২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:৫০:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


প্রসঙ্গ ২০২৩ এর জাতীয় নির্বাচন
নির্বাচনী জট খুলতে বিদেশে ধরনা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৪-২০২২
নির্বাচনী জট খুলতে বিদেশে ধরনা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মোমেন মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক : ফাইল ছবি


বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সেটা মূলত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। কীভাবে হবে ওই নির্বাচন, এটা নিয়ে সরকাররে থাকা আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের এক মত, এর বাইরে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের অন্য মত। 

এ দুই মতের সমন্বয় ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হিসেবে মেনে নিবে না বন্ধুপ্রতিম বিদেশি রাষ্ট্রসমূহ। সমস্যার মূল এখানেই। জাতীয় স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে। ঐক্যমতের নির্বাচন অনুষ্ঠান বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও রয়েছে কঠোর বার্তা। কিন্তু দুই দল দুই মেরুতে অবস্থান। বিএনপি দীর্ঘদিন থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না। এটাই সমস্যার বড় কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে গণতান্ত্রিক সম্মেলন, সেখানে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না। কারণ তাদের ভাষ্য বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের জোরালো তাগিদ রয়েছে। এ জন্যই সব দলের অংশগ্রহণে চাই নির্বাচন। সেটা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো অবশ্যই। 

কিন্তু কীভাবে সব দলের অংশগ্রহণে হবে নির্বাচন। বিএনপি তো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ফরমুলায় নির্বাচনেই যাবে না, তাহলে? ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতানুগতিক ধারায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিএনপি যথারীতি আগের স্থানেই। তারা বলছে, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নিবেই না। গুমোট আবহাওয়া বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী জটটা এখানেই। এ জট কীভাবে খুলবে। কে ছাড় দেবে? বিএনপি, না আওয়ামী লীগ। বিএনপি বলে আসছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মানেই সরকার তাদের প্রভাব বিস্তার করে, নির্বাচন তাদের মত করে অনুষ্ঠান করছে। বিরোধীদের চরমভাবে হয়রানি করে টেকনিক্যালি নির্বাচন থেকে দূরে রাখছে। যার প্রমাণ ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচন। আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপির জনপ্রিয়তাই নেই। মানুষ তাদেরকে ভোটই দেয় না। তাই তারা নির্বাচনকে ভয় পায়, দূরে থাকে। নিরুপায় হয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। 

এ ধরনের বিপরীত মেরুর অবস্থান কীভাবে এক হবে? বিএনপির কথার যৌক্তিকতা বিভিন্ন সময়ে বিদেশি দেশসমূহও বলে আসছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ওগুলো থোড়াই কেয়ার করছে। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে সরকার গুম-খুন করছে বলেও বিএনপির অভিযোগ- বিদেশিরাও এখন লুফে নিয়েছে এবং তাদের কাছে যে তথ্য প্রমাণ রয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেটা তারা দেখাচ্ছেও। বিষয়টা দিন দিন এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে, যেখানে এ দুই মতের ঐক্য হওয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়েই একটা অস্থিরতা ভাব রাজনীতিতে। 

