২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


ভিসানীতি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারে ভয়
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
ভিসানীতি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারে ভয়


বহির্বিশ্বের অব্যাহত চাপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশ সরকার খানিকটা বেকায়দায়। সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট দিনান্তর। এতো কিছু একই সঙ্গে সামাল দেওয়া বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি দেশের জন্য নিতান্ত রেয়ার ঘটনা। এমন চাপ দীর্ঘদিন থেকে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায়, সেগুলো প্রভাব ফেলতে পারেনি তেমন। একটা একটা করে তিনি এগুলো মোকাবিলা করে গেছেন, সমাধানের চেষ্টা দিয়ে সব কিছুই স্বাভাবিক রেখেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের চাপগুলো একই সঙ্গে ঝড়ের গতিতে উপচে পড়ছে যেন বাংলাদেশের ওপর। ফলে এগুলো সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

একটা ভালো কিছুর আশা নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন নিউইয়র্কে। আর সেই নিউইয়র্কে পৌঁছে একের পর এক চাপের খবরগুলো প্রতিনিয়ত তিনি পাচ্ছেন। অথচ জাতিসংঘের এ সাধারণ অধিবেশনের আগেও সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল অনেকটা। প্রধানমন্ত্রী জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়ে হাসিমুখে ফিরেছিলেন। তার রাজনৈতিক কৌশলে জি-২০-এর সদস্য না হয়ে একজন আমন্ত্রিত অতিথি হয়েও বেশ প্রভাব বিস্তার করেছেন বিশ্বনেত্রীর মতো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সখ্য আগ থেকেই। তিনিই ওই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার সঙ্গে বৈঠক, তাকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথাবার্তা বলা ও সেলফি তোলাসহ নানা কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য সমমনাদের ললাটে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ক্ষমতাসীন দলে খুশির আনন্দ বইয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তাপস, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এ সেলফি ও অন্যান্য কর্মকা-ে আশারবাণী শুনিয়ে সমর্থকদের, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে ফেলেন।   

কিন্তু এসবই এখন মাটি। দুঃসংবাদ ছড়াচ্ছে একের পর এক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশন থেকে দল ও প্রশাসনের মনবল চাঙ্গা করার কিছু খবর বয়ে আনবেন এ প্রত্যাশায় আশায় বুক বেধেছিলেন দীর্ঘ তিনটার্ম ক্ষমতায় থাকা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দল আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকরা। কিন্তু সেখানে একের পর এক বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তাদের সেই পুরোনো প্রত্যাশা শুনিয়ে দেওয়ার পর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের যে খবরটা দেন মার্কিন প্রশাসন, সেটাতেই সব আশা ফিকে হতে শুরু করেছে। শুধু এখানেই থেমে নেই সব, তাৎক্ষণিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বিভিন্নভাবে পর্যালোচনা করছেন দেশের মানুষ। রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ, দক্ষ হাতে প্রশাসন পরিচালনাসহ বহির্বিশ্বের উন্নয়ন সহযোগীদের দীর্ঘ তিন টার্ম যেভাবে তিনি সামাল দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এতে সাধারণ মানুষের সিংহভাগের আস্থা তার ওপর, যে সবকিছুই শেখ হাসিনা ম্যানেজ করতে পারবেন। অতীতেও করে এসেছেন, এখনো তিনি করবেন। কিন্তু এবারের প্রসঙ্গটা কেমন যেন রাজনীতি ও আশা-ভরসার পূর্বাকাশে ঘনকালো মেঘের আড়ালে সূর্যটা আড়ালে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। 

মানুষের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে অবিশ্বাসের দোলাচল। প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্তব্য করেন। 

