২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:২০:৩২ পূর্বাহ্ন


দেশকে গোলাম নওশের প্রিন্স
ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে জিতলে অবাক হবো না
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে জিতলে অবাক হবো না গোলাম নওশের প্রিন্স /ফাইল ছবি


বাংলাদেশ টি২০ বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে গেলে অবাক হবেন না গোলাম নওশের প্রিন্স। সুপার টুয়েলভে বুধবার বাংলাদেশ খেলবে ভারতের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে। একই স্থানে পরের ম্যাচটি খেলবে তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে। অ্যাডিলেডে একটা চমৎকার স্মৃতি রয়েছে। এ মাঠে ২০১৫ সনের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। 

তবে বাংলাদেশ দলের সাবেক ফার্স্ট বোলার গোলাম নওশের ওইসব স্মৃতিটা না টেনে বরং বাস্তবতার কথাই জানান দিলেন। দেশ পত্রিকার সঙ্গে টেলিফোনে এ সাক্ষাতকারটি দেন তিনি। এ সময় বলেন, ‘টি২০ ম্যাচের ফরম্যাটটাই এমন যে এ ম্যাচে যে কেউই জিতে পারে। এ বিশ্বকাপেই দেখুন। জিম্বাবুয়ের মত দল যদি পাকিস্তানকে হারাতে পারে। ফার্স্ট রাউন্ডে ওয়েস্টইন্ডিজের মত দল যদি স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে সুপার টুয়েলভে উঠতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানকে হারালে অবাক হওয়ার কি আছে।’ 



প্রশ্ন : আপনি যে বললেন, পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে জেতা সম্ভব, সেটা কিভাবে?

জিএম প্রিন্স: আসলে টি২০ খেলায় ম্যাচডে বলে একটা কথা আছে। দিনটাও হয়ে যেতে পারে এক দলের। সেটা বাংলাদেশের ফেভারে থাকলে যেমন একটা বিষয়। তাছাড়া ভারতের বিপক্ষে কিছু ব্যাপার রয়েছে। ভারতের সঙ্গে জিততে হলে শুরুতেই ভারতের টপ অর্ডার ৩-৪ টা ব্যাটসম্যানকে আউট করে দিতে হবে। যা আমাদের তাসকিন ও মুস্তাফিজ যে ফর্মে তাদের পক্ষে এটা সম্ভব। এতে করে যা হবে ভারতের ব্যাটিং লাইনে একটা পেনিক তৈরি হবে। পরে বাংলাদেশের অ্যাটাকিং গেমের সামনে আর কুলিয়ে উঠতে পারবে না। ভারতের অন্যসব ম্যাচ পর্যালোচনা করলে এমনটাই দেখবেন।


ওরা সূচনায় ৩-৪ ব্যাটসম্যান হারালে সেটা যখনই হোক, সেটা কাভার করতে কষ্ট হয়ে যায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে কিন্তু ম্যাচটি একা কোহলি একস্ট্রাঅর্ডিনারি কিছু খেলে জিতিয়ে দিয়েছেন। নতুবা ম্যাচটা কিন্তু পাকিস্তানের গ্রীপেই ছিল। তাছাড়া ওই যে কোহলির স্ট্যাম্প আঘাত করে তিনটি বাই রান নেয়া সেটাও একটা অ্যাডভান্টেজ কাজে লেগেছে ওদের। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ খেলতে ওভারঅল সবাইকে ভাল খেলতে হবে। পাকিস্তান জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে বটে। ওরা কিন্তু ওই মাপের টিমই না। আমার মনে হয় এ আসরে ওরাই সবচে আগ্রাসী টিম।


ওদের ওই যোগ্যতা আছে যে কোনো স্থান থেকে ওরা ফিরে আসতে পারে। ওদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অনেক সমীকরণের মাঝে ওদের সবকটি ম্যাচ আগে জিততে হবে। সে প্রেক্ষাপটে ওরা কিন্তু খুবই আগ্রাসী মনভাব নিয়ে ক্রিকেট খেলবে। ফলে ওদেরকে ঠেকানো কষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া ওরা যে সময় খেলে তখন বাংলাদেশ দলকে অনেক দূরে ঠেলে রেখেই জয় তুলে নেয়। এগুলো বিশ্লেষণ করেই টিম সাজিয়ে খেলতে হবে। জেতা যাবে না তা নয়। তবে ওভারঅল সবাইকেই ভাল খেলতে হবে।



প্রশ্ন: বাংলাদেশকে নিয়ে এতটা কনফিডেন্স কিভাবে? 

