২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:১৩:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


পবিত্র রমজান, প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদের মাস
ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২২
পবিত্র রমজান, প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদের মাস


পবিত্র রমজান তোমাকে জানাই স্বাগতম। তোমার আগমনে আমরা আনন্দিত এবং ভাবাবেগে উল্লিসিত। তোমার আগমনে মুসলিম জাহানে সৃষ্টি হয় আত্মপরিশোধনের, আধ্যাত্মিকতা ও সংযমী প্রবৃত্তি অর্জনে এবং আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যে পৌছানোর জন্য প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জাগরণ। সারা বছর ধরে উদাসীন আত্মার আত্মভোলা প্রকৃতির ও পাপ কাজে জড়িত থাকা আত্মপরিশোধনের সংগ্রাম। হে পরওয়ারদেগার বিশ^জাহানের প্রতিপালক!  পবিত্র রমজানের পবিত্র স্পর্শে তোমার আত্মভোলা দূর্বলচিত্তের পাপী ইবাদীর পাপ ক্ষমাপ্রাতির রাস্তা সহজ কওে দাও। তার অবাধ্য প্রবৃত্তির সংশোধনে এবং আত্মসংযমী হওয়ার সংগ্রামে সফল হতে তৌফিক দান কর। তোমার পাপীত্যাপী বান্দাদের ইবাদত এবং দো’আ কবুল কর। ইবাদতে কৃত ভুল-ভ্রান্তি উপেক্ষা করে আত্মপরিশোধনের রাস্তা তাদের জন্য সহজ করে দাও। হে পরওয়ারদেগার আমাদের প্রার্থনা কবুল কর। পবিত্র রমজানকে বলা হয় আল-কুর’আনের মাস। কারণ রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহ আল-কুর’আনের সান্নিধ্যে কাটিয়ে দেয়। বছরের অন্যমাসে এইভাবে আল-কুর’আন পাঠ করা হয় না। এবছর পূর্বের তুলনায় বিষয়টি হবে ভিন্নতর। গৃহবন্দি অবস্থায় নিজের উদ্যোগে আল-কুর’আন তেলওয়াত করতে হবে এবং অর্থসহ তফসির অধ্যায়ন করলে অবশ্যই লাভবান হওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ। আল-কুর’আন বিশ^বাসীর জন্য হইকাল ও পরকালের সাফল্যে উপদেশ বাণী। বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর জন্য উপদেশ গ্রহণের ক্ষেএে আল-কুর’আনের সমত‚ল্য আর কোন কিতাব নাই। আশা করি মুসলিম উম্মাহ এই বিষয়টি অনুধাবন করতে অবহেলা করবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কুর’আন তোমার জন্যে এবং তোমার সম্প্রদায়ের [মুসলিম উম্মাহ] জন্যে উপদেশবাণী; এবং তোমাদের সবাইকে শীঘ্রই এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’{সূরা যুখরূফ : ৪৪}। অতএব মুসলিম উম্মাহকে এবছর আল-কুর’আন পড়ার এবং বুঝার তাৎপর্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে অবসর সময়টা কাজে লাগাতে হবে, যাতে প্রশ্নর উত্তর দেওয়া সহজ হয়। 

 মুসলিম জাহানসহ সারা বিশ^ গত দুইবছর করোনার কারণে গৃহবন্দি ছিল । তাই অতীতের বছর গুলোর মত রমজানে মুসলিম জাহান বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তা ভক্ষনের যে উৎসব ছিল, এই রমজানে সেরকম হয়তো করা যাবে না। এটা থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। রমজান মুসলিম জাহানকে উপহার দেয় সংযমের ও আত্মশুদ্ধিও বিভিন্ন পন্থা অথচ মুসলিম জাহান খাদ্য সংযমের পরির্বতে আরো বেশি খাদ্যভোগে জড়িত হয়ে থাকে। বাজারে বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু [তেলে ভাজা, স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ] খাবার দিয়ে ভরপোর থাকে, এবছর সেটা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবে। মদীনায় রাসূল (সা.)