২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:৪৬:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


একতরফা নির্বাচন থেকে পিছু হটেছে সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
একতরফা নির্বাচন থেকে পিছু হটেছে সরকার


একতরফা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছে সরকার। একতরফা নির্বাচন করতে গেলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশ মহা ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। আওয়ামী লীগের নেত্বাধীন সরকার আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যেনো কোনোভাবেই অংশ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিভিন্ন ম্যাকানিজম চালায়। তারা বিএনপিকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসাতে চেয়েছিল। একটি সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন সরকারের একটি শীর্ষ মহল গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত সফরের সময় সে দেশের (ভারতের) থিংক ট্যাংকদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করে। সে বৈঠকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের মধ্যে একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে ভারতকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতকে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের দেশ বিরোধী কর্মকান্ড করেছে। অগ্নিসন্ত্রাস করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছে। এছাড়া বলা হয় বিএনপি একটি কট্টর ভারত বিরোধী দল। এসময়ে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় যে বিএনপি’র সাথে এখন জমায়াতের সর্ম্পক নেই বলেই তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য আছে। ভারতীয় থিংক ট্যাংকদের এমন বক্তব্যে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। এসময় আবারো বোঝানো হয় যে বিএনপি ক্ষমতায় এলে একদিকে আওয়ামী লীগের যেমন বিরাট ক্ষতি হবে, তেমনি ভারতকেও এর বড়ো মাসুল দিতে হবে। বিষয়টি এমন চটকদারভাবে তুলে ধরা হয় যে প্রতিবেশী দেশটি আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের কথায় গলে যায়। এসময় বিএনপি’র বিকল্প একটি শক্তিকে বিরোধী দলের আসনে বসাতে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রতিনিধি দলটি থমকে যায়। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রতিনিধি দলটি দেশে এসে প্রতিবেশী দেশটির এমন প্রস্তাবকে বিভিন্ন ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে থাকে। তারা মনে করে, প্রতিবেশী দেশটির দেয়া প্রস্তাবের বিপরীতে বিএনপি’কে নিয়েই নির্বাচনে নিয়ে আনতে পারাই হবে যথেষ্ট বুদ্ধিমানের কাজ। জানা গেছে, তারপর থেকে বিএনপি’কে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিয়ে আসার ব্যাপারে সরকারের তোরজোড় বেড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি’র একটি বড় অংশকে সংসদের আরো বেশি আসন দিয়ে একটি সমঝোতা এক প্রকার চূড়ান্ত হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে গত বছর সেপ্টেম্বর চার দিনের সফরে ভারতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তোড়জোড়ের আরো কারণ..

আগামী জাতীয় সয়সদ নির্বাচনে বিএনপি’কে অংশগ্রহণ করানো ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ ও তোড়জোড়ের আরো অনেক কারণ আছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, বিএনপি’কে নির্বাচনে আনতে আরো কারণ বা চাপ রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর। তার অন্যতম একটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের অব্যাহত চাপ। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন এখন বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এর ভাষা ঠিক এরকম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন সংক্রান্ত ঘটনা প্রবাহের ওপর ইইউ গভীর নজর রাখছে। ইইউ চায় বাংলাদেশে অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন হোক। নির্বাচন কমিশন গঠন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক রাখা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন সেটিকেও আমরা স্বাগত জানাই। ফলে ইইউ’র বার্তা পরিস্কার। এছাড়া মাত্র কয়েকদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে সাফ জানিয়েছে ইইউ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে সংস্থাটি। বিএনপিকে এ বার্তা দিয়ে ইইউ বলেছে, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় তারা। এ কারণে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী জুন-জুলাই মাসে নির্বাচন-পূর্ব পর্যবেক্ষক দল ঢাকা আসবে। 

অন্যদিকে মার্কিনীদের বার্তা যেমন পরিষ্কার তেমনি আরো কঠোর। আর এটা তা জানতে বেশিদূর যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সম্প্রতি, তাতে বলা হয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা, মিডিয়া সেন্সরশিপসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এর প্রতিক্রিয়ায় এই প্রতিবেদনকে ’অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমন প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়ারও সমালোচনা করা হয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পক্ষ থেকে।

এদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মার্কিন নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদেরকে যদি বাংলাদেশ আশ্বস্ত করতে পারে যে, বিশ্বের অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে দুর্নীতির হার কম, তাহলে দেশটি আরও মার্কিন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং এদেশে আরও বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। 

শেষ কথা.. সরকার কি ঝুঁকি নেবে?

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)’র আর মার্কিনীদের এমন বার্তা আসলে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের শুভানুধ্যায়ীরা কেউ ভালোভাবে নেয়নি। বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)’র আর মার্কিনীদের এমন বার্তা সর্বস্তরের মানুষকে শংকায় ফেলে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এতোসব কিছুর পরও কি সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকেই গো ধরে থাকবে? এভাবে দেশকে টেনে নিয়ে গেলে বিশ্বায়নের যুগে যে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে দেশ তা কমবেশি সবাই বোঝেন। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের অনুমোদন পেয়েছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ৩টি মানদণ্ডই পূরণ করেছে। ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্ল্যানারি সভায় এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়। নিসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১-এর বাস্তবায়নের ফসল এটি বলে অনেকে মনে করেন। অনেকেই এই অর্জনকে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রার এক মহান মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। অবশ্য এর জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। 

তাছাড়া ২০২৪ সালের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নেও বাংলাদেশকে ভালো করতে হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে দেশের শান্তি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি’কে ছাড়া একটি নির্বাচন করা হলে এমন অর্জন কোথায় গিয়ে ঠৈকবে? দেশেই বা কি ধরনের পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে শঙ্কা কমবেশি সবারই আছে।  এসব বিবেচনা মাথায় রেখেই সরকার এখন একতরফা নির্বাচনের আয়োজন থেকে পিছু হটেছে। 

ধারণা করা হচ্ছে, একতরফা বিশেষ করে বিএনপি’কে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে আগের ধারণায় নেই। কারণ আওয়ামী লীগ বুঝে ফেলেছে যে তারা বিশ্বায়নের যুগে ততটা বাকা চলতে পারবে না, যতটা আশা করেছে। কারণ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যহারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো ইতিবাচক কার্যকর কিছু করা যায়নি। তার উপরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকদিন আগে আরো একটি নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফেলেছে। যা অনেকে ’মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতন বলেই মনে করেন। এতে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা, মিডিয়া সেন্সরশিপসহ বিভিন্ন বিষয়ে যা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এমন ঘটনায় সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। আর সেজন্যে ২০১৪ বা ২০১৮’র মতো আরেকটি নির্বাচন করে ফেলা সরকারের পক্ষে অনেক ঝুকিপূর্ণ। এসব কারণে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সাথে একান্তে কথা বলে জানা গেছে, যে আওয়ামী লীগ এখন একতরফা নির্বাচনের দিকে নেই।

শেয়ার করুন