জিএম প্রিন্স: দলে অনেক দুর্বলতা রয়েছে এটা ঠিক। পাওয়ার হিটিং নেই বললেই চলে। ওভাবে ব্যাটিংটা হচ্ছেনা। ১২০-১৩০ রান নিয়ে সবসময় ফাইট দেয়া সম্ভব না। যদি ভারত পাকিস্তানের জিততে হয় তাহলে ব্যাট হাতে অন্তত ১৮০-১৯০ রান করতে হবে। এ জন্য টপ অর্ডারের অন্তত একজনকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। এমনকি ওরকম টুকটুক করে খেললেও হবে না। যেহেতু সে সময় নেবে তাই সেট হয়ে তাকে অ্যাটাকিং ব্যাটিংটাই করতে হবে। আর অ্যাটাকিং ব্যাটিং করে বড় স্কোর করলে তখন বোলাররা লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায়।


বল হাতে দলে অন্তত তিনজন কোয়ালিটি বোলার রয়েছেন। এ তিনজনই যথেষ্ট আমি মনে করি। এরা হলো তাসকিন, মুস্তাফিজ ও সাকিব। এদের প্রত্যেকের যে কোনো ম্যাচে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার যোগ্যতা রাখেন। এদের ভাল করার অর্থ প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইন চাপে পড়ে যাওয়া। চতুর্থ ও পঞ্চম বোলার হিসেবে আমার মতে একজন লেগ স্পিনার থাকলে খুব কাজ দিত। কিন্তু আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের থাকলেও বাংলাদেশর নেই। সেখানে মিরাজকে খেলানো যেতে পারে। ওর রান করার অভ্যাস আছে। চমৎকার ফিল্ডিং করে। একই সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে বলটাও করতে পারে। আর একটা পেস বাড়িয়ে শরীফুল বা হাসানকে খেলালে যথেষ্ট। 

তবে ভারতের ব্যাটিং কিন্তু অর্ডিনারি বোলিং পেলে তুলাধুনা করে দেবে। ফলে বোলিংটা হিসেব কষেই করতে হবে। আমার মতে ভারত স্পিনের বিপক্ষে একটু বেশি ভাল খেলে। সে তুলনায় স্পিন কমিয়ে পেস অ্যাটাকে জোর দিতে আরেকজন পেসার বাড়ানো উচিৎ। সম্ভব বলে চার পেসার খেলালেও একেবারে মন্দ হবে না। তবে সবার আগে ব্যাট হাতে দায়িত্ব নিয়ে রান করতে হবে। যথেষ্ট  রান না করা গেলে বোলিং নিয়ে ভেবে লাভ নেই। 

প্রশ্ন: আপনি বলছিলেন বাংলাদেশ দলে পাওয়ার হিটারের অভাব। এটা কেন?

জিএম প্রিন্স: আসলে এ পর্যায়ে পাওয়ার হিটার খুঁজে লাভ নেই। পাওয়ার হিটিং শেখানোর জন্য আলাদা কোচ এর ব্যবস্থা রাখছে উন্নত দেশগুলো। সেটা ওরা এজগ্রুপ থেকেই এ ধরনের প্রাকটিস করে আসছে। তাছাড়া আমাদের দেশের উইকেটও তেমন ভাল না। বল প্রায়ই আসে লো হয়ে। এটাতে পাওয়ার শট নেয়া যায়না। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওভাবে উইকেট তৈরি প্রয়োজন। যেখানে খেলোয়াড়রা একটা গড় কনফিডেন্স পাবে যে কোন ধরনের বল তার কাজে আসবে। কিভাবে শট নেয়ার জন্য সে প্রস্তুত হবে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই তারা খেলে আসছে। 


প্রশ্ন: এ বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা কি যথার্থ হয়েছে বলে মনে করেন?

জিএম প্রিন্স: আপনি টুর্নামেন্টের দিকে তাকান। বড় দলগুলো কিন্তু ১৮০, ২০০ বা দুইশ প্লাস রান করছে। ব্যাটসম্যানরা কিভাবে শটস খেলে চার ছক্কা হাকাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মাঠ বড়। তবু তারা সমানে বাউন্ডারি ওভার বাউন্ডারি হকাচ্ছে। এটাই হলো অভ্যাস বা প্রাকটিস।

বাংলাদেশ দলের দিকে তাকান। গড়ে কত রান তারা করতে পারছে। পাওয়ার শটস তাদের ক’জন নিতে পারছে। তার মানে প্রস্তুতি যথার্থ না। এ জন্য অনেক আগ থেকে প্লান প্রস্তুতি নিতে হয়। এ বিশ্বকাপের আগে অনেক সময় পাওয়া গেছে। এগুলো নিয়ে আগেই ভাববার প্রয়োজন ছিল। একটা কথা বলি, শ্রীলংকার দিকে তাকান। ভারতের দিকে দেখেন। পাকিস্তানের দিকে দেখেন। উপমহাদেশের এ দেশের ক্রিকেটাররা যদি পারে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পারে না? হিসেবটা এখানে ক্লিয়ার। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডের সমার্থ ও বাংলাদেশেরটা হিসেব মেলান। তাহলে সমস্যা কোথায়? ওরা পারলে কেন পারবে না বাংলাদেশ। এটার জন্য বড় বড় সমঝদারের প্রয়োজন নেই। সঠিক প্লান নিয়ে শুরু করলেই হলো। কিন্তু পারফেক্ট শুরুটা তো প্লান করে করতে হবে! 