সহ সাহাবীরা অতি সাধারণভাবে মাএ একটি অথবা তিনটি খেজুর অথবা পানি দিয়ে রোযা ভাঙ্গতেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল রমজানের পবিত্রতায় পরহেজগারী বৈশিষ্ট্য অর্জনে আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যে পৌছানো, যাতে আগামী বছর রমজানের শিক্ষাকে বলবত রাখতে পারেন। কাজে এই সুযোগে আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত সাহাবাদের মত অতি সাধারণভাবে রোযা ভাঙ্গার অভ্যাসে। বাজারে ইফতারি পাওয়া যাবে না বিধায় মা-বোনদের উচিত হবে না বাড়ীতে বিভিন্ন ধরণের ইফতারি তৈয়ার করা। বরং এই রোযায় বেশি করে তস্বীহ-তাহমীদ এবং আল-কুর’আন পাঠ করা হবে উত্তম কাজ। নিয়মিত তওবার মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে  বেশী বেশী প্রার্থনা করতে হবে যাতে দয়াময় আল্লাাহ তা’আলা মানবজাতিকে করোনার হাত থেকে অতিসত্ত¡র উদ্ধার করেন। এ বছর পুরুষরা গতাণুগতিকভাবে মসজিদে গিয়ে তারাবীহর নামাযে আল-কুর’আন খতম করার সুযোগ পাবে, তাতে আগের মতই পবিত্র রমজানের আধ্যাত্মিক উৎসবের পরিবেশ আবার ফিওে আসবে, ইনশা আল্লাহ। 

আদম সন্তান সৃষ্টি হয়েছে দূর্বল প্রকৃতি নিয়ে। তাই মানব প্রবৃত্তি হচ্ছে মন্দকর্ম পরায়ণ। সর্বদাই অনৈতিক ও খারাপ কর্মে জড়িত হওয়ায় অনুপ্রাণিত করে। নিজের আত্মাকে সহজেই কলুষিত করতে পারে। এপ্রসংগে নবী ইউসুফ (আ.)-এর উক্তিকে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আমি [ইউসুফ (আ.)] নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়- আমার প্রতিপালক যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়ালু।’{সূরা ইউসুফ : ৫৩}। একারণেই আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যে পৌছানোর জন্য ঈমানদার ব্যক্তিরা প্রবৃত্তির অবৈধ চাহিদার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন, যাতে মন্দকর্মের প্রবণতাকে দমন করতে পারেন। তবে একাজে সফল হতে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে তাদেরকে নিয়মিতভাবে জিহাদ করতে হয়। যারা স্বীয় আত্মাকে পরিশোধন করে আল্লাহ তা’আলা মুখী হন তারাই সফল হতে পারেন। আর যারা উদাসীন হয়ে আত্মপরিশোধনের সংগ্রাম পরিত্যাগ করে স্বীয় প্রবৃত্তির দাস হয়ে যায়, তারাই হয় ব্যর্থ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘সত্যিই তার জীবন সার্থক যে তাকে পবিত্র করেছে, এবং তার জীবন ব্যর্থ যে তাকে কলুষিত করেছে।’{সূরা-শামস্ : ৯-১০}। মানব প্রবৃত্তির পছন্দনীয় বৈশিষ্ট্য [ঈর্ষা, পরর্চ্চা, হিংসা, সাম্প্রদায়িক চিত্ত, মিথ্যাবলা, রাগান্বিত হওয়া, গর্ব, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ইত্যাদি] এবং অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকতে দরকার হয় বিশুদ্ধ পদ্ধতি এবং শান্তিপূর্ণ স্বস্থির পরিবেশ। পবিত্র রমজান মুসলিম জাহানে উপহার দেয় আত্মশোধনের ও সংযমী আত্মা অর্জনের জন্য বিশুদ্ধ পদ্ধতি এবং শান্তিপূর্ণ স্বস্থির পরিবেশ। কারণ পবিত্র রমজানের রোজা পালনকে আত্মশুদ্ধির, আত্মসংযমনে পরহেজগারী বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাস হিসেবে আখ্যায়িত করে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারী [ আল্লাহ-সচেতন পরিশুদ্ধ আত্মা, আত্মসংযমী ব্যক্তি] অর্জন করতে পার।{সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৩}। যাতে আল্লাহ তা’আলার ইবাদী সকল মুসলমানই বছরে একবার আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যেলাভে এবং পরহেজগারী বৈশিষ্ট্য অর্জনে প্রবৃত্তির অবৈধ চাহিদার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সহজ রাস্তা অবলম্বন করতে পারে। এইকাজ সহজ করার লক্ষ্যে পবিত্র রমজান আগমনে মানবতার চিরশত্রæ শত্রæ ‘ শয়তানকে শিকলে আটকিয়ে দেন। এপ্রসংগে রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। আসমানের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করে দেয়া হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শিকল দিয়ে বন্দি করা হয়।’ {সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ২, ১৭৬৩-৬৪} 

