও থাকতে পারি।  আমার দেশ স্বাধীনহবে। দেশেরগ্রাম - গঞ্জের মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। দেশ হবে সোনার বাংলা।’

২৯ আগস্ট, ২০২২ বদিউল আলম, বীর বিক্রম এর ৫১তম অন্তর্ধান দিবস।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ সূর্য সন্তানের প্রতি

জাতির গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।



 




শেয়ার করুন