২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:০৫:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


প্রসঙ্গ শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা
আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সতর্কতা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৪-২০২২
আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সতর্কতা শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ : ছবি বিবিসি


 যারা বলছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট দেখে বাংলাদেশ শিক্ষা নেয়া উচিত- তারা অনেকেই দুটো দেশকে একই মানদ-ে তুলনা করে সঠিক কাজটি করছেন না। নানা কারণেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা থেকে ভিন্ন। দুর্নীতি, কিছু মানুষের দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থপাচার এগুলোতে সদৃশ আছে। কিন্তু বহুমুখী রফতানি আয়, বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স, বিদেশি মুদ্রার বিপুল রিজার্ভ, অপেক্ষাকৃত উপযোগী মেগা প্রকল্প বাংলাদেশকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ থেকে আলাদা করে রেখেছে। তবে শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আতঙ্কিত না হলেও সতর্ক হবার প্রয়োজন রয়েছে অন্তত বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প গ্রহণ বিষয়ে এবং দুর্নীতি নির্মূলে। 

সার্ক দেশ শ্রীলঙ্কা এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে খাদ্যসংকট, জ্বালানি সংকট জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিদেশি বিশেষত চীনের ঋণের অর্থে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গড়ে তুলে এখন দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। সুন্দর, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত ভালো মানুষদের দেশটি এখন দুর্ভিক্ষের দুয়ার প্রান্তে। রাজাপাকসে ভাইদের কুশাসনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছে। এমনকি ক্রিকেটের মতারকারাও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। 

বাংলাদেশে কিছু বিজ্ঞ-অজ্ঞ মানুষ শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশকে শিক্ষা নিতে বলছে। নানা উন্নয়ন সূচকেই শ্রীলঙ্কা কিছু দিন আগেও দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম সেরা দেশ ছিল। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময় থেকে সূচিত অর্থনৈতিক সংকট এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সরকারের হাতে জ্বালানি ক্রয়ের অর্থ নেই। দেশজুড়ে পাওয়ার লোডশেডিং।  প্রতিবেশী দেশ ভারত, বাংলাদেশ যথা সম্ভব সাহায্য করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দেশটিকে ঋণ দিতে সম্মত নয়। বন্ধু দেশ শ্রীলঙ্কা যথাযথ সংস্কার মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে সংকট থেকে বের হয়ে আসুক- মনেপ্রাণে কামনা করি।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বাংলাদেশের সম্পদ মেধাবী, বিচক্ষণ কৃষক সমাজ। সামান্য সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর বাম্পার খাদ্যশস্য উৎপাদন করছে। সবজি, ফলমূল, মাছ, মাংসে বাংলাদেশ অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। করোনা সময়েও গার্মেন্টস, টেক্সটাইলস, ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্য, সিরামিকস এবং অনেক অপ্রচলিত দ্রব্যাদি যুক্ত হয়ে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। বিদেশে কর্মরত কর্মজীবীরাও বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। হয়তো দুর্নীতি বা অদূরদৃষ্টিমূলক কর্মকা-ে বায় বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু দেশের সবাইকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

সর্বোপরি, মেধাবী তরুণ সমাজ নীরবে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। যদি সরকার আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে মেধাবী দেশ প্রেমিকদের উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের শঙ্কিত হবার কারণ দেখি না। আমরা মনে করি, মেগা প্রকল্পসমূহ নির্বাচনে আপাতত বাংলাদেশ সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে। তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের ঋণ ফাঁদে ধরা না দিয়ে বাংলাদেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। ইউক্রেন সংকটেও নিরপেক্ষ থাকা প্রশংসনীয়।

পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল, কক্সবাজারের  মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ জ্বালানি হাবসহ বিবিধ প্রকল্প, রূপপুর, রামপাল,পায়রা উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তবে উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে এখনই পাতাল রেল জাতীয় প্রকল্প এখনই গ্রহণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বিশেষত দ্বিপাক্ষিক বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প গ্রহণে অনেক বিচক্ষণতার প্রয়োজন আছে। দেশের প্রাথমিক জ্বালানি অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং জনবলের প্রশিক্ষণে, কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নে আরো বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে এবং সরকারি কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করে আরবান রুরাল রিভার্স মাইগ্রেশন করতে পারলে যান জট অভিশাপ মুক্ত হবে রাজধানী। 

সর্বোপরি দুর্নীতির মূল উৎপাটন, রাজনীতি রাজনীতিকদের হাতে সংরক্ষণ করা, বাজারব্যবস্থা থেকে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত রাখলে, বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে পারবে। বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ তরুণ সমাজ। এ সমাজটা এখন খুবই মেধাবী। এরা দেশের জন্য অনেক বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। যদি এদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনায় পরিচালিত করে পথ দেখানো যায়। সর্বোপরি বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে বলে আমি মনে করিনা। বরং সতর্কতা প্রয়োজন। এটা বাস্তব সত্য শঙ্কার কিছু নেই।


শেয়ার করুন