মানব সন্তানের ঘনিষ্ট সংগী হচ্ছে অদৃশ্য শয়তান। সংগী হিসেবে সে মানবের প্রতিটি ভালোকাজে হস্তক্ষেপ করে, নানা অজুহাতে তার চিত্তে অলসতা সৃষ্টি করে এবং ভালো কাজ থেকে দূরে থাকতে অনুপ্রাণিত করে। সংগী শয়তান সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেই একটি কওে শয়তান নির্ধারিত আছে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আপনার সাথেও কি? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আমার সাথেও। তবে তার মুকাবিলায় আল্লাহ পাক আমাকে সাহায্য করেছেন। আমি তার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ, সুতরাং এখন সে আমাকে কোন ভালো কাজ ছাড়া অন্য কাজের দিকে নিবার চেষ্টা কওে না। (মুসলিম, ৬৮৫০)। একারণে শয়তানের অনুপ্রেরণায় প্রবৃত্তির অবৈধ চাহিদার ডাকে সারা দিয়ে সারা বছর উদাসীন অসর্তক মুসলমানরা শরিয়ত বিরোধী বিবিধ অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকে। তাতে স¦ীয় আত্মার উপর তারা জুলুম করেন। অথচ রমজান আসার সাথে সাথেই মুসলিম জাহানে অপরাধমূলক কাজের ধরণ ও পরিমান লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে যায়। এবছর গৃহবন্দি হওয়ায় এবং করোনার ভয়ে আশা করা যায় অপরাধমূলক কাজের পরিমান শূণ্যেও কোঠায় থাকবে। মানব প্রবৃত্তির চাহিদার অন্যতম হচ্ছে খাদ্য, যৌন চাহিদা এবং চিত্তবিনোদনে সহজাত প্রকৃতি বিরোধী বিষয়। তদুপরি মানবিক প্রকৃতির নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্য যেমন, ঈর্ষাপরয়াণতা, হিংসা, পরর্চ্চা, মিথ্যা বলা, চোখের যেনা, সময়ের অপচয়, ইবাদতে বিমুখতা বা অলসতা ইত্যাদি। এগুলো মানব প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও প্রতিদিনের সাথী অদৃশ্য শয়তান মানব প্রবৃত্তির দূবর্লতার সুযোগ নিয়ে মানবকে এসকল অনৈতিক কাজে জড়িত থাকতে ফিসফিসানির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করে। পবিত্র রমজানে শয়তান শিকলে আটকে থাকায়, এই সকল অপরাধমূলক নিন্দনীয় কর্ম থেকে বিরত থাকতে  রমজান দিয়েছে অত্যন্ত সুন্দর-সহজ ব্যবস্থা। আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যলাভে রাসূলের (সা.) সুন্নাহ অনুসরণে আধ্যাত্মিকুার উন্নতি সাধনে খাদ্য-পানীয় পরিত্যাগে মুসলমানরা যখন রোজা রাখে তখন অন্যায়-অবৈধ অপকর্মেও প্রতি অবাধ্য প্রবৃত্তির চাহিদার মৃত্যু ঘটে। তাতে ইবাদীরা ফরয ইবাদত সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বেশি যতœবান হয়ে থাকে। তাছাড়া বাড়তি ইবাদত যেমন তারাবীর নামাযে রাতের একটা বিরাট অংশ ব্যয় করে। আবার শেষ রাতে সেহেরী খাওয়ার জন্য উঠলে, অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য হাতে তেমন সময় থাকে না। একারণেই চিত্তবিনোদনের জন্য ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ অনুষ্ঠান দেখার সময় ও সুযোগ আর থাকে না। অর্থাৎ অন্য সময়ের জন্য রাতে টিভির সামনে বসে থাকার সুযোগ পাওয়া যায় না। কাজেই পবিত্র রমজানে সময়ের সদ্যব্যবহাওে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে এল্যাইন্ড হয়ে য়ায়। তাতে মুসলমানদেও প্রবৃত্তিতে