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, যদি নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করলে তারা সেটাকে স্যাংশন দেবে। এখানে আমারও কথা থাকবে এ বানচাল করার চেষ্টা যেন দেশের বাইরে থেকেও না হয়। দেশের বাইরে থেকে যদিও হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষও তাদের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) স্যাংশন দিয়ে দেবে।’ প্রধানমন্ত্রী যে স্যাংশন বাংলাদেশের জনগণ দেবে বলে পাল্টা ঘোষণা দিলেন, সেটার ব্যাখ্যা অনুমান করা না গেলেও এটা যে একটা পাল্টাপাল্টি বিষয় হয়ে দাঁড়ালো, এটা আর বুঝতে বাকি নেই। স্যাংশন কখনো ব্যক্তিপর্যায় থেকে হয় না। একটি রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত তাদের দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে কাকে ভিসা দেবে, কী দেবে না সে বিষয় নিছক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তেমনি বাংলাদেশের জনগণ এমন স্যাংশন তো আর দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। দিতে পারবেন তাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি বা বাংলাদেশ সরকার বা দেশ পরিচালনায় যারা রয়েছেন তারাই। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের সঙ্গে যেখানকার মার্কেটে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিশাল বাজার। যেখানে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, সে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে জমা পড়ার পর তা দিয়ে অন্যসব জীবনরক্ষার পণ্য আমদানি করে দেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচে, সে দেশের সঙ্গে আমরা লড়াই করে তাদের কী বাংলাদেশ যদি স্যাংশন জাতীয় কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েও দেয়, তাহলে কী দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিকভাবে সচল থাকবে? এমন একটা প্রশ্ন জনমনে ব্যাপক ঘুরপাক খাচ্ছে।  

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে অভয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এসব স্যাংশনে বাংলাদেশের মানুষ ভয় পায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে স্যাংশন দিলো, কাকে দিলো, তাতে কিছু যায় আসে না। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে সে-ই ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের জনগণ এখন ভোটের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তিনি বিষয়টি আরো স্পষ্ট করতে গিয়ে নিজের পরিবার-সন্তান প্রসঙ্গও টেনে আনেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আত্মীয়স্বজন থাকলেও কী করবে। ঠিক আছে, আমার ছেলে তো এখানেই (আমেরিকা) আছে। সে-তো এখানে পড়াশোনাও করেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যও করছে। বিয়ে করেছে। তার মেয়ে আছে। সবই আছে তার। সম্পত্তি, বাড়িঘর সবই তার আছে। যদি বাতিল (ভিসা) করে, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের তো বাংলাদেশ আছে। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বহু নেতাকর্মীর রক্তের বিনিময়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত, কেউ ক্ষমতা হাতে তুলে দেয়নি। 

এদিকে ঢাকাতেও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কার্যকারিতার প্রচ- সমালোচনা করেছেন। ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমার দেশ, আমার গণতন্ত্র। আমার দেশ আমি নির্বাচন করবো। সাতসমুদ্দুর তেরো নদীর ওপার  থেকে, আটলান্টিকের ওপার থেকে তুমি কে, ভিসানীতি দেবে, নিষেধাজ্ঞা দেবে, কারো ভিসানীতি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা আমরা করি না।’ তিনি বলেন, ‘বার্তা দিয়ে দিচ্ছি কারো নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করি না। বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি কারো নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করার জন্য নয়। এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছি। কারো নিষেধাজ্ঞা মানার জন্য নয়।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ ছুড়ে বলেন, আজ যারা নিষেধাজ্ঞার কথা বলেন। ভিসানীতির কথা বলেন, তাদের দেশও ত্রুটিমুক্ত নয়। নিজেদের দেশে মানবাধিকার পদদলিত হচ্ছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকারের পতাকা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। কিছুই তারা করতে পারছে না। আমরা পরোয়া করি বাংলাদেশের জনগণকে। এছাড়া আমরা আর কাউকেই মানি না।’ 

তবে এটা ঠিক, দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ এ স্যাংশনকে মুখে মুখে আমলে না নিলেও মার্কিনিদের উদ্যোগের কুফল কী হতে পারে-এটা দেশের মানুষ অনুমান করতে বাকি রাখেনি। এটাতে ক্ষমতাসীনদের সুরে সুর মিলিয়ে প্রশাসনের কয়জনকে পাশে পাওয়া যাবে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া শুধুই যে মার্কিনিরা তা-ও নয়। দেশে আন্দোলনরত বিএনপিসহ সমমনা দল একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের প্রত্যাশাও অনেকটাই একই। একে একে দুই। এর বিরুদ্ধে লড়াইটা ক্ষমতাসীনদের কেমন হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ার করুন