২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:৩৭:৬ পূর্বাহ্ন


প্রয়োজনে সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের উদ্যোগে সংলাপ!
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১১-২০২২
প্রয়োজনে সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের উদ্যোগে সংলাপ!


পৃথিবীজুড়ে ঘনায়মান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যখন দুর্ভিক্ষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, সেই সময়ে বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক ধারা পরস্পরের বিরুদ্ধে রাজপথে সেমি ফাইনাল, ফাইনাল খেলার হুমকি দিচ্ছে। দেশ পরিচালনার মৌলিক বিষয়গুলিতে নিজ নিজ দল ফ্রন্টের পরিকল্পনা জনগণের কাছে তুলে না ধরে পরস্পরের প্রতি অশালীন ভাষায় বিষোদগার করছে। সভা-সমিতিতে উচ্চারিত কথা বার্তায় মনে হচ্ছে দুঃসময়ে দেশ আবার সংঘাত অরাজকতার দিকে এগিয়ে চলেছে। 


উপলক্ষ ২০২৩ শেষ বা ২০২৪ শুরুতে জাতীয় নির্বাচন। শাসক দল ক্ষমতা ধরে রাখায় মরিয়া আর বিরোধীদল যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া। শাসক দল ২০০৯ থেকে তিন টার্মে ক্রমাগত ক্ষমতায়। প্রধান বিরোধীদল ২০০৬ থেকে ক্ষমতার বাইরে। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, দুর্নীতির অভিযোগ আছে। আবার প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারপার্সন আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে প্রশাসনিক আদেশে গৃহবন্দি।


ভাইস চেয়ারম্যান দ্বন্দ্ব প্রাপ্ত হয়ে ফেরারি। নিদর্শিত মেয়াদ শেষ হবার পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সরকার চায় কনস্টিটিউশন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন মানে না। তাদের মতে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন কমিশন কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। 

ব্যাবধান বা সংকটের সূচনা এখানেই। ইদানীং আবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মাঠ প্রশাসন যন্ত্রের বিভেদ দৃশ্যমান। এমতাবস্থায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর বাংলাদেশের দূতাবাস, বিদেশি সংস্থাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি নাক গলাচ্ছে। পরিস্থিতি কারো জন্যই সুখকর নয়।

দেশজুড়ে কিন্তু তীব্র জ্বালানি সংকট, বিদ্যুৎ সংকট সর্বগ্রাসী সংকটের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, আমলা তোষণকারী সরকারের ভ্রান্তনীতি আর সীমাহীন দুর্নীতির মকরণেই এই সংকট তখন সরকার রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই তুলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। অথচ জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রফতানি আয় ক্রমশ নিম্নগামী।


বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। কারণে-অকারণে অনেক মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিছু শেষ হয়েছে, কিছু কবে শেষ হবে অনিশ্চিত। ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। এমতাবস্থায়ও কিন্তু সরকার বা বিরোধীদলের বোধোদয় হচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হলে সকার বা বিরোধীদল কেউ লাভবান হবে না। 

বাংলাদেশের কনস্টিটিউশন অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মিল্ক জনগণ। প্রতি পাঁচ বছর পর পর জনগণের ভোট নির্বাচন হবে। নির্বাচিত সরকার নির্দষ্ট মেয়াদে দেশের শাসনব্যবস্থা জনগণের পক্ষে পরিচালনার পর স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদল হবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে সেই পরিবেশ নেই। সকল প্রতিষ্ঠান রাজনীতিকরণ করা হয়েছে।


সৎ মানুষের শাসনের পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষত আমলা নির্ভর প্রশাসন যন্ত্র যার বিরুদ্ধে জাতির জনক চিরদিন সরগম করেছেন তারাই এখন সিন্দাবাদের বুড়োর মতো চেপে বসেছে সরকারের ঘাড়ে। কেউ স্বীকার করুক আর নাই বা করুক, ২০১৪ আর ২০১৮-এর মতো বিতর্কিত নির্বাচন জনগণ চায় না। জনগণ যেমন দুর্নীতির সূতিকাগার হাওয়া ভবনের দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারেনি। তেমনি বর্তমান সরকার-ঘনিষ্ঠ লুটেরা মহলের দুর্নীতি বিষয়েও বিশেষভাবে অবহিত। 



২০২২ শেষ হতে চলেছে। মনে হয় না অর্থনীতি ২০২৩ বর্তমান সংকট থেকে বেরোতে পারবে। আশা করি, দেশপ্রেমিক দেশি প্রবাসী মানুষগুলো উভয়পক্ষকে দেশের স্বার্থে ন্যূনতম কর্মচ্যুতির ভিত্তিতে কোনো ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্রিয় হবে। দেশে যে সংকট ও রাজনৈতিক দলের দূরত্ব তাতে এক টেবিলে বসে সমস্যা সমাধান কল্পনাও করা যায় না। এমনি মুহূর্তে প্রয়োজনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সংলাপ হতে পারে। রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিতে পারেন। রাজপথে খেলা হলে পক্ষ-প্রতিপক্ষের মাঝে রেফারি থাকতে হয়।


ইদানীং রেফারির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ডিআরএস পদ্ধতিও চালু আছে। বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় না ধরনের নেতিবাচক সংবাদ আসছে। জনসভায় লোকসমাগম কিন্তু কোনো পক্ষের জনপ্রিয়তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়।

আশা করি, প্রার্থনা করি দেশের জনগণের স্বার্থে সরকার আর বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির বোধোদয় হবে। যারা খেলতে চাইছেন তারা নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখলেই সব পরিষ্কার হবে। 

শেয়ার করুন