পার্থিব  আকর্ষণ  কমে যায়। পরকালের সাফল্যে ইবাদতের বিবিধ ব্যবস্থায় সময় কাটাতে উদ্যোগী হয়। আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যে পৌছানোও সহজ হয়। এরকম ইবাদীর জন্য রাসূল (সা.) সুসংবাদ দিয়েছেন। তাহাজ্জুদেও বা তারাবীর নমাযের তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন,‘মহান ও কল্যাণময় আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার (নিকটবর্তী) আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, কে এমন আছ যে আমাকে ডাকতে চাও? (ডাক) আমি তার ডাকে সাড়া দিব, কে এমন আছ, যে আমাকে নিজের অভাব জানিয়ে তা দূর করার জন্য প্রার্থনা করতে চাও? (প্রার্থনা কর) আমি তাকে প্রদান করব এবং কে এমন আছ, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাও? (ক্ষমা প্রার্থনা কর) আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।{সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ১, ১০৭৪}।

আল্লাহ তা’আলার কাছে রোযা গ্রহণযোগ্য জন্য হওয়ায় করণীয় বিষয় সম্পর্কে রাসূল (সা.) একটি সুনির্দিষ্ট সহজ ব্যবস্থা দিয়েছেন। পবিত্র্ রমজান মাসের মর্যাদা রক্ষার্থে এবং পরির্পূণরূপে আত্মসর্ম্পণ করে আত্মশুদ্ধির জন্য সংগ্রামে করণীয় কি, এব্যাপারে সকলের সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। বেঁচে থাকার জন্য খাবার খাওয়া ছাড়াও আদম সন্তানের যৌনকামনা নিবারণে এবং চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রবৃত্তির চাহিদায় তারা নানা রকমের অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে থাকে। আদম সন্তানরা প্রকৃতিগতভাবে এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাই তারা এগুলোর প্রতি অতিশয় র্দূবল। একারণেই পবিত্র রমজান মাসের আগমনে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসায় আবেষ্টন  হয়ে দিনের বেলায় খাবার খাওয়া, স্ত্রী-সম্ভোগ এবং চিত্ত বিনোদনের অবৈধ অবৈধ পন্থা পরিহার করে আধ্যাত্মিকতা অর্জনে সর্বদা আল্লাহর স্মরণে আত্মনিয়োগ করতে হয়। এজন্যই পবিত্র রমজান মাসকে বলা হয় সার্বিকভাবে আত্মত্যাগের, আত্মশুদ্ধির  এবং আত্মসংযমের মাস। বস্তুতঃ আত্মসংযমই বাকীগুলোর পরির্পূণতা অর্জনে ক্যটালিষ্ট হিসেবে কাজ করে। তাই আত্মসংযমের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে  বিশেষ কিছু সাধারণ অভ্যাসের বিপরীতে কাজ করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ সবার অবগতির প্রয়াসে সেগুলোর কয়েকটা এখানে উল্লেখ করা হল: (১) একনিষ্ঠ অন্তরে পাচঁ ওয়াক্ত নামায সময়মত আদায় করা। অনেকেই রোযা রাখেন, কিন্তু নামায আদায় করেন না অথবা একাগ্রচিত্তে নামায আদায় করেন না। স্বাস্থ্যবান, সুস্থমস্তিষ্কের ব্যক্তির রমজান মাসে রোযা পালন যেমন ফরয দায়িত্ব তেমন রমজান মাসসহ সারা বছর নিয়মিতভাবে সময় মত নামায আদায় করাও ফরয দায়িত্ব। তাই যে কোন একটা পরিত্যাগ করলে অন্যটায় থাকে অসর্ম্পূণতা এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে পরির্পূণভাবে আত্মসর্ম্পণের বিমুখতা ও সংযমের বিপরীতার্থক। অর্থাৎ  প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যর্থতা। প্রাপ্তবয়স্কে উপনীত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জীবনের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময়মত আদায় করা মুসলিম উম্মাহর জন্য বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। আর রোযা হচ্ছে বৎসরে একমাস বাধ্যতামূলক তবুও পরিস্থিতির ভিত্তিতে অনেকের জন্য রোযা