এরই মধ্যে বাংলাদেশে মানবাধিকার তথা গুম-খুন প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র‌্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্যাংসনের বিষয়টা নতুনমাত্রা যোগ করেছে। এটা দেশের জন্য লজ্জার বিষয়ের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপরও একটা ভিন্নমাত্রার প্রেসার যোগ করেছে। স্যাঙ্কশন থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্ষমতাসীন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করলেও ভালো কোনো আশ্বাস পাচ্ছে না। উপরন্তু এ প্রসঙ্গ তুলতে গেলে সেখানে সঠিক গণতন্ত্র  অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরামর্শ পাচ্ছে। এটাও একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অবশ্য দেশের রাজনীতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বরাবরই দোষারোপ করছে বিএনপিকে। অভিযোগ, বিএনপি দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের টেনে আনার পাঁয়তারা করছে। বিভিন্ন সময়ে তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে, নালিশ জানাচ্ছে। বিএনপি বলছে, তাদের নেতাকর্মীদের ওপর গত ২০১৪ সন থেকে অন্তত ৩৫ লাখ মামলা দিয়ে জর্জরিত করে রাখছে সরকার। সেটাই বিভিন্নভাবে প্রচার করছে। অবশ্য বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রেখে রিপোর্ট দিচ্ছে। মার্কিন স্যাঙ্কশন সে রিপোর্টের ভিত্তিতেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো ‘বিএনপি’ বাংলাদেশ নালিশ পার্টি নামেই অ্যাখ্যা দিয়েছেন। কথায় কথায় দেশের বিরুদ্ধে যেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নালিশ করা বিএনপির অভ্যাস বলে উপহাস করে ওই তকমা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয় নালিশ জানানোর জন্য। বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক সংঘ তাদের কমম্পিন শোনে। পাশাপাশি অন্য নেতারাও বিএনপির বিরুদ্ধে অমন অভিযোগ তুলে আসছেন। 

এছাড়াও দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের কথাবার্তা নিয়েও অনেক কথা উঠেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো একবার বলেই ফেলেছেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি দূতাবাসগুলো ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ না মেনে চলতে পারলে দেশে ফিরে যাক। এগুলোও বিদেশিদের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। 

তবে সদ্য এক ঘটনায় আওয়ামী লীগের যে অভিযোগ বিএনপিকে নিয়ে- সেটা এখন স্পষ্টভাবে নিজেদের ওপর চলে এসেছে। কারণ নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে যে বিদেশি চাপ, সেটা সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই বলে ফেলে। তারা মার্কিনিদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসে না। তাদেরকে নির্বাচনে আনতে সহায়তা করুন। 

ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়ার যে অভিযোগ- সেটা এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজের কাঁধেই তুলেছে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মোমেন মার্কিন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন, তারা যেন বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ নেয়, সে ব্যাবস্থা করে দেয়ার। 

দেশে এখন এটা নিয়ে তোলপাড়। বিএনপি নেতারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করছে, যে বিএনপি নয় ক্ষমতা আকড়ে বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগই বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। মির্জা ফখরুল বারবারই উচ্চারণ করছেন এ কথা। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই কথা যে মার্কিনিদের বলেছেন, সেটা আবার মিডিয়াতে এসে বলেও দিয়েছেন। ফলে এটা আর এড়াতে পারছেন না তারা। এর জবাবে তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ওই বক্তব্য, আওয়ামী লীগের নয়, সরকারেরও নয়। ওটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত।’ কিন্তু এমন কথা মানুষ বিশ্বাস করছে না। কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন এবং সেখানে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকেই বলেছেন। ফলে বিষয়টা কোনোভাবে আর ব্যক্তিগত পর্যায়ের হয় না। 

এটাও ঠিক, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের প্রভাব নতুন নয়। ক্ষমতার বাইরে যে যখন থাকেন তারাই বিদেশিদের কাছে ধর্না দেয়ার অভ্যাস পুরোনো। ক্ষমতায় থেকেও ধরনা দেয়া এটা সম্ভবত নতুন। শুধুই যে বিএনপি আওয়ামী লীগ এ কম্মে। সেটাও না। এর বাইরেও পরের সারির দলগুলোরও মধ্যে জামায়াতের আগে এমন ধরনা দেয়ার অভ্যাস আছে। 

ফলে এসব ধরনা একসময় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের প্রভাব বিস্তার করতে দেয়ার অর্থ, তাদেরকেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া। যা অধিকাংশ সময়েই জনগণের স্বার্থের বাইরেই যায়। ফলে সাধারণ মানুষ এ জাতীয় ধরনা জাতীয় কর্মকে লজ্জার চোখেই দেখে!  



শেয়ার করুন