আপনার করণীয় কী ছিল। এগুলো না হয় বাদই দিলাম। নিউজিল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্টের আগে ওদের বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওদের কোনো ক্লাব বা এজগ্রুপের সঙ্গে সাত আটটা ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করা যেত। অস্ট্রেলিয়াতেও এটা করা যেত। আজ যারা বলছেন অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে খেলা অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ঘাটতি। ওটুকু হলেও তো এখন খেলোয়াড়রা অনেক অ্যাডভান্স হতো। সেটা হয়নি। এটা তো সহজ চিন্তা। আসলে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। প্লান কষতে হবে। বিশ্বকাপ কবে। কোন কন্ডিশনে। সেখানে আমাদের কী টার্গেট। কিভাবে দল সাঝানো প্রয়োজন। এগুলো না করলে হবে না। 


প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ হচ্ছে- এটা কেমন লাগছে?

জিএম প্রিন্স: অবশ্যই ভাল লাগছে। প্রতিটা ম্যাচই উপভোগ্য হচ্ছে। তবে বড় দলগুলো কিন্তু ঠিক তাদের খেলাটাই খেলছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড,দক্ষিণ আফ্রিকা,ইংল্যান্ড দলগুলো ঠিকই রান করছে। উপভোগ্য খেলা উপহার দিচ্ছে। বৃষ্টি কিছুটা বিরক্তির কারণ হয়ে যায় মাঝে মধ্যে। বৃষ্টিতে ছোট দলও অনেক সময় পয়েন্ট পেয়ে যায়। তবে সব মিলিয়ে ক্রিকেটের সর্ববৃহৎ আসরই তো। টি২০ ভার্সানে বিশ্বকাপ। অবশ্যই ভাল লাগছে। উপভোগ করছি। সময় করে দেখছি। 


প্রশ্ন: টিম বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু বলবেন কী।

জিএম প্রিন্স: বাংলাদেশ আমার দেশ। সুদূর আমেরিকাতে থাকলেও সারাক্ষণই খবর রাখি। আমি তো এ দলটিতে খেলে গেছি। আমার একটা টান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের ক্রিকেট যেভাবে এগিয়ে যাবার কথা সেটুকু কেন যেন এগুচ্ছেনা। কোথায় যেন একটা প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে। উন্নতিটা সেভাবে হচ্ছেনা। আমি চাই বিশ্বের অন্যসব দলের মতই প্রতিনিয়ত উন্নতি করুক। আমি আবারও বলবো শ্রীলঙ্কা,পাকিস্তান,ভারত পারলে আমরা কেন পারবো না। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো অন্তত এ লেবেল থেকে। কারণ আমাদের দেশে অনেক ট্যালেন্ট ক্রিকেটার রয়েছে। যাদেরকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে এ লেভেলে নিয়ে আসা কোনো ব্যাপারই না। যতটুকু সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেটাও অনেকের নেই। জিম্বাবুয়ে,আফগানিস্তানসহ প্রমুখ দেশের উদহরণ দেয়া যাবে। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালবাসা। একটা দেশের ক্রিকেট এগিয়ে নেয়ার জন্য এটা অনেক বড় একটা বিষয়। 


উল্লেখ্য, গোলাম নওশের প্রিন্স, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলেন তিনি ১৯৮৬ সনের ৩১ মার্চ ইমরান খান,ওয়াসীম আকরাম,আব্দুল কাদিরের পাকিস্তানের বিপক্ষে। এশিয়া কাপ ছিল সেটা। মোট ৯টি ম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। যখন বাংলাদেশ বছরে একটি দুটির বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগই পেত না। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত খেলেছেন তিনি জাতীয় দলে। মূলত বাহাতি ফার্ষ্ট বোলার ছিলেন গোলাম নওশের প্রিন্স। এছাড়াও ঘরোয়া ক্রিকেটেও দীর্ঘদিন খেলেছেন ঢাকা মোহামেডান স্পোটিংয়ে। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে বোর্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। দ্বায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় দলের সিলেক্টর হিসেবেও। বর্তমানে আমেরিকার ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট কমিটিতে কর্মরত তিনি। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট কোচিংয়ে যুক্ত রয়েছেন দীর্ঘদিন থেকেই।   


শেয়ার করুন