পালনে শিথিলতা আছে। অতএব শুধুমাএ রমজান মাসেই নয় বরং সারা বৎসরই নিয়মিতভাবে নামায আদায় করতে হয়। (২) শুধুমাএ খাদ্য, পানীয় ও যৌন-সম্ভোগ ত্যাগ করলেই আত্মার পরিশোধন হয় না। এর সহিত সম্পৃক্ত করতে হয় অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, ঝগড়া-বিবাদ, মিথ্যা বলা ও অশোভন-অশ্লীল বস্তু দেখা এবং অশোভন বাক্যালাপ পরিত্যাগ করা। এপ্রসংগে রাসূল (সা.) বলেছেন,“রোযা ঢালস্বরূপ [গোনাহ থেকে আত্মরক্ষার জন্য]। সুতরাং রোযাদার অশ্লীল কথা বলবে না বা জাহেলী বা অজ্ঞদের আচরণ করবে না। কোন লোক তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্ব্যত হলে অথবা গাল-মন্দ করলে, সে তাকে বলবে, ‘ আমি রোযা রেখেছি’। কথাটি দু’বার বলবে। যার মুষ্ঠিতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার [আল্লাহর] শপথ! রোযাদারের মুখের গন্ধও আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধি হতেও উৎকৃষ্ট। কেননা [রোযাদার] আমার [আল্লাহর] উদ্দেশ্যেই খাবার, পানীয় ও লোভনীয় বস্তু পরিত্যাগ করে থাকে। তাই আমি [আল্লাহ] বিশেষভাবে রোযার পুরস্কার দান করব। আর নেক কাজের পুরস্কার দশগুণ পর্যন্ত দেয়া হয়ে থাকে।”{সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ২, নম্বর ১৭৫৯}। তাই রোযা রেখে চিত্তাকার্ষক দৃশ্য যা যৌন আবেদন ও মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি করে, তা দেখা এবং পরর্চ্চা, পরনিন্দা, মিথ্যা বলা ইত্যাদি সর্র্ম্পূণরূপে পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়। এপ্রসংগে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, “রোযা থেকেও কেউ যদি মিথ্যা বলা ও তদনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় [রোযা রাখায়] আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।”{সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ২, নম্বর ১৭৬৮}। বর্তমানে টিভি এবং ইন্টারনেটের যুগ, তাই অশ্লীল, অশালীন, অশোভন দৃশ্য উপেক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবুও পবিত্র রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে, আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনে, সান্নিধ্য লাভে এগুলো উপেক্ষা করার প্রয়াসই হচ্ছে আসল সংযম। (৩) ইফতারের সময় ও রাতের খাবারও পরিমিতভাবে খেয়ে একটা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখা উচিত। সারাদিনের অভুক্ত শরীর হঠাৎ বেশী পরিমানে পুষ্ঠিকর খাবার খেয়ে  কান্ত হয়ে পড়ে। ফলে রাতের ইবাদতে মনোনিবেশ করা যায় না। তদুপরি কান্ত শরীরে অলসতা সৃষ্টি হয়, তাতে সঠিকভাবে ইবাদত করতে ব্যাঘাত ঘটে। তবে সেহেরীর সময় সংগতি থাকলে পুষ্ঠিকর ও মিষ্টি জাতীয় থাবার খেতে পারলে সারাদিনে বিভিন্ন কাজে অলসতা ও কান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের সংগতি নেই, রমজান মাসে তাদের জন্য পুষ্ঠিকর খাবার ব্যবস্থা ও সহজলভ্য করা অবস্থাপন্ন মুসলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয়। তাই নিজেরা বেশী বেশী খাবার না খেয়ে বরং সংযমী হয়ে, সংগতিহীন মুসলিম ভাই-বোনদের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত। এটাও আত্মসংযম ও আত্মত্যাগের এবং ভ্রাতৃত্ববন্ধন রক্ষার সুন্দর উদাহরণ এবং আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনে উত্তম পন্থায় সংগ্রাম। এবছর একাজটি আরো বেশী বেশী করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ভাই-বোনদেও অনেকেই কাজ করার সুযোগ পাবেন না তাই পূর্বেও তুলনায় এবার তাদেও জন্য সাহায্যেও হাত আরও বেশী প্রশস্ত করতে হবে।  তদুপরি মা-বোন ও স্ত্রীদের বিভিন্ন স্বাদের অতিরিক্ত পরিমানে খাবার তৈরীতে উদ্বুদ্ধ না করে বরং তাদেরকে রাএে ইবাদত করার সুযোগ সৃষ্টি করে অনুপ্রাণিত করা উত্তম কাজ। এক্ষেএে নিজেদের সাধারণ অভ্যাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার নামই হচ্ছে আসল সংযম। বর্তমানে মুসলিম জাহানের একটা বড় পরাজয় হচ্ছে, রমজান মাসকে আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের, সম্পূর্ণরূপে আত্মসর্ম্পণের এবং আত্মসংযমের মাস ব্যতিরেকে তারা পরিনত করেছেন বিভিন্ন প্রকারের পুষ্ঠিকর খাবার খাওয়ার, গল্প-গোজবের এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের অর্থ উপার্জনের উৎসব। আল্লাহ-সচেতন মুসলিমদের উচিত এব্যাপারে প্রথমে নিজ পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধ-বান্ধবদের সাথে আলোচনা করে, এধরনের আচরণ পরিত্যাগ করায় অনুপ্রাণিত করা। (৪) অযথা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করার যে অভ্যাস আমাদের রয়েছে তা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা। এর পরির্বতে আল-কুর’আনের শ্বাশত মধুরবাণী শ্রবণ ও পাঠ করা এবং তস্বিহ [সোব্্হানাল্লাহ], তাহ্্মীদ [আল-হামদুলিল্লাহ], তাক্বির [আল্লাহু আক্বর] পাঠ করা উত্তম। যেমন “ সোব্্হানাল্লাহে ওয়াল হামদুলিল্লাহে ওয়া’লা‘ ইলাহা ইলল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কু’ওয়াতা ইল্লাবিল্লাহে অ্যালিয়্যেল আজিম আল্লাহুমা মাগ্ফেরলি”। বাংলা অর্থ,“আল্লাহর পবিত্র ঘোষনা করি এবং সকল প্রশংসার তারই জন্য নিবেদিত। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নাই, আল্লাহ সব চেয়ে বড়। মহান আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি সামর্থ নাই, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর”। তদুপরি অতিরিক্ত ইবাদত তারাবীহর নামায পড়ার জন্য জা’মাতে শরীক হওয়া, নিজের জন্য, মা-বাবা, সন্তান-সন্তুতি, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, মুসলিম উম্মত এবং সমগ্র মানব জাতির কল্যাণে দোয়া করা অত্যন্ত পছন্দনীয় প্রশংসনীয় কাজ। আল্লাহ তা’আলার হাবীব, মানব জাতির জন্য প্রেরিত রহমত, রাসূলের (সা.) উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ করে রমজান মাসের গুরুত্ব ও মহত্ব নিয়ে এবং মৃত্যুর পরে নিজের কৃতকর্মের জবাবদিহিতার আশঙ্কায় চিন্তা-ভাবনা করা অত্যন্ত ভাল কাজ। আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ ও সান্নিধ্য লাভার্থে যত ধরনের পন্থা বা ব্যবস্থা আছে তার সদ্ব্যবহার করার জন্যই রমজান মাস এবং এই মাসে আল-কুর’আন নাযিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা একথাই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। (৫) মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় করা ও সুসম্পর্ক সৃষ্টির প্রয়োজনে একএে ইফতার করার সুযোগ এবছর থাকবে না, তাই যথা সম্ভব বেশী বেশী দান খয়রাত করা এবং রোযার শেষে ঈদ উদ্্যাপনের র্পূবে সাদাকাতুল ফিতরা আদায় করা উচিত। তবে পরিবারের প্রতিটা সদস্যের জন্য র্নিধারিত পরিমানে যাকাতুল ফিতরা আদায় করা আবশ্যকীয় কর্তব্য। যাতে মুসলিম সমাজের ধনী-গরীবদের মধ্যে রমজানের পবিত্রতায় সৃষ্টি হয় সৌহার্দর্পূণ সর্ম্পক। এক্ষেএে রয়েছে আর্থিকভাবে আত্মত্যাগের ও আত্মসংযমের সদিচ্ছা। তাই সর্বোতভাবে আত্মসর্ম্পণ ব্যতিরেকে উল্লিখিত কাজগুলো সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। প্রসংগত উল্লেখ্য যে, রমজান মাসে রোযা পালনের সময় উল্লিখিত মহৎ কাজগুলো করার পিছনে আরেকটা গুরুত্বর্পূণ উদ্দেশ্য রয়েছে যে, এই অভ্যাস যাতে সারা  বৎসর মুসলিমদের জীবন-যাপনে বিদ্যমান থাকে। (৬) ইফতারের সময় হলে অবিলম্বে রোযা ভাঙ্গা উচিত। এব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যতদিন লোকেরা সূর্য অস্ত যাওয়ার পর অনতিবিলম্বে ইফতার করবে ততদিন পর্যন্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হরে না।”{সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ২, নম্বর ১৮১৮}। রোযা ভাঙ্গার জন্য খেজুর হচ্ছে উত্তম যদি খেজুর সহজলভ্য হয়। রাসূল (সা.) বেজোড় খেজুর দিয়ে ইফতার করেছেন। ইফতার সম্পর্কে হাদিস: The Messenger of Allah (SA) used to break his fast with fresh dates before praying [i.e. Maghreb]. If there were no fresh dates, he would break fast with dry dates. If there were no dry dates, he would take some sips of water” {At-Tabarani}. পবিত্র রমজানের অন্যতম উপহার হচ্ছে লাইলাতুল কদরের রাত। মানব সন্তান হিসেবে আমরা সকলেই সারা বছর বিভিন্ন পাপকর্মে জড়িত থাকি। অন্য সম্প্রদায়ের সকলেই পাপকর্মে জড়িত থাকে। তবে মুসলিম উম্মাহর মত তারা সৌভাগ্যশীল নয়। কারণ প্রতিবছর মুসলিম উম্মাহ পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য পায় লাইলাতুল কদরের রাত। এই রাতের বদান্যতা থেকে লাভবান হতে অবশ্যই মানসিকভাবে প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। যার জন্য দরকার হয় প্রবৃত্তির পছন্দনীয় আরাম-আয়েশ ত্যাগ করার জন্য দৃঢ়চিত্ত ও সংগ্রাম করার প্রত্যয়। শেষ দশরাতে বাড়তি ইবাদত কওে আত্মশুদ্ধির রাস্তা সুগম করা। এই রাতের তাৎপর্য সম্পর্কে র্সঙক্ষেপে আলোচনা করা হল। 

শেষ দশদিনে ইবাদত:  রমজানের শেষ দশদিনের যেকোন রাতেই লাইলাতুল কদর হতে পারে তবে বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এপ্রসংগে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশদিনে খোঁজ কর। লাইলাতুল কদর এসব রাএিতে আছে। যখন [রমজানের] ৯, ৭ কিংবা ৫ রাত বাকী থেকে যায় (অর্থাৎ ২১, ২৩  ও ২৫ তারিখে)। রাসূল (সা.) আরও বলেছেন. তা [লাইলাতুল কদর] শেষ দশদিনে আছে। যখন নয় রাত অতীত হয়ে যায় কিংবা সাত রাত বাকী থাকে (অর্থাৎ ২৯ কিংবা ২৭ তারিখে)। {সহীহ আল-বোখারী, খনন্ড ২, ১৮৮৭ এবং ১৮৮০}। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশদিনে ইতেকাফে বসতেন, এবং বলতেন তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশ দিনে তালাশ কর।{সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ২, ১৮৭৭}। কাজেই লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্য থেকে যাতে বঞ্চিত হতে না হয, তার জন্য উত্তম কাজ হবে শেষ দশদিনের প্রতিরাতেই নফল ইবাদত করা। কারণ শেষ দশদিনে রাসূল (সা.) ইবাদতের প্রতি বেশি সচেষ্ট হতেন। ইতেকাফ  করতেন, রাতভর ইবাদতে কাটাতেন। এসম্পর্কে আয়েশা  (রা.) বলেছেন, ‘ রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন। রমজানের শেষ দশক শুরু হওয়া মাএই রাসুল (সা.) রাতভর বিনিদ্র থাকতেন এবং নিজ পরিবার-পরিজনকে নিদ্রা হতে জাগ্রত করতেন। আর তিনি নিজেও ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে তৈয়ারে হয়ে যেতেন।’{সহীহ মুসলিম ২৬৫১, ২৬৫৬}। অতএব উম্মতের জন্যও এইভাবে ইবাদত করার তাগিদ রয়েছে, কাজেই পূণ্যবানের কাজ এবং আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জনে সুব্যবস্থা।  লাইলাতুল কদরে দো‘আর সম্পর্কে আয়েশা (রা.) বলেন, “ ও আল্লাহর রাসূল (সা.)! যদি আমি এই রাএি পাই তাহলে আমি কিভাবে দো’আ করবো, তিনি (সা.) বললেন, বল “ আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুও তুহেব্Ÿুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” [ হে আল্লাহ!  বস্তুত তুমি ক্ষমাকারী, ক্ষমা করতে ভালোবাস, আমাকে ক্ষমা কর।”{আহমদ ৬:১৮২, ইবনে কাসীর, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ৫৪৮}। এটা অনস্বীকার্য যে, সবার ক্ষেএে এরকমভাবে  ইবাদত করা হয়ত সহজ হবে না তবে সাধ্যানুযায়ী  যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা উচিত তাতে ইবাদত করার তাওফিক ইনশা আল্লাহ পাওয়া যাবে।  

সদ্্কাতুল ফিতর: সদ্্কাতুল ফিতর আদায়ে  ঈদের নামাযে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত নয়। কারণ মুসলিম উম্মতের অভাবীরা সদ্কাতুল ফিতরের বস্তু বা টাকা ঈদ উদযাপনে ব্যবহার করে থাকেন। এজন্যই ঈদের পূর্বেই  আদায় করা উত্তম। ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) লোকদের নামাযে গমনের পূর্বেই সদ্্কাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। {সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ২, ১৪১২}। সর্বশেষে গুরুত্বর্পূণ বিষয় স্মতর্ব্য যে, মুসলিম উম্মত আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসায় প্রবৃত্তির অন্যতম চাহিদা খাদ্য, পানীয়, অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হওয়া এবং যৌনতা পরিহার করে রোযা পালন করেন, এর জন্যই দয়াময় আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার, যার পরিমান ও গুণগত মান সম্পর্কে কারও কোন ধারণা নাই। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কুদ্্সী হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, রোযা ছাড়া বনী আদমের প্রতিটা কাজই তার নিজের জন্য। (সব কাজেরই পুরস্কার তাকে দেয়া হবে) তবে রোযা আমার জন্য নির্দিষ্ট। আমি নিজে ইচ্ছামত (যতটা চাইব) এর পুরস্কার প্রদান করব।{সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ২, ১৭৬৯}।  প্রসংগত আরো উল্লেখ্য ঈদের পর শাওযাল মাসে ছয়দিন নফল রোযা করার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে কারণ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়দিন রোযা রাখা হচ্ছে সারা বছর রোযা রাখার ন্যায়।’{সহীহ মুসলিম, ২৬২৭}। রমজানের ৩০ রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা মিলে হয় ৩৬ রোযা। প্রতি রোযার জন্য কমপক্ষে দশগুণ সওয়াব দেওয়া হবে, অর্থাৎ ৩৬ দিনের জন্য ৩৬০ দিনের সওয়াব পাওয়া যাবে। চাঁেদর বছর হয় ৩৬০ দিনে। সওয়াবের পরিমান সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দার প্রত্যেক আমল দশগুণ থেকে সাতশতগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।’{সহীহ মুসলিম, ২৫৭৬}। সবার জন্য রইলো রমজান মোবারক!।  আসুন পবিত্র রমজানকে আমরা স্বাগতম জানাতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রোযা পালনে আল্লাহ তা’আলা এবং রাসূলের (সা.) আদেশ যতটুকু সম্ভব মেনে চলার দৃঢ় সংকল্প করি এবং সংকল্পে প্রতিষ্ঠিত থাকায় আল্লাহ তা’আলার সাহায্য কামনা করি। হে আমাদের প্রতিপালক! আগত রমজানে তোমার নিদের্শিত সঠিক পদ্ধতিতে রোযা পালন করে তোমার সান্নিধ্যলাভে আমরা যেন সফল হতে পারি তেমন তৌফিক আমাদেরকে দাও। আমাদের ভুল-ত্রæটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে আমাদের রোযা এবং তওবাকে কবুল করে আমাদেরকে ক্ষমা করিও। আমিন

শেয়ার করুন